‘দোর্দণ্ড প্রতাপে’ ফের চলছে অবৈধ হাসপাতাল

সরকারের নির্দেশনায় প্রশাসনের অভিযানে একেরপর এক অবৈধ হাসপাতাল বন্ধ হয়েছিল। স্বস্তি ফিরেছিল জনমনে। তবে ফের ‘দোর্দণ্ড প্রতাপে’ কার্যক্রম চালাচ্ছে এসব হাসপাতাল।

সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশ জুড়ে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রশাসনের হিসেবে বন্ধ থাকলেও আদতে চালু কয়েকটি হাসপাতালে গিয়ে দেখা মেলে তাদের সচল চিকিৎসাদানের চিত্র।

রাজধানীর কলেজগেট বাসস্ট্যান্ড এলাকার প্রাইম অর্থোপেডিক অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল, লাইফ কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল, মোহাম্মদপুর মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারে অবস্থিত রয়্যাল স্পেশালিস্ট হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় সংকট রয়েছে আগের মতোই।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মেনে চালু হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কিছুই জানে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

গত ২৫ মে সারাদেশের অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ১৫ জুন পর্যন্ত ১ হাজার ৬৪১টি অবৈধ চিকিৎসাকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এই মুহূর্তে অধিদপ্তর নিবন্ধনভুক্ত ১১ হাজার ৮১টি বেসরকারি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে হাসপাতালের সংখ্যা ৩ হাজার ৭৬৩টি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৭ হাজার ১৫৬টি এবং ব্লাড ব্যাংক রয়েছে ১৬২টি। অভিযানের সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল লাইসেন্স নবায়ন ও নিবন্ধনের হিড়িক পড়ে যায়। এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৬০০টি হাসপাতাল নিবন্ধনের আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৯ হাজারের বেশি লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন।

শুধু রাজধানীতে নয়, চট্টগ্রাম, রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে বন্ধ করে দেওয়া হাসপাতাল-ক্লিনিকের অনেকই ফের রোগীদের সেবা দিচ্ছে। তবে অভিযানে বন্ধ হয়ে যাওয়া ক'টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন বা নবায়নের জন্য আবেদন করেছে, তার পরিসংখ্যান নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। অভিযান ঝিমিয়ে পড়ায় প্রশাসনের নজর এড়িয়ে চলছে অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

জেলা পর্যায়ে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বরাবরই জনবল সংকটের কথা বলে দায় এড়িয়ে যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বছরে একবার লোক দেখানো অভিযান এবং মাঠপর্যায়ে নজরদারির অভাবেই এমন অরাজকতা চলছে। ফলে বেশি টাকা গুনেও হয়রানির শিকার হচ্ছেন মানুষ। অনেক সময় ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুও ঘটছে।

মানিকগঞ্জে ব্যারিস্টার আফতাব মেমোরিয়াল ও হাসপাতাল, ইব্রাহিম মেমোরিয়াল হাসপাতাল, আলফা হাসপাতালসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু অভিযান অনিয়মিত হওয়ায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই আবার কার্যক্রম শুরু করেছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন মোয়াজ্জেম হোসেন আলী খান চৌধুরী বলেন, নানা কারণে এখন অভিযান বন্ধ রয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে আবার অভিযান চালানো হবে। বন্ধের তালিকা প্রকাশের পরও কেউ যদি চালু রাখে, অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. কাজী মোহাম্মাদ সালেহীন তৌহিদ বলেন, বন্ধ হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো লাইসেন্স নবায়ন বা নিবন্ধন আলাদাভাবে না হওয়ার কারণে এ পর্যন্ত কতটি বৈধভাবে চালু করা হয়েছে, তা বলতে পারব না। এগুলো একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে হয়, যে কারণে বলা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, অবৈধ হাসপাতাল বন্ধে অভিযান আপাতত স্থগিত রয়েছে। সিলেটসহ বেশকিছু জেলায় বন্যার কারণে এখন অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। বন্যাকবলিত এলাকায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা কাজ করছেন। প্রাইম অর্থোপেডিক অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল, লাইফ কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল কীভাবে চালু হলো, সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারেননি এই কর্মকর্তা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ভারপ্রাপ্ত ডা. শফিউর রহমান বলেন, যেসব হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, সেগুলো আমাদের অনুমতি না নিয়ে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ নেই। তবে আমাদেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেভাবে তদারকি করা প্রয়োজন, জনবল সংকটের কারণে তা সেভাবে করা সম্ভব হচ্ছে না।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //