মান্নাকে ছাড়া ঢালিউডের এক যুগ

ঢাকাই চলচ্চিত্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক মান্নাকে ছাড়া কেটে গেলো এক যুগ। মোটেও ভালো কাটেনি সময়টা। মান্নার শূন্যতা পূরণ হয়নি একযুগেও। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারির ১৬ তারিখ। রাতে শুটিং শেষ করে বাড়ি ফিরতেই বুকে উঠল চিনচিন ব্যথা। নিজেই গাড়ি চালিয়ে উত্তরা থেকে এলেন গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে; কিন্তু ফিরলেন প্রাণহীন হয়ে।

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন এএসএম আসলাম তালুকদার মান্না। ঢালিউডকে দুঃসময়ের হাতে ছেড়ে দিয়ে সেই যে চলে গেলেন, তা পেরিয়ে গেছে আজকে এক যুগ।

১৯৬৪ সালে টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে জন্ম নেন মান্না। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করার পরই ১৯৮৪ সালে তিনি ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন। এরপর আজহারুল ইসলাম খানের ‘তওবা’ ছবিতে অভিনয় করেন। পরে কাজী হায়াতের সঙ্গে থেকে একের পর এক চলচ্চিত্রে অভিনয় করে নিজেকে সেরা নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।

মান্না যেদিন মারা যান, তাকে একনজর দেখার জন্য জনতার ঢল নেমেছিলো পথে। বাধ্য হয়ে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে হয়েছে, বেদনার্ত ভক্তদের লাঠিপেটা করতে হয়েছে। তারপরও দমানো যায়নি তাদের। মান্নার মৃত্যুতে জনতার ঢল নেমেছিল কেন? মান্নাই বা জীবনকালে এত জনপ্রিয় হয়েছিলেন কীভাবে?

একটু পেছনে তাকানো যাক, সময়টা তখন ভালো যাচ্ছিলো না। ঢাকাই চলচ্চিত্র ঢুকে পড়েছিলো অশ্লীলতার অন্ধকার গলিতে। দেশের আনাচে-কানাচে চলছিল অশ্লীল ছবি। এক শ্রেণির প্রযোজক, পরিচালক ও কিছুসংখ্যক অভিনয় না জানা শিল্পী অভিনীত অযৌক্তিক অশ্লীল ছবিগুলোর প্রতি আকর্ষণ ছিল স্কুলপড়–য়া ছেলেদেরও। কিংবা কোনো ভালো ছবির মধ্যে ‘কাটপিস’ নামক দৃশ্য ঢুকিয়ে দর্শকদের আমোদ দিতে চেয়েছেন কেউ কেউ।

সেই নব্বইয়ের দশকে অশ্লীল চলচ্চিত্র নির্মাণের ধারা শুরু হলে যে কজন প্রথমেই এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে নায়ক মান্না অন্যতম। সে সময় মান্না রীতিমতো যুদ্ধ করেছেন অশ্লীল চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে। এসব চলচ্চিত্রের নির্মাতাদের সঙ্গে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছিলেন।

‘আম্মাজান’ সিনেমায় ‘আম্মাজান, আম্মাজান, আপনি বড় মেহেরবান’ গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন প্রয়াত সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। কিন্তু এই গানের সঙ্গে ঠোঁট মিলিয়ে জনপ্রিয়তার চূড়া ছুঁয়েছিলেন মান্না। মান্না শুধু চলচ্চিত্র অভিনেতাই ছিলেন না, তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে যত ছবি প্রযোজনা করেছেন, প্রতিটি ছবি ব্যবসাসফল হয়েছিল। ছবিগুলো হচ্ছে ‘লুটতরাজ’, ‘লাল বাদশা’, ‘আব্বাজান’, ‘স্বামী-স্ত্রীর যুদ্ধ’, ‘দুই বধূ এক স্বামী’, ‘মনের সাথে যুদ্ধ’ ও ‘মান্না ভাই’। 

এক যুগ পরও মান্নার প্রতি ভক্তদের সেই হাহাকার আজও রয়ে গেছে। তবে সহকর্মীদের কাছে মান্না যেন হারিয়ে গেছেন। তাকে স্মরণ করে কোনো চলচ্চিত্র প্রদর্শনী আয়োজনের খবর শোনা যায়নি। এমনকি মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এফডিসিতে তাকে স্মরণ করে কোনো আলোচনা সভার উদ্যোগও নেয়া হয়নি। তবে কি বাংলা সিনেমায় অশ্লিলতা দূর করার এই অগ্রনায়কের নাম মুছে ফেলতে চায় এখনকার ঢালিউড?

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //