কান উৎসব। অফিসিয়াল সিলেকশন। আঁ সার্তে রিগা। আর কী লাগে! ছবিটির নায়িকা বাঁধন যতটা সরব ছিলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ততটাই আড়ালে ছিলেন ছবির পরিচালক আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ। কারও সঙ্গে ছবি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি; কিন্তু কেন? সাদ হয়তো চেয়েছিলেন ভিন্ন কিছু। সেই ভিন্ন কিছু এখন তার হাতে এসে ধরা দিয়েছে। রেহানা মরিয়ম নূরের ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারের পর কথা বলতে রাজি হলেন তিনি। নিজের আবেগের কথা জানালেন, উচ্ছ্বাসের কথা জানালেন। তিনি আগে চেয়েছিলেন মানুষ ছবিটি আগে দেখুক, তারপর তিনি কথা বলবেন।
নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে সাদ বলেন, ছবিটা দেখার পর কনভারসেশনটা অনেক মজার হয়। ছবি দেখার আগে বেশি কথা হয় অনুভূতি নিয়ে। এটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ কি-না, আমি জানি না। আমি এখনো নার্ভাস। আর অ্যাটেনশন হ্যান্ডেলিং করা আমার জন্য একটু কঠিন। আমার চেয়ে ছবিটাই বেশি অ্যাটেনশন পাক সেটিই চাই। তাই আমার কাছে মনে হয়েছে মিডিয়ার বাইরে থাকাই ভালো।
পর্দায় আসার আগে ছবিটি নিয়ে চিন্তায় ছিলেন আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ। নানাবিধ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল তার মনে, মানুষ ছবিটি গ্রহণ করবে কি-না? গল্প ভালো লাগবে কি-না? এরপর ছবিটি কান এ ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারের পর যে আবেগ উচ্ছ্বাস দেখেছেন, তাতে করে পরিচালকের কাছে অবিশ্বাস্য লেগেছে।
পালে দ্য ফেস্টিভালের সাল দুবুসিতে কান উৎসবের পরিচালক থিয়েরি ফ্রেমোর ডাকে মঞ্চে ওঠা, ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারের পর স্ট্যান্ডিং ওভেশন, বিভিন্ন দেশের আলোকচিত্রীদের সামনে ফটোকলে থাকা, সবকিছুই যেন স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল সাদের কাছে।
তিনি আরও জানালেন, এই অনুভূতি আসলে বলে বোঝানোর মতো না। আমি কখনো চিন্তাও করিনি আমরা এতদূর পর্যন্ত আসতে পারব। এখনকার প্রত্যেকটি পদে পদে যে অনুভূতি, অভিজ্ঞতা, যতটুকু পাওয়া সব জীবনের প্রথম। আর সব সম্ভব হয়েছে আমাদের টিমের কারণে। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।
সিনেমায় তার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে রঙের ব্যবহার। ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ সিনেমাটি ছিল পুরোটা সাদাকালো। আর এবার ব্যবহার করেছেন নীল রঙ। এর কারণ কী ব্যাখ্যা করে সাদ বলেন, আমরা যখন ছবিটির কালার-স্ক্রিন নিয়ে কথা বলছিলাম তখন আমাদের ভাবনা ছিল কীভাবে রেহানার চরিত্রটি ফুটে উঠবে, অনেক তথ্য না দিয়ে খুব সহজেই ফুটিয়ে তুলতে পারব। আলোচনার মাধ্যমে তখন এই নীল রঙটিকেই পছন্দ করি।
একজন পুরুষ নির্মাতা হয়ে নারীদের দৃষ্টিকোণ থেকে ছবিটির আঙ্গিক সাজানোর চ্যালেঞ্জে সফল হয়েছেন, এই সফলতার পেছনের গল্প তিনি বলেন, আমি আসলে কী চাই, কোন প্রশ্নগুলো তুলে আনতে চাই সেটাই মূল ব্যাপার। আমার কাছে যে স্ট্রাগল ছিল- আমি এমন কোন ছবি বানাতে চাই যেটি ফিগার আউট করা। সেটি করতে আমার দুই-আড়াই বছর সময় লেগেছে। একটা সময় এসে বাঁধন যখন যুক্ত হয়, ওর সঙ্গে আলোচনা করার পর আরও অনেক বিষয় উঠে এসেছে। শেষে যখন আমার কাছে মনে হয়েছে, এটি আমি বানাতে চাই তখন পুরোদমে কাজ শুরু করেছি।
বাঁধন সম্পর্কে সাদ বলেন, সে মনপ্রাণ দিয়ে কাজটি করেছে। তাকে যে সম্মানী দেওয়া হয়েছে সেটাও পর্যাপ্ত ছিল না। ও চেয়েছে সবকিছু বাদ দিয়ে আমাদের এই প্রজেক্টটি করবে। আমি অনেক খুশি ওর এই ত্যাগ শেষ পর্যন্ত সার্থক হয়েছে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh