সিসার নেশায় বুঁদ তরুণ-তরুণীরা

চারদিকে লাল-নীল আলোর ছড়াছড়ি আর হৈ-হুল্লোড়। এমন পরিবেশে সোফায় বসে বড় বড় হুক্কায় সিসা টানছে তরুণ-তরুণীরা। একটু পরপরই হাতবদল হচ্ছে হুক্কা। গানের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে হুক্কায় সিসা টানার গভীর নেশা। চার দেয়ালের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে ধোঁয়া। অভিজাত পরিবারের তরুণ-তরুণীদের কাছে নেশার নতুন উন্মাদনা হুক্কায় সিসা টানা। 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে সিসা একটি নিষিদ্ধ মাদক পণ্য। এই আইনে সিসা সেবন এবং বিক্রিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত হোটেল ও রেস্টুরেন্টের সিসা লাউঞ্জগুলোতে হরদমে বিক্রি হচ্ছে মাদক পণ্য সিসা। এসব সিসা বারে রঙিন নেশায় রাত কাটাচ্ছেন উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীরা।


মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর বলছে তাদের কাছে মাত্র ২২-২৪টি সিসা বারের তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৯টি এবং ঢাকার বাইরে রয়েছে ৪-৫টি বার।

গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য মতে, রাজধানীর পুরান ঢাকা, ধানমন্ডি, কলাবাগান, মিরপুর, বারিধারা, গুলশান, বনানী ও উত্তরায় শতাধিক অবৈধ সিসা বার রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আরও অর্ধশতাধিক বার আছে।

উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের জন্মদিন কিংবা যেকোনো উদযাপন উপলক্ষে পার্টিগুলোর রঙিন আকর্ষণ এখন সিসা সেবন। আগে রাজধানীর হাতে গোনা দু-একটি এলাকায় সিসা বারে বুঁদ হয়ে থাকতেন তরুণ-তরুণীরা। রেস্টুরেন্টের আদলে গড়ে ওঠা এসব সিসা বার বা লাউঞ্জে শুরুর দিকে উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের যাতায়াত থাকলেও এখন প্রায় সব শ্রেণির তরুণ-তরুণীর আনাগোনা বাড়ছে। 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ অনুযায়ী, সিসাকে মাদকদ্রব্যের ‘খ’ শ্রেণিতে তালিকাভুক্ত করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ আইনে সিসা বার পরিচালনা ও সেবন সম্পর্কিত অপরাধ প্রমাণিত হলে ন্যূনতম এক বছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এছাড়া নগদ অর্থদণ্ডেরও বিধান রাখা হয়েছে। তবে তাতেও বন্ধ করা যাচ্ছে না সিসা বারগুলো।


সম্প্রতি গুলশানের আর এম সেন্টারে অবস্থিত তারকা দম্পতি ওমর সানি ও মৌসুমির ছেলে ফারদিন এহসান স্বাধীনের মালিকানাধীন ‘মন্টানা লাউঞ্জ’ নামের সিসা বারে অভিযান চালিয়ে ১১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর রাজধানীর অভিজাত এলাকায় নিষিদ্ধ সিসা বারের রমরমা বাণিজ্য নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু হয়। গুলশান থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ১১ জনকে আসামি করে মামলা হলেও বারের মালিক ফারদিন এহসান স্বাধীনের নাম বাদ দেয়া হয়।

এঘটনার পর ওমর সানি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সিসা সেবন মারাত্মক কোনো অপরাধ নয়। দেশের আইন অনুযায়ী সিগারেট সেবন বৈধ, তাহলে সিসা সেবন কেন অবৈধ? সিসায় দশমিক দুই মাত্রার চেয়েও কম নিকোটিন থাকে।

এ বিষয়ে ডিএনসির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার বলেন, আইন অনুযায়ী সিসা বার অবৈধ। এটিকে কেউ বৈধ বলার চেষ্টা করলে সেটি আইন বিরোধী। তবে যেসব বারের সিসাতে নিকোটিনের পরিমাণ শূন্য দশমিক দুই এর নিচে থাকবে তখন সেটি সিসা হবে না। নিকোটিনের মাত্রা শূন্য দশমিক দুই এর বেশি হলে সিসা বলা যাবে। সিসা সেবন ও বার পরিচালনা আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এসব বার আমাদের নজরদারিতে রয়েছে।

রাজধানীতে শতাধিক এবং গুলশান-বনানীতে ৪০টির ওপরে সিসা বার রয়েছে— এমন অভিযোগ অস্বীকার করে ডিএনসির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার বলেন, সারা দেশের মধ্যে ঢাকায় ১৯টি সিসা বার রয়েছে এবং ঢাকার বাইরে ৩-৪টা বার আছে বলে জানি। কিন্তু কেউ গোপনে সিসা বার পরিচালনা করলে সেটা আমার জানা নেই।

এ বিষয়ে র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাজধানীর অভিজাত এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ সিসা বার চলছে কি না, বিষয়টি আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা এসব স্থানে অভিযান পরিচালনা করব।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

বিষয় : মাদক সিসা

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //