প্রতিবেশিদের ফাঁসাতে মরিয়মের ‍‘অন্তর্ধান নাটক’

বহুল আলোচিত খুলনার অপহরণ মামলা প্রমাণিত না হওয়ায় রহিমা বেগম এবং তার দুই মেয়ে মরিয়ম মান্নান ও আদুরি আকতারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

আজ সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান।

এর আগে ৬ ফেব্রুয়ারি তদন্তে অপহরণ নয়, বরং জমিসংক্রান্ত বিরোধে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে রহিমা ও তার দুই মেয়ে মরিয়ম মান্নান ও আদুরি আকতার অপহরণের এই নাটক সাজিয়েছিলেন বলে প্রমাণ মিলেছে।

গত বছরের ২৮ আগস্ট থেকে লাপাত্তা মা রহিমা বেগমকে মৃত হিসেবে দাবি করেন মেয়ে মরিয়ম মান্নান। তার আবেগতাড়িত বক্তব্য ভাইরাল হয় সামাজিকমাধ্যমে। ঘটনার রাতেই খুলনার দৌলতপুর থানায় পাঁচজনকে আসামি করে অপহরণ মামলা করেছিলেন রহিমার ছোট মেয়ে আদুরি আক্তার। চাঞ্চল্যকর মামলাটির তদন্ত পিবিআইকে দেয় আদালত।

পাঁচ মাস তদন্ত শেষে পিবিআই জানিয়েছে, রহিমা বেগমকে কেউ অপহরণ করেনি। বরং পরিকল্পিতভাবে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে তাদের জমি কেনা প্রতিবেশী পাঁচটি পরিবারকে শায়েস্তা করতে রহিমা, তার দুই মেয়ে আদুরি ও মরিয়ম নাটকটি সাজিয়েছিলেন।

খুলনা পিবিআই’র পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, বাদী আদুরী আক্তার, পরিকল্পনাকারী রহিমা আক্তার এবং পুরো ঘটনার মাস্টারমাইন্ড মরিয়াম মান্নান- তিনজনকেই আমরা তদন্তে পেয়েছি।

তদন্তে উঠে এসেছে, পুরো ঘটনার পরিকল্পনা হয়েছিল ঢাকায় মরিয়ম মান্নানের বাসায়। ঘটনার দিন মরিয়ম ঢাকা থেকে বিকাশের মাধ্যমে খুলনায় মাকে এক হাজার টাকা পাঠায়। সেখান থেকে ৯৮০ টাকা উত্তোলন করে নিজ বাড়ির পেছন থেকে আত্মগোপনে যান তিনি। পরবতীতে মরিয়মের কথা মতো স্থান বদলাতো মা রহিমা বেগম।

খুলনা পিবিআই’র পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, আত্মগোপনে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পূর্বে রহিমা আক্তারকে হাত খরচ হিসেবেই হয়তো মরিয়ম মান্নান ঢাকা থেকে টাকা পাঠান। উনি ঢাকায় উনার মেয়ের কাছে গেলেন। উনার মেয়ে খুব সুন্দরভাবে উনাকে লুকিয়ে রাখেন। রাত ১১টা থেকেই যিনি তার মায়ের অপহরণের কথা সারা দেশে ছড়িয়ে দেন, তিনি পরদিন বিকাল ৫টায় ঢাকা থেকে আসেন মহেশ্বরপাশার বাসায়। এখানেই আমাদের খটকা লাগে।

রহিমা বেগম অপহরণ মামলায় বেশ কিছুদিন জেলহাজতে ছিলেন জমির পাঁচ মালিক। তারা জানান, মানসিক, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হয়েছেন তারা। এজন্য তারা আদালতের দ্বারস্থ হবেন। জমির মালিক হেলাল শরীফ বলেন, আমার স্ত্রী গর্ভবতী ছিলেন। বাচ্চার ডেলিভারি হয়েছে নির্ধারিত সময়ের দুই মাস আগে। এখন আমার মেয়ে একদিন ভালো থাকে, একদিন অসুস্থ। এই মিথ্যা মামলার প্রেসারে পুরো পরিবারই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জমির আরেক মালিক গোলাম কিবরিয়া বলেন, আদালতের শরণাপন্ন হবো। আমি চাই, প্রচলিত আইনে তাদের বিচার হোক।

পিবিআই জানিয়েছে, আদালতে জমা দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে অপহরণ মামলা থেকে পাঁচজনকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি মরিয়ম, তার মা ও বোনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত চাওয়া হয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //