ক্যাসিনোকাণ্ডে শতাধিক পদস্থ ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা!

ক্যাসিনো পরিচালনার সাথে জড়িত থেকে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আরো শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পর্যায়ক্রমে এসব মামলা করা হবে বলে জানা গেছে দুদক সূত্রে। 

এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবালের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান দল নতুন করে আটজনের সম্পদের হিসেব চেয়ে নোটিস জারি করছে গত ১৮ অক্টোবর। 

তারা হলেন- যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম প্রধান মো. সাজ্জাদুল ইসলাম, ঢাকা গণপূর্তের সার্কেল-৪ এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী আলী আকবর, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক মো. খোরশেদ আলম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর কর্মকর্তা শেখ কুদ্দুস আহমেদ, মুন্সীগঞ্জের যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন, তার ভাই ঠিকাদার মোয়াজ্জেম হোসেন সেন্টু ও আব্দুস সালাম এবং চট্টগ্রামের পটিয়ার ঠিকাদার ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা নুর উর রশীদ চৌধুরী এজাজ। 

দুদকের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই প্রাথমিক অনুসন্ধানে বেশ কিছু অবৈধ সম্পদের সন্ধান পাওয়া এই আটজনের বিরুদ্ধে সম্পদের নোটিস জারি করেছে রাষ্ট্রীয় এই দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা।

গত বছর সেপ্টেম্বরের শেষে ক্যাসিনোকাণ্ডে ও অন্যান্য অপরাধে জড়িতদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে নামে দুদক। অনুসন্ধান শুরুর পরপরই বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও বিতর্কিত যুবলীগ নেতা ও ঠিকাদার জিকে শামীমসহ ২৫ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ২২টি মামলা দায়ের করে দুদক। এরই প্রেক্ষাপটে একের পর এক নাম আসতে থাকে দুদকের তালিকায়। যার সংখ্যা ইতিমধ্যে ১৬০ ছাড়িয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে দায়িত্বশীল সূত্রে। ওই ব্যক্তিরাই পর্যাক্রমে আসামী হতে যাচ্ছেন অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায়।

সূত্র বলছে, সম্প্রতি আটজনকে সম্পদের নোটিস দিলেও তালিকায় থাকা সন্দেহভাজন সবাইকে নোটিস দেয়া হবে তা নয়। অনেকের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে এমন কিছু শক্ত তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা যাচাই-বাচাই করে নিশ্চিত হওয়া গেলে মামলা করা সম্ভব।

এ প্রসঙ্গে দুদকের সিনিয়র সচিব মো. দিলওয়ার বখত বলেন, ‘সন্দেহভাজনদের কার বিরুদ্ধে সম্পদের নোটিস জারি করা হবে আর কার বিরুদ্ধে হবে না, তার সিদ্ধান্ত হবে অনুসন্ধানকারী দলের সুপারিশের ভিত্তিতে। প্রত্যেক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আলাদা অনুসন্ধান হওয়ায় আলাদা আলাদা আইনি পদক্ষেপ হবে।’

দুদক সূত্র জানায়, অনুসন্ধান দলের সুপারিশে এ পর্যন্ত অন্তত ৩৪ ব্যক্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কমিশন। এই ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি, প্রকৌশলী, ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার রয়েছেন। যেসব ব্যক্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন- চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, যুবলীগ নেতা এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীম, মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ডাইরেক্টর ইনচার্জ মো. লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, সম্রাটের সহযোগী এনামুল হক আরমান, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল আলম (ফিরোজ), অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান, ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান (মিজান)। 

এদের মধ্যে আরো রয়েছেন- গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক এনু ও তার ভাই গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রুপন ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় যুবলীগের বহিষ্কৃত দফতর সম্পাদক কাজী আনিছুর রহমান ও তার স্ত্রী সুমি রহমান, লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার স্ত্রী নাবিলা লোকমান, গণপূর্ত অধিদফতরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল হাই, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদার, এনামুল হকের সহযোগী ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কর্মচারী আবুল কালাম আজাদ (আজাদ রহমান), কাকরাইলের জাকির এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. জাকির হোসেন, সেগুনবাগিচার শফিক এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শফিকুল ইসলাম। নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের অনেকেই বর্তমানে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে।

জানা গেছে, ক্যাসিনো ব্যবসার মাধ্যমে প্রায় সাড়ে চারশ’ কোটি টাকা লোপাটের হদিস পেয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এই কারবারের সাথে যুক্ত অনেকের ব্যাংক হিসাব ইতিমধ্যে জব্দ করা হয়েছে ও সিলগালা করা হয়েছে বেশ কিছু বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //