সৌম্যর ১৬৯ রানেও সিরিজ হারল বাংলাদেশ

সৌম্য সরকারের সেঞ্চুরিতে বোর্ডে বড় পুঁজিই জমিয়েছিল বাংলাদেশ। বোলার ও ফিল্ডিং দুর্বলতার দিনে বাঁহাতি ওপেনারের প্রত্যাবর্তন জয়ে রাঙানো যায়নি। ৭ উইকেটের হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে সফরকারী নাজমুল হোসেন শান্তর দল। হেনরি নিকোলস ও উইল ইয়াংয়ের শতক ছুঁইছুঁই জোড়া ফিফটিতে এক ম্যাচ হাতে রেখে তিন ওয়ানডের সিরিজ জিতে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড।

তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে ২-০তে এগিয়ে থাকল কিউইবাহিনী। ২৩ ডিসেম্বর নেপিয়ারে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেটি হবে। তারপর তিন টি-টুয়েন্টির সিরিজে লড়বে দুদল।

নেলসনে বুধবার টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা টিম টাইগার্স ৪৯.৫ ওভারে ২৯১ রানে অলআউট হয়। জবাবে কিউইরা ২২ বল হাতে রেখে ৩ উইকেট খুইয়ে অনায়াস জয় নিশ্চিত করে।

২৯২ রানের বড় লক্ষ্য তাড়ায় ৭৬ রানে স্বাগতিকরা প্রথম উইকেট হারায়। ৩৩ বলে ৭ চার ও এক ছক্কায় ৪৫ রান করা রাচীন খেলেছিলেন পুল শট। হাসান মাহমুদের বলে বল সীমানা ছাড়া হওয়ার আগে ডিপ মিডউইকেটে লাফিয়ে শরীরের ভারসাম্য ঠিক রেখে তালুবন্দি করেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন।

ব্যক্তিগত ৭৭ রানে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গিয়েছিলেন উইল ইয়াং। নিউজিল্যান্ড ইনিংসে ২৭তম ওভারের প্রথম বলে ইয়াংয়ের শটে এক্সট্রা কভারে শূন্যে ঝাঁপিয়ে বল ধরেছিলেন তাওহীদ হৃদয়। মাটিতে পড়ার সময় হাত থেকে সেটি ছুটে যায়।

এরপর মেহেদী হাসান মিরাজের বলে কট বিহাইন্ডের আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দিলে রিভিউ নেন ইয়াং। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বল ব্যাটে স্পর্শ করেনি। ৮৪ রানের সময়ও ক্রিজে থেকে যান ব্ল্যাক ক্যাপস ব্যাটার। সেঞ্চুরি অবশ্য হাঁকাতে পারেননি কিউই ওপেনার। হাসান মাহমুদের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ৯৪ বলে ৮ চার ও ২ ছক্কায় ৮৯ রানে সাজঘরে ফিরে যান।

ইয়াংয়ের মতো সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়ে ছুঁতে পারেননি হেনরি নিকোলস। শরিফুলের বলে পুল খেলতে গিয়ে রিশাদের হাতে ধরা পড়েন। খেলে যান ৯৯ বলে ৮ চার ও এক ছক্কায় খেলেন ৯৫ রানের ইনিংস। ততক্ষণে কিউইদের জয়ের রাস্তা হয়ে যায় পরিষ্কার।

দলকে জয়ের বন্দরে সহজেই নিয়ে যান অধিনায়ক টম ল্যাথাম ও টম ব্লান্ডেল। চতুর্থ উইকেটে তারা অবিচ্ছিন্ন থেকে ৩৬ রান যোগ করেন। ল্যাথাম ৩৪ ও ব্লান্ডেল ২৪ রানে অপরাজিত থাকেন।

বাংলাদেশের পক্ষে ৭ ওভারে ৫৭ রান খরচায় ২ উইকেট নেন হাসান মাহমুদ। একটি উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম।

এর আগে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে কিউই বোলিং আক্রমণ চুরমার করেন সৌম্য সরকার। ১৫১ বলে ২২ চার ও ২ ছয়ে খেলেন ১৬৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংস। কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারকে ছাড়িয়ে এখন এশিয়ান ব্যাটার হিসেবে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ইনিংসটির মালিক সৌম্য।

২০০৯ সালের মার্চে ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ১৬৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন শচীন। সেই রেকর্ড ১৪ বছর পর ভেঙে দিলেন টাইগার ওপেনার।

সবমিলিয়ে অবশ্য ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের মাঠে সর্বাধিক রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন মার্টিন গাপটিল। ২০১৫ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৩৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন। এটি ওয়ানডে ইতিহাসে কোনো ব্যাটারের দ্বিতীয় সর্বাধিক রানের ইনিংসও।

আগের ম্যাচে শূন্য রানে আউট হয়ে বাংলাদেশ দলে সুযোগ পাওয়াকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছিলেন সৌম্য। এক ম্যাচ পর দেড়শ পেরোনো ইনিংস খেলে বার্তা দিলেন ফুরিয়ে যাননি। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১১৬ বলে ১৩ বাউন্ডারিতে সেঞ্চুরি ছুঁয়ে ফেলেন টাইগার ওপেনার। শেষের ৩৮ বলে যোগ করেন আরও ৬৯ রান।

সৌম্য আগের সেঞ্চুরিটি করেছিলেন ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এরপর জাতীয় দলে আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিলেন। বড় ইনিংস না পাওয়ায় তাকে ঘিরে প্রত্যাশাও কমে আসে। ঘরোয়া লিগেও রান পাচ্ছিলেন না। চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে দ্বিতীয় মেয়াদে কোচ হয়ে ফেরার পর ফের ডাক পান দলে।

আগে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল হতাশার। দলের রান ফিফটি ছোঁয়ার আগেই সাজঘরে ফিরেন যান এনামুল হক বিজয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাস। কেউই ছুঁতে পারেননি দুঅঙ্ক। একপ্রান্ত থেকে লড়ে যান শুধু সৌম্য।

তাওহীদ হৃদয় রানআউট হয়ে ফিরলে বিপদ আরও বাড়ে। ৮০ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে জুটি জমে ওঠে সৌম্যর। মুশফিক ৪৫ করে আউট হলে ৯১ রানের পঞ্চম উইকেট জুটি ভাঙে। মেহেদী হাসান মিরাজ ও তানজিম হাসান সাকিবকে নিয়ে লড়ে সৌম্য তিনশর কাছে নিয়ে যান সংগ্রহ।

কিউইদের পক্ষে তিনটি করে উইকেট নেন জ্যাকব ডাফি ও উইলিয়াম ও’রোর্ক।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //