ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘর্ষে পা হারানো সেই মোবারক মারা গেছে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের সংঘর্ষে পা হারানো মোবারক মিয়া (৪৫) মারা গেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) দেড়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন এ খবর নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় জানা গেছে, ১২ এপ্রিল আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের থানাকান্দি গ্রামে কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান ও গ্রামের সর্দার আবু কাউসার মোল্লার পক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের দিন ধারালো অস্ত্র দিয়ে মোবারকের বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচে গোড়ালির ওপরের অংশ কুপিয়ে বিচ্ছিন্ন করে প্রতিপক্ষ কাউসার মোল্লার পক্ষের লোকজন গ্রামে আনন্দ মিছিল করে।

মোবারক চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমানের পক্ষের গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি কৃষ্ণনগর গ্রামের মৃত মধু মিয়ার ছেলে। ঢাকায় রিকশা চালাতেন। করোনা পরিস্থিতি কারণে তিনি ঢাকা থেকে গ্রামে চলে আসেন। 

সংঘর্ষের ঘটনায় দুই পক্ষের প্রধান হোতা ইউপির চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান, আবু কাউসার মোল্লাসহ ৪৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে পা কেটে নিয়ে যাওয়া যুবককে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

মোবারকের পরিবারের সদস্যরা জানায়, সন্ত্রাসীরা মোবারককে গুরুতর আহত করার পর সে চার দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে মারা গেছেন।

মোবারকের স্ত্রী সাবিয়া আক্তার বলেন, ঢাকায় রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন মোবারক। করোনা পরিস্থিতির কারণে তিনি বাড়িতে চলে আসেন। গ্রামে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন তিনি। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি।

তার সামনেই তাকে মাটিতে শুইয়ে কোপানো হয় উল্লেখ করে তিনি অভিযোগ করেন, সেসময় ঘটনার অদূরে থাকা পুলিশ সদস্যদের কাছে সাহায্য চাইলেও কোনো সাড়া দেয়নি তারা। মোবারক গ্রামের কোনো দাঙ্গা-হাঙ্গামার সাথে জড়িত ছিলেন না। ঢাকায় তার জন্ম ও বেড়ে উঠা। এমনকী, তিনি বিয়েও করেছেন ঢাকায়। অথচ গ্রাম্য দলাদলির জেরে তাকে জীবন দিতে হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পু্লিশ সুপার মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় মোট ৪৩ জনকে আটক করা হয়েছে। সংঘর্ষের প্রধান দুই অভিযুক্ত কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান ও থানাকান্দি গ্রামের সর্দার আবু কাউসার মোল্লাকেও আটকের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সংঘর্ষের পর এক ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, আনুমানিক ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সী এক যুবক মোবারকের পায়ের কাটা অংশ নিয়ে উল্লাস করে গ্রামে হেঁটে যাচ্ছেন। তার সাথে এক নারীও হেঁটে যাচ্ছেন। সে সময় ওই যুবকের পেছনে পেছনে ছোট শিশুদের চলতে দেখা গেছে। আর যুবক থেকে বড় ব্যক্তিরা হাতে লাঠি নিয়ে মিছিল করছেন। মোবারকের পায়ের কাটা অংশ নিয়ে হেঁটে যাওয়া ওই যুবকসহ বাকিদের ‘জয় বাংলা’ বলে স্লোগান দিতেও দেখা গেছে।

এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমানের সাথে কাউসার মোল্লার দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। চলমান এ বিরোধের জেরে গত রবিবার উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। থেমে থেমে চলা এ সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //