পাবনার চরাঞ্চলে রাসেল ভাইপারের উপদ্রব

পাবনায় বিষধর রাসেল ভাইপার সাপের উপদ্রব শুরু হয়েছে। পদ্মার চরের ফসলের মাঠ, ঝোপ ঝাড় এমনকি বসতবাড়িতেও দেখা মিলছে বিষাক্ত এ সাপটির। প্রতিষেধকের সহজলভ্যতা না থাকায়, আসন্ন বর্ষা মৌসুম সামনে রেখে চরাঞ্চলের মানুষকে সতর্ক করার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।

বন্য প্রাণী গবেষকরা জানান, রাসেল ভাইপার, বাংলাদেশে চন্দ্রবোড়া নামে পরিচিত। এটি ভাইপারিডি পরিবারভুক্ত মারাত্মক বিষধর সাপ। আন্তর্জাতিক বন্য প্রাণী সংস্থার বিলুপ্তির তালিকায় থাকলেও পদ্মা নদী বেষ্টিত বরেন্দ্র অঞ্চলে দেখা মিলেছে গত কয়েক বছর ধরেই। সম্প্রতি পাবনার পদ্মা তীরবর্তী চরগুলোতেও প্রায়শই দেখা মিলেছে কিলিং মেশিন খ্যাত রাসেল ভাইপারের। সাধারণত মানুষের উপস্থিতিতে অন্যান্য সাপের সরে যাওয়ার প্রবণতা থাকলেও রাসেল ভাইপারের আচরণ আগ্রাসী ও আক্রমণাত্মক।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত শনিবার রাতে ঈশ্বরদী উপজেলার সাড়া ইউনিয়নের মাঝদিয়া বড় পাড়া গ্রামের সেলিনা খাতুন নিজ ঘরেই সাপের কামড়ের শিকার হন। পরিবারের লোকজন আগ্রাসী প্রকৃতির সাপটিকে মেরে রোগীর সাথেই নিয়ে আসেন পাবনা জেনারেল হাসপাতালে। চিকিৎসকরা প্রথমে সাপটিকে চিনতে না পারলেও পরিবেশবিদদের সহায়তায় নিশ্চিত হন সাপটি রাসেল ভাইপার। তবে কামড়ের শিকার হলেও সৌভাগ্যক্রমে সেলিনার শরীরে বিষ প্রয়োগ করতে পারেনি বলেই ধারণা চিকিৎসকদের।

সেলিনা খাতুনের ছেলে আশিক ইসলাম জানান, মাগরিবের নামাজের পর মাকে সাপে কাটার খবর পেয়ে বাড়িতে এসে প্রায় চার ফুট লম্বা সাপটিকে দেখতে পাই। সাপসহ মাকে নিয়ে হাসপাতালে আসার পর জানতে পারি এটি চন্দ্রবোড়া বা রাসেল ভাইপার।  মা আপাতত ভালো আছেন, তবে চিকিৎসকরা তাকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট আবু সালেহ মোহাম্মদ জানান, সেলিনা খাতুনকে রাসেল ভাইপার কামড়ানোর বিষয়টি আমরা নিশ্চিত হয়েছি। রাসেল ভাইপারের বিষক্রিয়ায় অনেক সময় প্রচলিত এন্টিভেনম কাজ করেনা। সঠিক চিকিৎসা না পেলে রোগীকে বাঁচানো এক প্রকার অসম্ভব। তবে সেলিনা খাতুনের শরীরে এখনই বিষক্রিয়ার কোনো উপসর্গ না দেখা দেয়ায় তাকে শংকামুক্ত বলেই ধারণা হচ্ছে। তবে রাসেল ভাইপারের ক্ষেত্রে দংশনের সাতদিন পড়েও বিষক্রিয়া শুরু হবার ইতিহাস রয়েছে। তাই আমরা তাকে পর্যবেক্ষণে রেখেছি।

এদিকে কেবল ঈশ্বরদীতেই নয়, গত একমাসের মধ্যে সদর ও সুজানগর উপজেলার পদ্মা পাড়ের চরগুলিতেও একাধিকবার দেখা মিলেছে বিশ্বে বিষাক্ততায় পঞ্চম ও ক্ষিপ্ততার তালিকায় প্রথমে থাকা এই সাপটির। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে বিশেষজ্ঞ দল। লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়ায় বর্ষা মৌসুম সামনে রেখে সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ তাদের।

পাবনা নেচার অ্যান্ড ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন কমিউনিটিরসহ সভাপতি সুপ্রতাপ চাকী বলেন, আক্রমণে সবচেয়ে বেশি মারা যায় কৃষক। সবচেয়ে বেশি আক্রমণ হয়েছে ধানক্ষেতে। তবে সাধারণত ঝোপ-ঝাড়, শুকনা গাছের গুঁড়ি, ডাব গাছের নিচে, গোয়াল ঘরে এ সাপ থাকতে বেশি পছন্দ করে। প্রকৃতির প্রয়োজনেই সাপকে বেঁচে থাকতে দিতে হবে। তবে যেহেতু পদ্মার চরে কৃষকরা চাষাবাদ করেন, তাই তাদের সতর্ক করা প্রয়োজন। গতমাসেও পাবনার চর কোমরপুরে এ সাপের দেখা মেলে। তাতেই বুঝা যাচ্ছে এ এলাকাগুলোতে এ সাপ আরও আছে।

এবিষয়ে পাবনা মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কাজী মহিউদ্দিন জানান, বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এর মধ্যে সর্প দংশন অন্যতম। যেহেতু রাসেল ভাইপার মারাত্মক বিষধর ও এন্টিভেনম সহজলভ্য নয়, সে কারণে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ ও শনাক্তকরণের জন্য জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা মৃত রাসেল ভাইপারটিকে পামেক ল্যাবে রাখা হয়েছে। এর আচরণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে তরুণ চিকিৎসকদের ধারণা দেয়া হবে।

পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ জানান, স্থানীয়দের সতর্ক করতে জেলা প্রশাসনের বিশেষজ্ঞ দল পদ্মার চরগুলোতে কাজ শুরু করেছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় চরাঞ্চলের চাষিদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তায় গামবুটসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ দেয়া হবে। পাশাপাশি চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখতে স্বাস্থ্য বিভাগকে বলা হয়েছে।

২০১৩ সাল থেকে বরেন্দ্র অঞ্চলে কয়েকশ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে রাসেল ভাইপারের দংশনে। অনুকূল পরিবেশের কারণে পদ্মাপাড়ের চরগুলোতে দ্রুত বিস্তার ঘটছে বলেও মত বিশেষজ্ঞদের।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //