সহসাই কাটছে না আরাভ কাহিনির ধোঁয়াশা

দেশজুড়ে রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানের বক্তব্য ঘুরপাক খাচ্ছে। তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা যেনো থামছেই না। এই আরাভ খান দুবাইয়ে ঠাঁই নেওয়া পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যা মামলাসহ অন্তত ১২ মামলায় পলাতক আসামি। দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম এবং নানা যোগাযোগমাধ্যমে ‘ভাইরাল’ হওয়ার পর এখন প্রশ্ন উঠেছে আরাভ কাহিনীর নেপথ্যের খেলোয়াড় কারা। তার উত্থান এবং সমালোচনার পেছনে কেউ কলকাঠি নাড়ছে বলেও প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মাধ্যমে।

এই প্রতিবেদকের কাছে অপরাধ বিশেজ্ঞরা এভাবেই নিজেদের অভিমত প্রকাশ করেন।

তারা বলছেন, খুব সহসাই আরাভ কাহিনির রহস্য উন্মোচন না-ও হতে পারে। কেননা, আরাভের পেছনে নামজাদা অনেকেই থাকতে পারেন।

দুবাইয়ে আরাভের ঘনিষ্ঠজনরা বলছে, দুবাইয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন আরাভ। প্রতিদিনই দোকানে আসছেন। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলি সাবরিন সাংবাদিকদের জানান, আরাভকে দুবাই পুলিশ নজরদারিতে রেখেছে। যতদূর জানি তাকে এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে কোনো সহায়তা চায়নি।

অন্যদিকে সম্প্রতি দুবাইয়ে আরাভের স্বর্ণের দোকানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়া দেশসেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে আজ জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র। 

ওই সূত্র জানায়, বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড তিন দিনের সিরিজ ম্যাচের কারণে সাকিবকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি ডিবি পুলিশ। গতকাল সিরিজ শেষ হওয়ায় আজ শুক্রবার (২৪ মার্চ) অথবা আগামীকাল শনিবার (২৫ মার্চ) সাকিবকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে ওই সূত্র জানায়। 

অন্যদিকে দুবাইয়ে থাকা আরাভের একাধিক সূত্র জানায়, আরাভ খান একজন বড় মাপের প্রতারক। তার সঙ্গে অনেক রাঘববোয়ালের সুসম্পর্ক রয়েছে। ওই রাঘববোয়ালদের কারণেই তিনি প্রতারণা কতে পারছেন। আরাভের উত্থানের পেছনে ওইসব খেলোয়াড়রাই নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছেন। সম্প্রতি যে দোকান উদ্বোধনের দাওয়াত দিয়ে সেলিব্রিটিদের আনা হয়েছে সেখানেও বড় ধরনের প্রতারণা করেছে আরাভ খান। যে দোকানের ৬০ কেজি ওজনের স্বর্ণের ঈগলের কথা বলা হয়েছে সেটি আসলে ১০০ কেজির ঈগল। সেখানে স্বর্ণের কোনো অস্তিত্ব নেই। 

আরেকটি সূত্র জানায়, আরাভ খান স্বর্ণ চোরাচালানিদের সঙ্গে আঁতাত করে দেশে বড় বড় চালান পাঠিয়েছেন। যারা আরাভকে ব্যবহার করছেন, তারা মাফিয়া চক্র। আরাভের সঙ্গে দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গেও সম্পর্ক রয়েছে। জিসানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় ঢাকার মগবাজারের এক শীর্ষ সন্ত্রাসী। পুলিশ হত্যার পর ভারতে গিয়ে নাম-পরিচয় গোপন করে রবিউল ইসলাম থেকে নাম রাখা হয় আরাভ খান। ওই নামেই ভারত থেকে পাসপোর্ট করে দুবাইয়ে পাড়ি জমান তিনি। এরপর ধীরে ধীরে মাফিয়াদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দুবাইয়ে বড় ব্যবসায়ীদের নজরে পড়েন তিনি। 

সম্প্রতি ফেসবুকে লাইভে আরাভ খান বলেন, তার নামে প্রতিবেশি ব্যবসায়ীরা মিথ্যা তথ্য দিয়ে গুজব রটাচ্ছেন। হিংসাপরায়ণ হয়ে ওই ব্যবসায়ীরাই তার ক্ষতি করতে চাইছেন।

তবে আরাভের ঘনিষ্ঠ আরেক সূত্র জানায়, আরাভ দুবাইয়ে প্রতিদিনই তার দোকানে আসছেন। তবে ওই দোকানে কোনো স্বর্ণের অস্তিত্ব নেই। বছরখানেক আগে সবজি ব্যবসায়ী ছিলেন আরাভ। এরপর অল্প অল্প করে স্বর্ণ ব্যবসায় যুক্ত হন। কিন্তু আরাভ তার নিজের বন্ধুদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত মিথ্যা কথা বলে আসছেন। 

সেখানকার স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বলেন, আরাভের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে হত্যা ও অস্ত্র মামলা রয়েছে তা জানা ছিল না কারোই। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদে তারা জানতে পারেন আরাভ একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও হত্যা মামলার আসামি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলি সাবরিন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আরাভের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। 

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদি আমাদের কাছে কোনো সহায়তা চায় বা আমাদের দূতাবাসের সহায়তা চায়, তাহলে অবশ্যই আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তথ্য দিয়ে সহায়তা করব। তবে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো সহায়তা চায়নি। এ বিষয়ে দূতাবাস যোগাযোগ রাখছে এবং তথ্য চাওয়া হলে আমরা তথ্য প্রদান করব। তিনি বলেন, আমরা জানি আরাভকে এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //