বড়পুকুরিয়ায় কয়লা দুর্নীতি: সাবেক এমডিসহ তিনজন কারাগারে

দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলায় বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমেদসহ তিনজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। 

এছাড়া বাকি ২০ জনের জামিন মঞ্জুর করা হয়। দিনাজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আজিজ আহমদ ভুঞা এই আদেশ দেন।

এর আগে ৭ ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) ২৩ জন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। বাদী ও বিবাদীপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শুনে বিচারক ওই আদেশ দেন।

তাদের বিরুদ্ধে এক লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন কয়লা (যার আনুমানিক মূল্য ২৪৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা) আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। 

জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশভুক্ত অন্য দুই জন হলেন- ঘটনা ধরা পরার সময়কার মাইন অপারেশন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আবু তাহের মোহাম্মদ নুরুজ্জামান চৌধুরী ও স্টোর বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক একেএম খালেদুল ইসলাম।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দিনাজপুর জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের মামলা পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি কৌঁসুলি অ্যাড. এম. আমিনুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে মঙ্গলবার একই আদালতের বিচারক এই মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণের বিষয়ে শুনানি শেষে বিচারক মামলার অভিযোগপত্রের তালিকাভুক্ত বড়পুকুরিয়ার সাবেক ৭ এমডিসহ ২৩ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। এছাড়াও তদন্তে ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকায় তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদন অনুযায়ী পাঁচ কর্মকর্তাকে মামলা থেকে অব্যাহতির আদেশ দেন।

অভিযোগপত্রের তালিকায় রয়েছেন বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি প্রকল্পের সাবেক সাত এমডিসহ ২৩ জন আসামি। তারা হলেন- সাবেক এমডি মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ খান, প্রকৌশলী খুরশিদ আলম, প্রকৌশলী কামরুজ্জামান, মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান, প্রকৌশলী এসএম নুরুল আওরঙ্গজেব ও প্রকৌশলী হাবিব উদ্দীন আহমেদ।

এছাড়া সাবেক মহাব্যবস্থাপক (জিএম) শরিফুল আলম, আবুল কাশেম প্রধানিয়া, আবু তাহের মোহাম্মদ নুরুজ্জামান চৌধুরী, ব্যবস্থাপক মাসুদুর রহমান হাওলাদার, আরিফুর রহমান ও সৈয়দ ইমাম হাসান, উপ-ব্যবস্থাপক খলিলুর রহমান, মোর্শেদুজ্জামান, হাবিবুর রহমান, জাহিদুর রহমান, সহকারী ব্যবস্থাপক সতেন্ত্র নাথ বর্মন, মনিরুজ্জামান, কোল হ্যান্ডেলিং ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপক সোহেবুর রহমান, উপ-মহাব্যবস্থাপক একেএম খাদেমুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক অশোক কুমার হাওলাদার ও উপ-মহাব্যবস্থাপক জোবায়ের আলী আসামি রয়েছেন।

মামলার এজাহারে ১৯ জন আসামি ছিল। তদন্তে নয়জনের নাম যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি এজাহারনামীয় পাঁচজনকে আসামি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত এক লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭ দশমিক ৯২ মেট্রিক টন কয়লা চুরি হয় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে। যার আনুমানিক মূল্য ২৪৩ কোটি ২৮ লাখ ৮২ হাজার ৫০১ টাকা ৮৪ পয়সা। এই ঘটনায় দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে এবং কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। 

কয়লা গায়েবের ঘটনায় বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আনিসুর রহমান বাদী হয়ে গত বছর ২৪ জুলাই ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে পার্বতীপুর থানায় মামলা করেন। মামলাটি দুদকের তফশিলভুক্ত হওয়ায় দুদক কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়। পরে মামলাটি দুদকের উপ-পরিচালক সামসুল আলম তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে তদন্ত করেন। 

গত ২৪ জুলাই মামলাটির অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়। আসামিরা দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়। এই অভিযোগপত্রে এজাহার নামীয় ছাড়াও নয়জনকে যুক্ত করা হয় এবং তদন্তে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না থাকায় পাঁচজনকে আসামি থেকে বাদ দেয়ার কথা বলা হয়।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //