অধিদপ্তরের উদাসীনতায় থমকে গেছে কার্যক্রম

বিগত বছরগুলোয় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, শিশুমৃত্যুর হার হ্রাসে দারুণ সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। করোনা মহামারিতে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো স্বাস্থ্যসেবা চলে গেছে নাগালের বাইরে। করোনার প্রভাব কমে গেলেও সে পরিস্থিতি আর পরিবর্তিত হয়নি। এর সাথে যুক্ত হয়েছে অধিদপ্তরের উদাসীনতা। সবমিলে থমকে গেছে এ সংক্রান্ত মাঠপর্যায়ের সেবা। 

নাটোর, কুমিল্লা, রাজশাহী, বরিশাল, যশোরসহ সারা দেশের এক ডজন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনুসন্ধান চালিয়ে পাওয়া গেছে একই ধরনের তথ্য। অভিযোগ পাওয়া গেছে, স্বাস্থ্যসেবার জন্য পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের নিয়োগপ্রাপ্ত মাঠকর্মীরা এখন আর আগের মতো বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করেন না।

এ ব্যাপারে নাটোরের সিংড়া উপজেলার হুলহুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোবারক হোসেন জানালেন, বছর দুয়েক আগেও তার স্ত্রীর কাছে নিয়মিত আসতেন পরিবার পরিকল্পনার মাঠকর্মীরা। সেখান থেকেই পিলসহ নানা জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ও পরামর্শ নিত তার পরিবার। কিন্তু এখন আর কেউ আসে না। তার ধারণা, সরকারি এই সুবিধা এখন বন্ধ হয়ে গেছে। 

একই ধরনের চিত্র খুঁজে পাওয়া গেছে দেশের নানা প্রান্তে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, ‘স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে গতি আনার জন্য সরকারের প্রচেষ্টার কোনও কমতি নেই। কিন্তু করোনাকালে ঘর থেকে বের না হওয়ার যে বিধিনিষেধ আরোপ হয়েছিল, সেটার পর আর সেবা কার্যক্রম গতি পায়নি। ফলে গোটা দেশেই যে যার মতো বসে বসে বেতন গুনছে।’ 

এ বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘দেখুন ৬০/৭০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী এই অধিদপ্তরে কাজ করেন। সেবা খাতের এই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য ডায়নামিক নেতৃত্ব দরকার। সঠিক পরিচালনা ছাড়া এমন প্রতিষ্ঠানে সাফল্য আসবে না।’ 

জানা যায়, পরিবার পরিকল্পনার বর্তমান মহাপরিচালক সাহান আরা বানু দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। তিনি অফিস করলেও এত বড় প্রতিষ্ঠানের সবদিক সামলে ওঠার মতো অবস্থায় তিনি নেই। 

এদিকে, দেশজুড়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর স্বাস্থসেবা কার্যক্রম চালালেও ঢাকা ও বিভাগীয় শহরগুলোয় সরকারের সাথে কোলাবরেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। 

সম্প্রতি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে সরকারের চুক্তির মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও সেটি নবায়নের কোনও উদ্যোগ গৃহীত হয়নি। সব মিলিয়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর এখন তার বিশাল কর্মীবাহিনী নিয়ে কেবল সরকারি সুযোগ-সুবিধাই নিচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের সেবা তো দূরে থাকুক, জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পর্যন্ত নিজেদের দায়িত্বের ব্যাপারে অসম্ভব রকম উদাসীন। 

স্বয়ং মহাপরিচালক বরাবর প্রতিষ্ঠানের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানের কাজের গতি হারানোর অভিযোগ করলেও সেসব নিয়ে খুব একটা আগ্রহ প্রকাশ করেননি বর্তমান মহাপরিচালক সাহান আরা বানু। 

এ প্রসঙ্গে কথা বলতে মহাপরিচালক সাহান আরা বানুর দপ্তরে একাধিক দিন গিয়েও দেখা করা সম্ভব হয়নি। মোবাইল ফোনেও তিনি কথা বলেননি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //