কে এই সাথিরা জেসি, কেনইবা তাকে নিয়ে বিতর্ক

একরাশ প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজ যোগ্যতায় অনেকটাই এগিয়ে দেশের নারীরা। তেমনই একজন বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক নারী আম্পায়ার সাথিরা জাকির জেসি। নিজেকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি।

দেশের ক্রিকেটের যারা টুকটাক খোঁজখবর রাখেন তাদের কাছে পরিচিত এক নাম জেসি। দেশের নারী ক্রিকেটের প্রথম দিকের সদস্য ছিলেন তিনি, লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের অধিনায়কত্বও করেছেন।

এরপর ক্রিকেট কোচিং ক্যারিয়ারকে পাশে রেখে আম্পায়ারিংয়ে নেমে পড়েন তিনি। যেখানে ইতিহাস তৈরি করেছেন সাবেক এই নারী ক্রিকেটার। আম্পায়ারিংয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। সবশেষ আইসিসির আম্পায়ারিং প্যানেলে যুক্ত হয়ে দেশের ক্রিকেটের জন্য সুনাম বয়ে এনেছেন তিনি।


ছোটবেলা থেকেই অনেক ডানপিটে স্বভাবের ছিলেন জেসি। সারাদিন শুধু ক্রিকেট খেলতেন। যে কারণে তার বাবা-মা অনেক বকাবকি করতেন। তবে দিনশেষে তার পরিবার সবকিছুতেই সাপোর্ট করতেন।

লালমনিরহাটে প্রাথমিক পাঠ চুকিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমান জেসি। এরপর এআইইউবি থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন।

২০০১ সালে বিকেএসপিতে ক্রিকেট কোচিংয়ের জন্য গিয়েছিলেন তিনি। তবে সেখান ক্রিকেট না থাকায় তাকে টেনিস কিংবা শুর্টিংয়ে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে বিকেএসপিতে নারী ক্রিকেটারদের জন্য কোচিং ব্যবস্থা চালু হলে শুক্র-শনিবার করে সেখানে যেতেন তিনি। সেখানে প্র্যাকটিসও করতেন।

২০০৭ সালে দেশে মেয়েদের ক্রিকেট চালু হওয়ার সংবাদে ঢাকায় পাড়ি জমান। এরপর ক্রমেই ন্যাশনাল টিমে জায়গা করে নেন জেসি।

২০১০ সালে চীনের গুয়াংচুতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসের মহিলা ক্রিকেটে চীনকে হারিয়ে ঐতিহাসিক রৌপ্য পদক লাভ করে বাংলাদেশ। ওই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের অন্যতম একজন খেলোয়াড় ছিলেন তিনি।

২০১১ সালের ২৬ নভেম্বরে আয়ারল্যান্ড মহিলা ক্রিকেট দলের বিপক্ষে অফব্রেক এই বোলারের ওডিআই অভিষেক হয়। এরপর ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২০ ওভারের ফরম্যাটে আন্তর্জাতিকে অভিষেক হয়। তবে দেশের জার্সিতে তিন ম্যাচের বেশি ২২ গজ মাতানো হয়নি জেসির। ওই বছরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ইতি টানেন তিনি।

এরপর নাম লেখান আম্পায়ারিংয়ে। তবে জেসি যখনই দেশের সম্পদ হয়ে উঠছে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশের নারী ক্রিকেটের ব্র্যান্ড হয়ে ওঠার পথে, ঠিক তখনই তাকে ঘিরে বিতর্কে দেশের ক্রিকেট।


প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডান ও প্রাইম ব্যাংকের মধ্যকার ম্যাচেই তাকে ঘিরে আপত্তি। যদিও জেসির দাবি, ডিপিএল অভিষেকে ক্রিকেটারদের কাছ থেকে পূর্ণ সহযোগিতা পেয়েছেন তিনি।

ঘটনার পরপর বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেসি জানিয়েছেন, দলের ক্রিকেটার, বিশেষ করে মুশফিক, রিয়াদদের কাছ থেকে বেশ ভালো সহযোগিতা পেয়েছেন তিনি।

এখন পর্যন্ত আটটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে দায়িত্ব পালন করেছেন সাবেক এই ক্রিকেটার। এর মধ্যে সাতটি ম্যাচে আম্পায়ার এবং একটিতে টিভি আম্পায়ারের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এছাড়া বিতর্ককে পাশে রেখেই ডিপিএলে অভিষেক হয়েছে তার। এর আগে, ১৬ এপ্রিল মোহামেডান ও শাইনপুকুরের ম্যাচের তৃতীয় আম্পায়ারের ভূমিকায় ছিলেন তিনি।

এদিকে চলতি বছরের অক্টোবরে ঘরের মাঠেই নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ গড়াবে। সেখানেই আম্পায়ারিংয়ের স্বপ্ন বুনেছেন জেসি। তার ভাষ্য, ‘হ্যাঁ অবশ্যই। ওইটাই (বিশ্বকাপ) এখন লক্ষ্য।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //