স্বেচ্ছাশ্রমে করোনার প্রভাব কাটিয়ে উঠছে কৃষকেরা

দেশের হাওরাঞ্চলে এখন পুরোদমে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। প্রতি বছর ধান কাটাকে ঘিরে মুখরিত হয়ে পড়ে পুরো হাওরাঞ্চল। দেশে বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে হাজার হাজার শ্রমিক ধান কাটতে হাওরে ছুটে আসেন। কিন্তু এবার সেখানে শ্রমিক আসছেন না। করোনাভাইরাসের কারণে শ্রমিক না আসায় পাকা বোরো ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এখানকার কৃষক। মাঠের পর মাঠ সোনালী রং ধারণ করেছে। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষক সে ধান কাটতে পারছে না।

এ নিয়ে পুরো হাওরের কৃষকরা যখন দুশ্চিন্তায়, তখন স্থানীয় সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক হাওরের কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ধান কাটায় নেমে পড়েছেন। দলীয় নেতাকর্মীদেরকে নিয়ে প্রতিদিন কোনো না কোনো এলাকার কৃষকদের ধান কেটে দিচ্ছেন তিনি। ইতোমধ্যে ১৫শ’ কাস্তে সংগ্রহ করেছেন। প্রতি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে নিয়ে ৫০ সদস্যের টিম গঠন করেছেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগের হাজারো নেতাকর্মীরা রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের আহবানে সাড়া দিয়ে ধান কাটতে মাঠে নেমেছেন।

করোনাভাইরাসের এই সময়ে বোরো ধান কাটতে প্রথম থেকেই শ্রমিক সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছিল। তবে কৃষকরা বলছেন, শ্রমিক সংকট এখনো তেমন প্রকট নয়। এছাড়া ধান কাটায় সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছে স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতারা। ব্যবহৃত হচ্ছে আধুনিক যন্ত্রপাতিও। তবে এখন আশঙ্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে আগাম ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস। এজন্য হাওরে মাইকিং করে পাকা ধান কেটে ফেলতে বলছে স্থানীয় প্রশাসন। হাওরাঞ্চলের একাধিক কৃষক ও কৃষি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের তথ্য অনুযায়ী, হাওরের সাত জেলায় এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩৫ হাজার হেক্টর। তবে বোরোর আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২০ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে, যা মোট আবাদি জমির ৯ শতাংশ।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। ধানের দামও পাওয়া যাচ্ছে। ৭০০ থেকে ৮৫০ টাকা মণে ধান বিক্রি হচ্ছে। ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় কোনো কোনো কৃষক এবারের ফলনে খুশি হওয়ার কথা জানিয়েছেন। আর মাঠের ফসল ঘরে তুলতে কৃষকরা এখন মহা ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার কৃষক আবু সালেক বলেন, সপ্তাহ খানেক ধরে ধান কাটা শুরু হয়েছে। ভালো হয়েছে ফলনও। শ্রমিকের সংকট নেই। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, কাজের লোক এখন সব গ্রামে রয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে যারা থাকত, তারা এখন গ্রামে। তারাই এখন ধান কাটছে। বরং অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার শ্রমিকের মজুরি কম।

তিনি আরো বলেন, এবার এক কানি জমি কাটাতে ৪ হাজার টাকা নিচ্ছে। অন্য বছর তা ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়ে কাটিয়েছি। আর পাকা ধান দ্রুত কেটে ফেলতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। বাজারে ধানের দামও বেশি রয়েছে। ৮২০ টাকা মণে বিক্রি করছি।


তবে একই উপজেলার আরেক কৃষক রনি ভূঁইয়া বলেন, এবার ২০ একর (১০০ শতাংশে এক একর)  জমিতে ধান করেছি। আগামীকাল থেকে ধান কাটা শুরু হবে। গ্রামে শ্রমিক সংকট রয়েছে। বাইরের শ্রমিকরা আসছে না। এলাকার লোক দিয়ে ধান কাটাতে বেশি টাকা লাগছে। আগে প্রতি একর জমির ধান ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায় কাটাতে পারলেও এখন খরচ হচ্ছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা।

কিশোরগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, করোনাভাইরাসের দুর্যোগ কাটানোর জন্য আমি ফেসবুকে একটি স্টেটাস দিয়েছিলাম যে ছাত্রলীগকে এই দুর্যোগ মোকাবেলায় কৃষকের পাশে থেকে ধান কাটতে হবে তাদের সাথে থাকবো আমি। স্টেটাসটি দেখে আমার হাওর উপজেলাগুলোতে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগের নেতা কর্মীরা এগিয়ে এসেছে ধান কাটার জন্য, এইজন্য আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। সেই সাথে তিনি পূর্বের ন্যায় বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলায় হাওরবাসীর পাশে রয়েছেন বলেও জানান।

কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক ছাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, কৃষকের সংকট কাটাতে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ৬১টি যন্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছে।

এবার কিশোরগঞ্জের ১৩টি উপজেলায় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৭শ’ ১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওর এলাকাতেই ১ লাখ ৩ হাজার চারশত ৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ লাখ ৭৮ হাজার ২শ’ ৮৬ মেট্রিকটন ধান।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //