বিমানে নিয়োগ পরীক্ষা

সাত লাখ টাকায় বিক্রি হয় প্রশ্ন, ভাগ পান কর্মকর্তারাও!

বিমান বাংলাদেশে এয়ারলাইনসের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে সংস্থাটির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জড়িত থাকতে পারেন। গ্রেপ্তারকৃতরা নিম্নস্তরের কর্মকর্তা। তাই প্রশ্ন ফাঁস করতে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের গাফিলতি বা সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে সন্দেহ করছেন তদন্তকারীরা। পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর এমনই দাবি করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

আজ শনিবার (২২ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযানের ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।

গ্রেপ্তাররা হলেন- আওলাদ হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম (৩৬), এনামুল হক (২৮), হারুন-অর-রশিদ ও মাহফুজুল আলম (৩১)। গতকাল শুক্রবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।  

সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘গতকাল বড় ধরনের নিয়োগ পরীক্ষা ছিল বিমানের; কিন্তু পরীক্ষার আগের দিন আমরা জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পেয়ে যাই। এর পরই আমরা কাজ শুরু করে দিই। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত এবং প্রশ্ন বিতরণের সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করি।’

গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, তাদের সঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত রয়েছেন। নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার পর থেকে তারা পরিকল্পনা শুরু করে দেন, কিভাবে প্রশ্ন ফাঁস করবেন এবং কিভাবে তা বিতরণ করবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী পরীক্ষার আগের দিন চার-পাঁচজন মিলে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নটি ফাঁস করেন। পরে গ্রেপ্তারকৃতরা ফাঁস প্রশ্ন সরাসরি এবং হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বিতরণ করেন, টাকা নেন। এই প্রশ্ন তারা সর্বোচ্চ সাত লাখ টাকা থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন দুই লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। এ ছাড়া গরিব পরীক্ষার্থীদের প্রশ্ন দিয়ে তারা নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সই নিয়েছেন যে তাদের বাড়ি কিংবা জমিজমা লিখে দেবেন।

হারুন অর রশীদ বলেন, ‘গ্রেপ্তার আসামিরা এর আগেও বিভিন্ন প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমাদের কাছে স্বীকার করেন। এই নিয়োগ পরীক্ষার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি কমিটি গঠিত হয়েছিল। এই কমিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে সেই রহস্য উদঘাটন করার জন্য আমরা আসামিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসা‌বাদ করব। গ্রেপ্তারদের সঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। সে বিষয়ে জানার চেষ্টা করব। এই টাকার ভাগ তারা আবার ওই সব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও দিয়েছেন। এসব বিষয়ে আমরা বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করব গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে। ’

তিনি আরো বলেন, ‘বিমানের ডিজিএম ও জিএমের সমন্বয়ে যে কমিটিটা গঠিত হিয়েছিল তাদের কাজ ছিল প্রশ্নফাঁসের মতো বিষয় রোধ করা। কিন্তু তাদের চোখের আড়ালে কিভাবে প্রশ্ন ফাঁস করা হলো  তা আমরা জানতে চাইব। এ বিষয়ে তাদের আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব কিভাবে তাদের চোখ আড়াল করে অফিস সহকারীরা প্রশ্নটি ফাঁস করেছেন। ’

যারা ফাঁস করা প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি না এবং বিমানের কমিটি প্রশ্ন ফাঁসের দায় নেবে কি না―জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, ‘পরীক্ষা কমিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব। এছাড়া গ্রেপ্তারদের কাছেও রিমান্ডে আমরা এ বিষয়ে তথ্য জানার চেষ্টা করব। ’

চক্রটি ফাঁস হওয়া প্রশ্ন কতজন পরীক্ষার্থীদের কাছে বিলি করেছিলেন―এ নিয়ে এক প্রশ্নে ডিবি প্রধান বলেন, ‘তদন্ত শেষে এ বিষয়ে আমরা সঠিক সংখ্যাটি জানাতে পারব। ’ অপর আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা অভিভাবকদেরও বলেছিলাম প্রশ্ন ফাঁসের এ ধরনের ঘটনা তাদের চোখের সামনে আসলে যেন তারা আমাদের জানান। কিন্তু কিছু অসাধু চক্র প্রশ্ন ফাঁস করে মানুষজনকে বিলি করে আসছে টাকার বিনিময়ে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে কোনো অভিভাবক আমাদের তথ্য দেননি। ’

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কমিটির গাফিলতি নাকি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা কমিটির কাজ হচ্ছে প্রশ্নপত্র ছাপানো থেকে শুরু করে নিরাপদে পরীক্ষা হলে পৌঁছানো এবং পরীক্ষাটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার। এই কমিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে যেভাবে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে সেটি আমরা জানার চেষ্টা করব।’

প্রশ্নফাঁসের অধিকাংশ মামলার ক্ষেত্রে দেখা যায় যখন বিচারকাজ শুরু হয় তখন মামলা আদালতের টেকে না। এ ক্ষেত্রে সঠিক ধারায় মামলা করা হয় কি না এবং গতকালের ঘটনায় কোন আইনে মামলা করা হয়েছে বা হবে―এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আইন বিচার বিশ্লেষণ করে মামলা করা হচ্ছে, যাতে আসামিরা সর্বোচ্চ সাজা পায়। এভাবে যদি পরীক্ষার আগের দিন প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যায় তাহলে মেধাবীদের আর আসার কোনো সম্ভাবনা থাকে না।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //