বাঁধ ভেঙে ডুবে গেলো কৃষকের পাকা ধান

পাবনার বেড়া উপজেলার রূপপুর ইউনিয়নে ঘোপশিলোন্দায় যমুনা নদীর তীরবর্তি একটি বাঁধ ভেঙে আটটি গ্রামের প্রায় তিনশত বিঘার জমির ধান পানিতে ডুবে গেছে। ডুবে যাওয়া পাকা আধপাকা ধান নিয়ে কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ধান কাটার জন্য কৃষকেরা শ্রমিক না পেয়ে অনেকে ধান কাটাতে পারছে না। ফলে পানির নিচে পরে ধানগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিন যমুনা নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির ফলে রূপপুর ইউনিয়নের ঘোপশিলেন্দা গ্রামের ১২০মিটার অংশে ভাঙন দেখা দিলে গ্রামবাসী পাউবো কর্তৃপক্ষকে জানান।

পাউবো কর্তৃপক্ষ কোন কর্ণপাত না করলে এলাকাবাসি মিলে যমুনা নদীর তীরবর্তি ঘোপশিলোন্দায় একটি জোলার মুখের বাঁধ দিয়ে পানি আকটিয়ে রাখে। যাতে জোলা দিয়ে পানি ঢুকে মাঠের ধান, তিল, পাটসহ অন্যান্য ফসল পানিতে তলিয়ে না যায়।

যমুনা নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির ফলে শনিবার (৩০ মে) বিকেলে হঠাৎ করে জোলার মুখের বাঁধটি ভেঙে যায়। মুহূর্তের মধ্যে পানি ঢুকে জমিগুলোর ধান তিল, পাট পানিতে তলিয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শিরা জানান, ঘোপশিলোন্দায় একটি জোলার মুখের বাঁধ ভেঙে প্রবল বেগে পানি ঢুকে প্রতাপপুর, রানীগ্রাম, রঘুনাথপুর, রাজ্জাকপুর, কৃষ্ণপুর, ঘোপসেলোন্দাসহ আটটি গ্রামের প্রায় তিনশত বিঘার জমির ধান, পাট তিল পানিতে তলিয়ে গেছে।

প্রতাপপুর গ্রামের কৃষক আতোয়ার আলী শেখ (৬৫) জানান, তিনি এ মাঠে ছয় বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছিল। গত শনিবার জোলার মুখের বাঁধ ভেঙ্গে তার সমস্ত জমির ধান তলিয়ে গেছে। শ্রমিকের অভাবে ধানগুলো কেটে বাড়িতে আনতে পারলাম না। আমাদের সব শেষ হয়ে গেলো।

রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, এ মাঠে আমার প্রজেক্টে নিজের ৫ বিঘাসহ ১৮ বিঘা জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেল চোখের পলকে। কিন্তু শ্রমিকের অভাবে ধানগুলো কাটতে পারলাম না। এবছর ছেলে সন্তান নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করতে হবে।

কৃষক রফিকুল ইসলাম, আজিজুল হক, জয়াদ আলী, মানিক মিয়াসহ অনেকেই আহাজারি করে বলেন, ভাই এত কষ্টে ফলানো ধানগুলো চোখের পলকে মুহূর্তের মধ্যে পানিতে তলিয়ে গেল। ধান কাটার জন্য একটা শ্রমিক ৭শ থেকে ৮শ টাকা দিয়ে পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া ডুবে যাওয়া ধানগুলো কেটে শ্রমিকের টাকাই যোগার হবে না। এ ছাড়া কাচা তিল, পাট পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে।

ঘোপশিলেন্দা গ্রামের (চার নম্বর ওয়ার্ড) স্থানীয় ইউপি সদস্য আমিরুল ইসলাম বলেন, যমুনা নদীতে অস্বাভিক পানি বৃদ্ধির ফলে শনিবার (৩০ মে) হঠাৎ করে জোলার মুখের বাঁধটি ভেঙ্গে আট-দশটি গ্রামের কৃষকের প্রায় তিনশত বিঘা জমির ধান পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে।

তিনি বলেন, একদিকে নদী ভাঙ্গন অন্য দিকে পানিতে তলিয়ে ফসল নষ্ট হওয়ায় অনেকে নাওয়া খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে বেড়া উপজেলা কৃষি অফিসার মসকর আলী জানান, গতকাল রোববার (৩১মে) সকালে ডুবে যাওয়া এলাকার পরিদর্শন করেছি। তা ছাড়া ক্ষতির পরিমাণ ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা করা হচ্ছে। পরবর্তিতে সরকারি কোন সহযোগিতা এলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকে দেওয়া হবে।