নীরবে চলে গেলো হাসির ফেরিওয়ালার জন্মদিন!

দিলদারের কথা মনে আছে? যিনি বড় পর্দায় আমাদের হাসিয়েছেন অজস্রবার তার অভিনয়শৈলী দিয়ে। ২০০৩ সালের ১৩ জুলাই না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তাকে ছাড়া ১৭ বছর পার করছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র। কিন্তু আজ পর্যন্ত দিলদারের উত্তরসূরি হিসেবে কাউকেই চোখে পড়েনি। মৃত্যুর ১৭ বছর পরেও ‘কমেডি কিং’ হিসেবে দর্শকদের হৃদয়ে রয়েছেন দিলদার।

এখনো বিটিভি কিংবা অন্য কোনো চ্যানেলে অভিনীত ছবিগুলো প্রচার হলে তার ভক্তরা খুব মিস করেন। এরকম শিল্পী কি আর আমাদের চলচ্চিত্রে আসবে? এমনি প্রশ্ন দিলদার ভক্তদের। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা গুণীর কদর করতে জানি না। মৃত্যুর পরও দিলদারকে প্রাপ্য সম্মানটুকুও দিতে পারছি না। নীরবে তার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী চলে যায় অথচ থাকে না কোনো আয়োজন। গত ১৩ জানুয়ারি অনেকটা নীরবেই চলে গেছে হাসি দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করা দিলাদারের জন্মদিন। 

বাংলা চলচ্চিত্রের একজন নিয়মিত দর্শক পুরান ঢাকার ইসমাইল খন্দকার জানান, দিলদারের জনপ্রিয়তার কাছাকাছি অনেক নায়কও আমাদের দেশে নেই। আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে দিলদারকে নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক লেখা, তার জন্ম বা মৃত্যুবার্ষিকী পাঠকদের সামনে তুলে ধরা। আমাদের নতুন প্রজন্মের দর্শকরাও দিলদার সম্পর্কে জানতে পারবে। তার শূন্যস্থান এখন পর্যন্ত পূরণ হয়নি আর হবেও না। 

‘বাবার কাজকে এখন আর মূল্যায়ন করেন না চলচ্চিত্রের কোনো মানুষ’ এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করে দিলদারের বড় মেয়ে মাসুমা সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, ‘তার জন্মদিন ও মৃত্যু দিবস কোনো প্রকার স্মরণ ছাড়াই চলে যায়। আব্বা মারা যাওয়ার কয়েক বছর পরেও অনেকেই খোঁজ-খবর রাখতেন। এখন কেউ রাখেন না।’ 

দিলদারের ছোট মেয়ে জিনিয়া বলেন, ‘পরিবারের সবকিছু আমার মা দেখাশোনা করেন। তারও বয়স হয়েছে। আমাদের সংসার রয়েছে, তার ফাকেও দেখভাল করি যতটুকু পারি। আর আমার তো কোনো ভাই নেই তাই আম্মাকে আমাদের দুই বোনকেই দেখতে হয়। যারা ছবির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তাদের বিপদের সময় কাউকেই পাইনি। সাধারণ মানুষ আমার বাবাকে কতটা ভালোবাসে তা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছি।’

দিলদারের সহশিল্পী হিসেবে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন অভিনেত্রী নাসরিন। অনেকদিন ধরে চলচ্চিত্রে কাজ করছেন না এক সময়কার ব্যস্ততম এই অভিনেত্রী। তার সঙ্গে দিলদার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকেই ভাবে আমার বয়স বেশি। কারণ দিলদার ভাইয়ের সঙ্গে অনেক কাজ করেছি। কিন্তু আমার বয়স মোটেও বেশি নয়। ১২ বছর বয়সে সিনেমায় কাজ শুরু করি। তখনই দিলদার ভাইয়ের সঙ্গে কাজ শুরু। আমার যখন ১২ বছর বয়স, দিলদার ভাইয়ের তখন বয়স ৫২ বছর। তাকে আমরা খুব মিস করি। বিশেষ করে আমার অভিনয়ের হাতেখড়িই এই গুণী শিল্পীর সহচার্যে। 

দিলদারের সঙ্গে একাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় চিত্রনায়ক রিয়াজ। তার কাছে দিলদার চৌকস কৌতুকাভিনেতা। তিনি বলেন, ‘কমেডি অভিনয় করা খুব কঠিক কাজ। এখানে পরিমিতিবোধ খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোনটা কমেডি আর কোনটা ভাঁড়ামি সেটা দিলদার ভাই ভালোভাবে বুঝতেন। তার শারীরিক অঙ্গভঙ্গির ভেতর অভিনয় খেলা করতো। তিনি ভালোমানের সফল অভিনেতা ছিলেন। আমাদের দুর্ভাগ্য তার মতো এমন উঁচু মাপের কৌতুকাভিনেতা আমাদের চলচ্চিত্র আর পায়নি ।’

কেন দিলদারের মৃত্যুর পর তার মতো বা কাছাকাছি কোনো কৌতুক অভিনেতা পায়নি আমাদের চলচ্চিত্র? এ প্রশ্নের উত্তরে শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর বলেন, ‘অভিনেতা দিলদারের মৃত্যুর পর অনেকেই চেষ্টা করেছেন তার মতো অভিনয় করতে। কিন্তু সফল হননি। আসলে কারো মতো কেউ হতে পারে না। আগামীতে দিলদারের কাছাকাছি কেউ আসবে কিনা দেশের চলচ্চিত্রে সেটা সময় বলে দেবে।’ তিনি আরো মনে করেন, চলচ্চিত্রে দিলদারের মতো কৌতুক অভিনেতা থাকা অত্যন্ত জরুরি। দর্শকদের মাতিয়ে রাখার অন্যতম নিয়ামক হলো কৌতুক অভিনয়।

দিলদারের স্ত্রীর নাম রোকেয়া বেগম। এই দম্পতির দুই কন্যা সন্তান। বড় মেয়ের নাম মাসুমা আক্তার। পেশায় তিনি দাঁতের ডাক্তার। ছোট মেয়ে জিনিয়া আফরোজ। গুণী এই অভিনেতা ১৯৪৫ সালের ১৩ জানুয়ারি চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০০৩ সালের ১৩ জুলাই তারিখে মারা যান জনপ্রিয় এই মানুষটি । 

১৯৭২ সালে ‘কেন এমন হয়’ নামের চলচ্চিত্র দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু করেন দিলদার। আর পেছনে ফিরে তাকাননি তিনি। অভিনয় করেছেন ‘বেদের মেয়ে জোছনা’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘সুন্দর আলীর জীবন সংসার’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘বিক্ষোভ’, ‘অন্তরে অন্তর’, ‘কন্যাদান’, ‘শান্ত কেন মাস্তান’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে। কমেডি অভিনেতার বাইরে নায়ক হিসেবে দেখা গেছে ‘আব্দুল্লাহ’ চলচ্চিত্রে। ২০০৩ সালে ‘তুমি শুধু আমার’ অভিনয়ের জন্য সেরা কমেডি অভিনেতার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //