ভিড়ের বাজারে মায়ের হাত ছেড়ে হারিয়ে যায় এক অদ্ভুত পাখির ডাক শুনে, যা আগে শোনা হয়ে উঠেনি কখনো তার। এই আবেশ করা হারানো সুর শুনে মুকুলের যেন মনে হয় এই সুর তার স্বপ্নমাঝে পাওয়া। ভিড়ের বাজারে শুনতে থাকা এই সুর মুকুলকে চুম্বকের মত টেনে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। এই সুর তৈরি করছেন এক অদ্ভুত যাদুকরবেশী চরকিওয়ালা (সাইফুল জার্নাল)।
বাতাসে দোল খেতে খেতে শহরের রাস্তার বাশির সুর গিয়ে মিলছে পুরনো শহরের অলিগলি-রাস্তা-জংলায়। জনমানবহীন গলি ধরে বাঁশি বাজিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন সেই রহস্যময় চরকিওয়ালা (সাইফুল জার্নাল)।
চরকিওয়ালার জাদুময় আকর্ষণে তার পিছু নিয়েছে ১০ বছরের মুকুল (চন্দ্রবিন্দু তোতা)। এক সময় চরকিওয়ালার পিছু পিছু মুকুলও শহর ছেড়ে দূরে কোথাও কোনো এক আশ্চর্য জগতের সন্ধান পায়। সেখান থেকে নানা দেশ, নানা মানুষ, প্রকৃতি-পরিবেশ ঘুরিয়ে মুকুলকে তার বাস্তবিক জীবনে ফিরিয়ে আনে একটি ঘোড়া। সেটিই হলো ‘মুকুলের যাদুর ঘোড়া’।
নির্মাতা দেবাশীষ দাস (ডুব) চরকিওয়ালা (সাইফুল জার্নাল) ও মুকুলকে (চন্দ্রবিন্দু তোতা) নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি-৩ মার্চ পর্যন্ত কুষ্টিয়া শহর ও জগতিতে এক রহস্যময় পৃথিবী ফ্রেম বন্দী করেছেন। এবার মুকুলের গন্তব্য ভাওয়াল গড়। যেখানে তার সঙ্গী হবেন খ্যাতিমান অভিনেতা আহমেদ রুবেল।
দেবাশীষের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের প্রায় আটটি ভিন্ন ভিন্ন লোকেশনে চিত্রায়ন করা হবে যার প্রথম লোকেশনের (কুষ্টিয়া) কাজ সদ্যই শেষ হলো। এই স্বল্পদৈর্ঘ্য শিশুতোষ চলচ্চিত্রে নাম ভূমিকায় অভিনয় করছেন শিশুশিল্পী চন্দ্রবিন্দু তোতা। জলের গান ব্যান্ডের রাহুল আনন্দ ও ডিজাইনার উর্মিলা শুক্লা দম্পতির একমাত্র সন্তান চন্দ্রবিন্দু তোতা। এছাড়া এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন অভিনেতা সাইফুল জার্নাল, আহমেদ রুবেল, রিফাত চৌধুরী, গাজী মাহতাব হাসান ও সাত্তার ফকির। নির্বাহী প্রযোজক এর দায়িত্বে আছেন ফজলে হাসান শিশির, পোশাক পরিকল্পনায় আছেন ঊর্মিলা শুক্লা। বাংলাদেশের শিশুতোষ চলচ্চিত্রও যেন বর্তমান প্রজন্মের শৈশবের মতো ইট, পাথর আর লোহার গ্রিলে বন্দী। শিশুতোষ চলচ্চিত্র এতোটাই পেছনে পড়ে আছে যে সেটিকে হাঁটতে না শেখা শিশুর মতোই মনে হয়। শিশুরা সবার। দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ তাদের ওপর নির্ভর করে। শিশুদের দেশীয় সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিষয়ে সচেতন করে তোলা দরকার বিভিন্ন সৃজনশীল প্রকাশের মধ্য দিয়ে যার অন্যতম মাধ্যম চলচ্চিত্র। সত্যি বলতে ছোটদের কথা মাথায় রেখে সেভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণ হয় কোথায়?
সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিল্ম স্টাডিস থেকে পড়াশোনা শেষ করে আসা ‘মুকুলের যাদুর ঘোড়া’ চলচ্চিত্রটির নির্বাহী প্রযোজক ফজলে হাসান শিশির জানান, চলচ্চিত্রটির নির্মাণ প্রক্রিয়ার অন্যতম উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে এর প্রস্তুতি পর্ব। প্রায় ছয় মাস ধরে নিরন্তর প্রি প্রোডাকশনের কাজ শেষ করে চলচ্চিত্রটির দৃশ্যধারণ পর্বের সূচনা হয়েছে, এবং চলচ্চিত্রটির নির্মাণ শ্রমিকদলের অক্লান্ত পরিশ্রমের কার্যকারণের নান্দনিক চলচ্চিত্রিক নিদর্শন অবশ্যই দর্শক অনুভব করবেন।
এছাড়াও চলচ্চিত্রটির সাথে সার্বিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্র ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের ছাত্র পার্বণ মাজহার ও ইকবাল হাসান খানসহ (সুস্ময়) আরো অনেক মেধাবী চলচ্চিত্র শিক্ষার্থী। চলচ্চিত্রটির সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে আছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের প্রাক্তনী সংসদের সাধারণ সম্পাদক রাজন তালুকদার। পুরো ‘মুকুলের যাদুর ঘোড়া’ চলচ্চিত্র নির্মাণ শ্রমিকদল বাংলাদেশে চলচ্চিত্র নির্মাণ, ভাবনা ও চর্চায় নতুন দিনের সূচনা করার স্বপ্ন দেখেন।
একটি রুচিশীল, সৃজনশীল আনন্দময় জগত উপহার দিতে মুকুল তার যাদুর ঘোড়ায় সাওয়ার হয়ে ঘুরে বেড়াবে বাংলাদেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক এবং ঐতিহ্যবাহী স্থানে। যার দৃশ্যায়ন আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে মানবতা, দায়িত্ববোধ, অন্য সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বাড়াতে সাহায্য করবে। ঘুরে বেড়ানোয় মুকুল (চন্দ্রবিন্দু তোতা) সঙ্গী হিসেবে পাবে উর্মিলা শুক্লা, আহমেদ রুবেল, সাইফুল জার্নাল, রিফাত চৌধুরীসহ আরো অনেককে। আশা করা যায় ‘মুকুলের যাদুর ঘোড়া’ এর মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্র শিশুতোষ চলচ্চিত্রের নতুন ভাষা খুঁজে পাবে।
এছাড়া চলচ্চিত্রটির নির্মাণে আরো কাজ করে যাচ্ছেন, নাযিম রনি, নাহার কৃপা, সুকান্ত পাল, নাজমুল হাসান সবুজ, রাদ আহমেদ ফুয়াদ, রাহাত নবী, নিয়াজ আজিজ দ্বীপ, মো. জাফর, দুলাল, অজিত দাস, হাসিবুল হাসান মিশা, রাসেল রানা দোজা ও মোহাম্মদ উজ্জ্বল খান। কুষ্টিয়া অংশের চলচ্চিত্রায়ণে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন কুষ্টিয়া শহরের থিয়েটার সংগঠক অধ্যাপক স্বপন মাহমুদ ও মোহাম্মদ আসলাম হোসেইন।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh