যেভাবে ৪৬তম দিনেও করোনামুক্ত খাগড়াছড়ি

দেশে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজার ৬৮৯ জন। মারা গেছে ১৩১ জন। দেশে প্রথম ৮ মার্চ করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর পার হয়েছে ৪৬ দিন ।

প্রতিদিন হু হু করে বাড়ছে কভিট-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা। তবে এখনো করোনা মু্ক্ত রয়েছে পাহাড়ি জনপদ খাগড়াছড়ি। আট লাখ মানুষের এই জেলার সাথে লাগোয়া চট্টগ্রাম। সেখানে আক্রান্ত সংখ্যা বাড়লেও খাগড়াছড়িতে করোনা হানা দিতে পারেনি। স্থানীয়দের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ, স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের তত্পরতায় এখনো স্বস্তিতে রয়েছে এই জেলার মানুষ ।

তবে করোনামুক্ত থাকার জন্য সচেতনতার উপর জোর দিয়েছে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

জেলায় করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে স্থানীয় জনগোষ্ঠী। নিজেরায় তৈরি করেছে কোয়ারেন্টিন। সাধারণত লোকালয় থেকে দূরে বাঁশ ছন কাঠ দিয়ে বানিয়েছে মাচা ঘর। এসব ঘরে থাকছে বিভিন্ন জেলা ফেরতরা। এমন কি হোম বা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে যেতে তাদের কোন অনীহা নেই। ব্যক্তি ও পারিবারিক সচেতনতার কারণে এখন পর্যন্ত জেলায় কেউ করোনা আক্রান্ত হয়নি।

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার  উদালবাগান উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ৮০ জন। সেখানে সুযোগ সুবিধার অভাব থাকলেও কারো মধ্যে কোয়ারেন্টিন শেষ না করে বাড়ি ফেরার প্রবলতা দেখা যায়নি।

গাজীপুর ফেরত এক শ্রমিক জানান, আমি বাড়ি গেলে পরিবারের লোকজন ঝুঁকিতে পরবে। এখানে ১৪ দিন থাকার পর বাড়ি যাব। বাবা এসে প্রতিদিন খাবার দিয়ে যাচ্ছে। থাকা খাওয়ায় একটু কষ্ট হলেও সবাই হাসি মুখে তা মেনে নিচ্ছে।

কোয়ারেন্টিনে থাকা কয়েকজন শ্রমিকের সাথে কথা বললে তারাও একই ধরনের মনোভাব জানায়। নিজেরায় যতটুকু সম্ভব সচেতনতা মেনে চলছে।

উদালবাগান স্কুলে কোয়ারেন্টিনে থাকা ছেলের জন্য খাবার নিয়ে এসেছে এক অভিভাবক। তিনি জানান, ১৪ তিন শেষ হওয়ার পর আরো তিনদিন এখানে রাখব। এর আগে তাকে বাড়িতে আনব না। ঘরে ঢুকার আগে ভালো করে ডেটল পানি দিয়ে গোসল করাব। 

এছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে বন জঙ্গলে ঘর করে বাড়ির বাইরে থাকছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলা ফেরতরা।

বর্তমানে জেলার শতাধিক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছে প্রায় ২০৬১ জন। তাদের কোয়ারেন্টিনে দেখাশোনা করছে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা। যেখানে পরিবার বা স্বজনরা খাবার দিতে পারছে না, তাদের খাবার দিচ্ছে জন প্রতিনিধিরা।

জেলার সিভিল সার্জন নূপুর কান্তি দাশ জানান, খাগড়াছড়ি এখনো করোনা মুক্ত। মূলত এর জন্য আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছি। যারা বাইরে থেকে ফিরেছে তাদেরকে আমরা কোয়ারেন্টিনে রাখতে পেরেছি। এখানকার স্থানীয় জনগোষ্ঠী খুবই সচেতন। তারা নিজেরায় বিভিন্ন জেলা থেকে আসাদের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করেছে। অন্য জেলায় কোয়ারেন্টিন থেকে অনেকে পালাতে চায়, তবে পাহাড়ে ভিন্ন চিত্র। পাহাড়ি বনে মাচা বানিয়ে বহিরাগতরা সেখানে রাখছে। এ সময় তিনি সবাইকে সচেতন ও সর্তক থাকার হওয়ার আহ্বান জানান।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, খাগড়াছড়ির স্থানীয় জনগোষ্ঠীগুলো বেশ সচেতন। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে যারা বিভিন্ন জেলা থেকে খাগড়াছড়ি প্রবেশ করেছে স্থানীয় প্রশাসন তাদের নাম ঠিকানা লিপিবদ্ধ করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তাদের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করেছে।

এছাড়া পাহাড়ি জনগোষ্ঠী অনেকে লোকালয় থেকে দূরে মাচা ঘর বানিয়ে বিভিন্ন জেলা ফেরতদের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করেছে। মানুষ সচেতন হওয়ায় দেশে যে কয়েকটা জেলা করোনামুক্ত তার মধ্যে খাগড়াছড়িও রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, মানুষকে ঘরে রাখার জন্য বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এই পর্যন্ত ৭ শতাধিক মানুষকে জরিমানা করা হয়েছে।

এছাড়া প্রায় এক মাস ধরে খাগড়াছড়ি শহরের প্রবেশ মুখে জিরো মাইল এলাকা দিয়ে প্রবেশকারী সকল যানবাহন ও ব্যক্তির শরীরে জীবাণুনাশক  স্প্রে করে খাগড়াছড়ি স্বেচ্ছাসেবী করোনা সচেতনতা ও প্রতিরোধ টিম।

জেলার দীঘিনালায় একই ধরনের কার্যক্রম হাতে নেয় যুব রেড ক্রিসেন্ট। দীঘিনালার বাঙালি পাড়ায় স্থাপিত চেকপোস্টে বিভিন্ন জেলা থেকে আগতদের পরিচয় লিপিবদ্ধ করে। তাদের সবার কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে উপজেলায় প্রায় ৪১টি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র খোলা হয় ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //