করোনাকালে তারকাদের মানবিকতা

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস আঘাত হানে। এরপর বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এ ভাইরাস। বাংলাদেশে এবছরের ৮ই মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। মার্চের শেষের দিকে করোনা সংক্রমণ রোধে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এর প্রভাব পড়ে বিনোদনজগতে। বন্ধ হয়ে যায় নাটক ও সিনেমার শুটিং। 

করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষেরা অর্থাৎ যারা দিন আনে দিন খায় তারা বেশি বিপাকে পড়েছেন। সেই সাথে বিপাকে পড়েছেন অল্প আয়ের শিল্পীরা, এফডিসির কর্মী ও মেকআপ শিল্পীরা। তাদের সাহায্য করতে করোনাকালে মহান হৃদয়ের পরিচয় দিয়েছেন অনেক চলচ্চিত্র অভিনেতা-অভিনেত্রী। 


করোনা পরিস্থিতির শুরুর দিকেই চিত্রনায়ক শাকিব খান তার ড্রাইভারসহ বাড়ির নিরাপত্তা কর্মীদের বেতন পরিশোধ করে ছুটিতে পাঠিয়েছেন। বড় ধরনের দুর্যোগ এলে সচ্ছল শিল্পীরা মিলে একত্র হয়ে একটা বড় তহবিল করা যেতে পারে বলে মনে করেছিলেন তিনি। ভেবেছিলেন অসহায় আত্মীয়দের সাহায্য করার ব্যাপারেও। এরপর অবশ্য তার আর কোনো সাহায্যের খবর গণমাধ্যমে আসেনি। 


চিত্রনায়িকা নিপুণ তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘টিউলিপ নেইলস অ্যান্ড স্পা’র কর্মীদের অগ্রিম বেতনসহ ছুটিতে পাঠিয়েছেন। এরপর বাজার করে দেয়াসহ বিভিন্নভাবে তাদের খোঁজ রেখেছেন তিনি। 

পুরো রমজানজুড়ে এফডিসির নিরাপত্তা কর্মীদের ইফতার দিয়েছেন নিপুণ। এফডিসিতে খাবার দিয়েছেন বাপ্পীও।

নিপুণ বিমান বন্দর থানার শতাধিক পুলিশের জন্য রমজান মাসে  পাঠিয়েছেন ইফতার। ইফতারের মেনুতে ছিলো পোলাও, মাংস, ডিম, চিকেন ও ফিন্নি। শবে বরাতের রাতে বনানী থানার ৭০ জন পুলিশের জন্য রান্না করে খাবার পাঠান নিপুণ।

এছাড়া রাজধানীর একটি বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দাদের জন্য এক মাসের খাবারের ব্যবস্থাও করেন তিনি।


করোনাকালে মহৎ হৃদয়ের পরিচয় দিয়েছেন ঢালিউড কুইনখ্যাত অপু বিশ্বাস। তিনি বসুন্ধরা এলাকায় কিছু কর্মজীবী অসহায় মানুষদের মাঝে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস ও ৫ দিনের খাবার বিতরণ করেন।

এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী কিছু কর্মজীবী মানুষদের সহায়তা করছি। বসুন্ধরা এলাকার কিছু মানুষদের জন্য ৫ দিনের খাবার ও প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিতরণ করেছি। আমার মতো আরো যারা আছেন কিংবা সমাজের বিত্তবানরা যদি এভাবে এগিয়ে আসেন তাহলে এই মানুষগুলো হয়তো একটু ভালো থাকবে এই দুঃসময়ে। ১ লক্ষ মানুষকে সহায়তা করতে না পারলেও কমপক্ষে ১ হাজার মানুষকে সহায়তা করুন। বিত্তবানদের প্রতি আমার এটা অনুরোধ থাকবে।


করোনায় অসহায় হয়ে পড়া ৫০০ পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী ও  নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দেয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন চিত্রনায়ক সায়মন সাদিক। অসচ্ছল মানুষদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন চাল, ডাল, আলু, পেয়াজ, তেল, লবণ ও সাবান। 

এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘আমার যতোটুকু সামর্থ্য আছে, তাকে পুঁজি করে আমার কাছের কিছু বড় ভাই এবং বন্ধুদের সহযোগিতায় চেষ্টা করেছি কিছু খেটে খাওয়া মানুষকে সহযোগিতা করার। আমার মতো আপনিও হয়তো একা পারবেন না, কিন্তু আপনারও তো কিছু কাছের ভাই ও বন্ধু আছেন। যাদের কল্যাণে আমাদের পাশের খেটে খাওয়া মানুষদের অন্তত ৪ থেকে ৫ দিনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও খাবারের ব্যবস্থা হবে’।


খুলনার মেয়ে পপি করোনায় অসহায়দের প্রতি দায়িত্ববোধ দেখিয়েছেন। নিজের এলাকার ১ হাজার ১০০ অসচ্ছল অসহায় মানুষের মাঝে চাল, ডাল, তেল, লবণ, আলু, সাবানসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করেছেন তিনি। এছাড়া করোনার শুরু থেকে সেখানেই অবস্থান করছেন পপি। যেকোনো পরিস্থিতিতে মানুষকে সাহায্য করছেন। 

করোনায় বিভিন্নভাবে আর্থিক সহায়তা দিয়ে মেকআপ শিল্পীদের পাশে থেকেছেন ফেরদৌস, পূর্ণিমা, আলমগীর, শিল্পী, ডিপজলসহ আরো অনেকে। ডিপজল অসহায় শিল্পীদেরও সাহায্য করেছেন গোপনে। এক লাখ টাকা অনুদান দিয়ে চিত্রগ্রাহকদের পাশে ছিলেন এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী কবরী। শিল্পী সমিতির পাশে দাঁড়িয়ছেন রোজিনাও। 

 

করোনাকালে সবচেয়ে বড় মনের পরিচয় দেন অনন্ত জলিল ও তার স্ত্রী বর্ষা। অবশ্য তিনি বরাবরই দুস্থদের সেবা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রে  দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির মাধ্যমে গত ২৭ মার্চ ২২০ জন বেকার শিল্পীর কাছে সহায়তা সামগ্রী হিসেবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্কসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য পৌঁছে দিয়েছেন। ২৯ মার্চ পরিচালক ও প্রযোজক সমিতির উদ্যোগে চলচ্চিত্রের আরো ২৬০ জন দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ান অনন্ত।

এরপর বর্ষার অনুরোধে অনন্ত জলিল গত ৩ এপ্রিল ঢাকার মোহাম্মদপুরে তাদের বাসার সামনে ৩৫০ মানুষের হাতে তুলে দিয়েছেন খাদ্য ও জীবাণুনাশকসামগ্রী।

৫ এপ্রিল বর্ষার দেশেরবাড়ি সিরাজগঞ্জে ১০০০ পরিবারের মধ্যে একইভাবে সামগ্রী বিতরণ করবেন তার স্ত্রী চিত্রনায়িকা বর্ষা।

এছাড়াও তিনি তার কারখানার এলাকা হেমায়েতপুরের একটি মসজিদে ৫ লাখ টাকা দান করেছেন। সেখানেও দিয়েছেন খাদ্যসামগ্রী। দুটি অসহায় পরিবারের মাসিক খরচও বহন করার দায়িত্ব নিয়েছেন অনন্ত।

শুধু তাই নয়, অনন্ত জলিল তার ভক্তদের ২৫ লাখ টাকা অনুদান দেন। প্রথমে ১০ লাখ টাকার ঘোষণা দিলেও পরবর্তীতে ইনবক্স ও ফেসবুক পেইজে ভক্তদের ব্যাপক সাড়া মিললে এ উদ্যোগ নেন তিনি। 


পুরো করোনার সময় ও সাধারণ ছুটির দিনগুলোতে মানুষের পাশাপাশি অসহায় হয়ে পড়েছিলো রাস্তার কুকুরগুলো। দুই বাংলার জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা জয়া আহসান নিজ হাতে রান্না করে কুকুরদের রোজ খাইয়েছেন। বরাবরই পশুদের জন্য মন কাঁদে তার। তাই করোনাকালে নগরীর দিলুরোড, ইস্কাটন গার্ডেন ও মগবাজার এলাকার বিভিন্ন স্থানে রোজ ২৭-৩০ টি কুকুরকে নিজ হাতে আহার দিয়েছেন জয়া।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //