২০ কোটিতে নৌকার মনোনয়ন দিতে চেয়ে ডিবির হাতে বাবা-মেয়ে ধরা

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সক্রিয় হতে শুরু করেছে প্রতারকচক্র। নিজেদের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে তারা।

এক ভুক্তভোগী প্রার্থীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নোয়াখালী থেকে বাবা-মেয়েকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরা বিভাগ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. ইয়াসিন (৪৬) ও তার মেয়ে সুরাইয়া ইয়াসমিন (২২)।

আজ শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, সম্প্রতি একজন মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থী ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীকে ফোন করে প্রতারকরা বলেন, আপনার মনোনয়নের বিষয় বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। আপনি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাবেন। এ জন্য দলের ফান্ডে আপনাকে ২০ কোটি টাকা দিতে হবে। আপনি এই টাকা রেডি রাখবেন। যখন জমা দিতে বলা হবে তখন দেবেন। আর অল্প সময়ের মধ্যে আপনি দেখা করবেন। ২০ কোটি টাকা বলায় এই মনোনয়ন প্রার্থী বিষয়টি দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতাকে অবহিত করেন। পরে বিষয়টি তিনি আমাদের কাছে অভিযোগ করেন যে, একটি প্রতারক চক্র গণভবনের নাম ব্যবহার করে এমন একটি প্রতারণার চেষ্টা হচ্ছে। সেই ফোনকল করা ব্যক্তিকে নোয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার করার পর গোয়েন্দা পুলিশ দেখতে পায়, চক্রটি বাবা ও মেয়ে মিলে গড়ে তুলেছে। মেয়ে ও বাবা দুজনে মিলে বিভিন্ন জনকে ফোন করেন। তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করছেন। গ্রেপ্তার শেষে উদ্ধার হওয়া মোবাইলে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগের রেকর্ড পাওয়া গেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে গোয়েন্দা প্রধান বলেন, একেক সময়ে প্রতারণার একেকটি মৌসুম থাকে। আগে চাকরি, পোস্টিং, বিদেশে লোক পাঠানোসহ বিভিন্নভাবে প্রতারণা করে অনেককে সর্ব শান্ত করেছে। বর্তমানে চলছে মনোনয়ন প্রতারণা। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পরেই নির্বাচন ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যেহেতু অনেক মানুষ নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়ন কিনেছে। 

হারুন বলেন, তারা এটাকে ঘিরে প্রার্থীদের ফোন করে নমিনেশন পাবেন জানিয়ে ফান্ডে টাকা দিতে বলা হয়। অনেকেই তাদের ফাঁদে পা দিয়ে কিছু টাকাও দিয়েছে। আবার কেউ কেউ টাকা দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যারা টাকা না দিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন আমরা প্রতারকদের গ্রেপ্তার করছি। তাদের রিমান্ডে এনে এই চক্রের অন্য কারা জড়িত সেটা জানার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি আমরা তাদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতারণা করার কৌশল পেয়েছি। এছাড়া তারা রাজনৈতিক নেতাদের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে।

তিনি বলেন, তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের নামে নাম্বার ট্রু কলারে সেভ করে বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা করে। কিন্তু যারা টাকা দিচ্ছেন তাদের আরও সতর্ক হতে হবে। কারণ একজন প্রার্থীকে নমিনেশন দেওয়ার আগে কয়েকটি ধাপে যাচাই-বাছাই করা হয়। ট্রু কলারে নাম সেভ করা দেখে কল পেলেই টাকা দিয়ে নমিনেশন পাবেন এটা এতো সহজ না। তাদের সাবধান হওয়া উচিত। বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের প্রতারকরা সক্রিয়। অনেক প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়েছে। কেউ প্রতারণার শিকার হলে আমাদের কাছে অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গ্রেপ্তার বাবা-মেয়ে মনোনয়ন বাণিজ্যে মৌসুম হিসেবে প্রতারণা শুরু করে। অনেককে প্রতারণার টার্গেট করেছিল তারা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //