জীবন হেলাফেলার বিষয় নয়: দেবাশীষ বিশ্বাস

জনপ্রিয় নির্মাতা ও উপস্থাপক দেবাশীষ বিশ্বাস। সম্প্রতি একটি বেসরকারি চ্যানেলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে তার পরিচালিত ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-২’।

তিনি ক্যারিয়ার ও মিডিয়ার বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন মোহাম্মদ তারেকের সাথে।

সম্প্রতি সিটি টিভিতে যুক্ত হলেন। অন্যান্য কাজের ব্যস্ততা নিয়ে কিছু বলুন?

আমরা এটিকে বলছি নেক্সট জেনারেশন টেলিভিশন। সাধারণত যে ধরনের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে তার বাইরে গিয়ে অনুষ্ঠান নির্মাণের চিন্তা-ভাবনা আছে। আপাতত ওয়েবে চালু হয়েছে। স্যাটেলাইটেও আসবে। তার আগে অ্যাপে চলে আসবে। বিটিভিতে ‘অল্প স্বল্প গল্প’ নামে একটি অনুষ্ঠান করছি। চ্যানেল নাইনে শিগগিরই দুটি অনুষ্ঠান চালু হচ্ছে। এশিয়ান টিভিতেও আমার চমৎকার একটি শো শুরু হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশে আগে কখনো হয়নি এমন বিষয়ে অনুষ্ঠান করছি। এছাড়াও নতুন চ্যানেল যারা আনছে, তাদেরও কাজের প্রস্তাব পাচ্ছি। সিটি টিভিতে করছি ‘দেবাশীষের গল্প’। আমার উপস্থাপক ও পরিচালক জীবনের একটা করে বিষয় নিয়ে প্রতিপর্বে আলোচনা করা হবে। পুরোটাই আমার অনুষ্ঠান। গোটা পাঁচেক ওয়েব ফিল্মের অফার আছে। সেখান থেকে বাছাই করে কয়েকটির কাজ শুরু হয়ে যাবে। 

ওটিটি প্ল্যাটফর্ম জনপ্রিয় হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কী ভবিষ্যৎ দেখছেন?

সময়ের সাথে চলতে হবে। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম মানুষ ঘরে বসে থাকার পর জনপ্রিয় হয়েছে। যখন সবকিছু চালু হয়ে যাবে তখন কী সমান জনপ্রিয়তা থাকবে? এটি প্রমাণ করার সময় এ প্ল্যাটফর্ম পায়নি। তারপরও বলা যায় ওটিটির আলাদা চাহিদা রয়েছে। মানুষ এ প্ল্যাটফর্মে বিশ্বাস রাখতে শুরু করেছে। 

ওটিটির কিছু কাজ নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?

কাজ করলে আলোচনা যেমন হবে, সমালোচনাও তেমনি হবে। আমাদের এখানে সমালোচনা হয়েছে কারণ যারা সমালোচিত কনটেন্টে অভিনয় করেছেন তাদের হয়তো দর্শক ওভাবে ভাবেননি। তাই আলোচনার থেকে সমালোচনা বেশি হয়েছে। আমাদের ধাক্কাটা বেশি লেগেছে কারণ আমরা তো অভ্যস্ত না। একটা পর্যায়ে হয়তো এটি স্থিতিশীল পর্যায়ে আসবে।

মানুষ ছোটপর্দায় সিনেমা দেখছে। সিনেমা হলের সংখ্যা কমছে। এ প্রসঙ্গে আপনার মন্তব্য কী?

মুদ্রার দুটি পিঠ থাকে। এটিকে অভিশাপ ও আশীর্বাদ বলা যায়। যারা বড়পর্দার জন্য সারাজীবন দিয়ে গেছে, তাদের জন্য এটি অভিশাপ। সিনেমা মানেই তো বড়পর্দা। এখন তো তিন রকমের পর্দা। মাঝারি পর্দা হয়েছে টেলিভিশন, আর ছোটপর্দা স্মার্টফোন। যেসব সিনেমা বড়পর্দার জন্য বানানো হয়েছে সেগুলো ছোটপর্দায় দেয়াটা হবে দুঃখজনক। এখন যারা ওটিটির জন্য বানাচ্ছেন তাদের জন্য আশীর্বাদ। 

‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-২’ ছবিটি কবে মুক্তি পেতে পারে? 

চলতি বছরই সিনেমাটি মুক্তি দেয়ার কথা ছিল। কর্তৃপক্ষ চাইলেই ওটিটিতে মুক্তি দিতে পারে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এ বছরই সিনেমাটি মুক্তির পক্ষপাতী নই। যদিও এ বিষয়ে প্রযোজনা সংস্থাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তবে আমি চাই সিনেমাটি আগামী বছর বড় পর্দায় মুক্তি পাক।

চলতি সময়ে উপস্থাপনার মান কেমন দেখছেন?

ঘরে বসে কাজ করলে উপস্থাপনার মান দিন দিন কমবে। এমন লোকজন এখন উপস্থাপনা করছে, যারা আগে কখনো উপস্থাপনা করেনি। উপস্থাপকের জায়গা হলো টেলিভিশনের পর্দায় কিংবা মঞ্চে। আমি দেবশীষ বিশ্বাসও ঘরে বসে উপস্থাপনা করলে ভালো হবে না। অনেকেই ঘরে বসে উপস্থাপনার প্রস্তাব দিয়েছে। আমি করব না। 

আপনি ‘পথের প্যাঁচালি’ করেছেন। ওটা আপনার সিগনেচার শো। এরকম সিগনেচার শো এখন আর হচ্ছে না কেন?

এখন দর্শক, উপস্থাপক, নির্মাতা সবাই অস্থির। আসলে উপস্থাপক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে গেলে একটা সিগনেচার শো লাগে। যা দিয়ে আজীবন মানুষ তাকে চিনবে। যেমন হানিফ সংকেতের ‘ইত্যাদি’, আবদুন নূর তুষারের ‘শুভেচ্ছা’, দেবাশীষ বিশ্বাসের ‘পথের প্যাঁচালি’ প্রভৃতি। এখন এমন অনুষ্ঠান হচ্ছে না, কারণ নির্মাতারা কারও ওপর নির্ভর করতে পারছে না। একটি অনুষ্ঠানকে টেনে নেয়ার ক্ষমতা উপস্থাপকের থাকতে হয়। সে ক্ষমতা এখনকার ছেলেমেয়েদের মাঝে নেই। আর দর্শকও এক জায়গায় স্থির থাকতে চায় না। এসব কারণে এমন শো আর হচ্ছে না।

যারা উপস্থাপনায় আসতে চায়, তাদের জন্য কী পরামর্শ থাকবে?

মাথায় নিতে হবে উপস্থাপনা অনেক কঠিন একটি শিল্প। এমন নয় যে, সহজে যে কেউ পারবে। উচ্চারণগত সমস্যা আছে অনেকের। বাংলা বললে পরিষ্কার বাংলা এবং ইংরেজি বললে শুদ্ধ ইংরেজি বলা উচিত। শুদ্ধচর্চা থাকতে হবে, পড়াশোনা জানতে হবে। 

আগামী নিয়ে কী প্রত্যাশা করছেন?

করোনা আমাদের শিখিয়েছে জীবন হেলাফেলার বিষয় নয়। আমিও শিখেছি। সে পথেই আগামীতে চলব।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //