করোনা কাড়লো লিচু চাষিদের হাসি

ঠাকুরগাঁওয়ে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে বাজারে লিচুর তেমন একটা দাম না থাকায় দেখা দিয়েছে শঙ্কা। এ ছাড়া করোনার প্রভাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জেলার বড় বড় ব্যবসায়ীরা এখনো লিচু কেনার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তাই লিচুর বাগান মালিকরা পড়েছেন বিপাকে। 

এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত বাগান মালিকরা সরকারের সহযোগীতা কামনা করছেন। এ দাবীর প্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্ত বাগান মালিকদের সরকার ঘোষিত প্রণোদনার আওতায় আনা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন জেলা কৃষি বিভাগ।

ঠাকুরগাঁওয়ের প্রায় প্রতিটি বাগানেই এ বছর লিচুর ফলন হয়েছে অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। গাছে গাছে মিষ্টি ও রসালো স্বাদের বেদানা, বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না-থ্রি লিচু। অনেক বাগানে এরই মধ্যে লিচু পাড়তে শুরু করেছেন বাগান মালিকরা। তবে লিচুর বাম্পার ফলন হলেও হাসি নেই বাগান মালিকদের মুখে। এ বছর দাম পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।

সদর উপজেলা গোবিন্দনগর এলাকার বাগান মালিক জাহাঙ্গীর আলম ও দুলাল মিয়া জানান, মৌসুমি ফল লিচু বিক্রি করে যে আয় হয় তা দিয়েই সারা বছরের খরচ চলে তাদের। তাই সারা বছর বাগান পরিচর্যা, পোকা দমনে কীটনাশক, সেচসহ অনেক খরচ ব্যায় করতে হয় তাদের এ বছর তার ব্যাতিক্রম হয় নাই। লকডাউনে গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় বাইরের জেলার পাইকাররা কেউ আসতে পারেনি, তাই বাগান বিক্রি হয়নি। করোনাভাইরাসের প্রভাবে স্থানীয় বাজারেও লিচুর তেমন চাহিদা নেই।

পীরগঞ্জ লোহাগাড়া এলাকার লিচু বাগান মালিক সাদ্দাম হোসেন জানান, তার  বিভিন্ন জাতের ৯০টি লিচু গাছ রয়েছে। এ বছর প্রতিটি গাছে বেশ ভালো লিচুর ফলন হয়েছে। গত বছর ওই একই বাগান থেকে ৪ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছিলেন তিনি। কিন্তু এ বছর লিচুর স্থানীয় বাজারে ক্রেতা অনেক কম।


মুন্সিরহাট আদিবাসী এলাকার লিচু বাগান মালিক মাইকেল টুডু জানান, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রকোপে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার বড় বড় ব্যবসায়ীরা এখনো লিচু কেনার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তাই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। গতবছর প্রতিহাজার লিচু পাইকারি বিক্রি হয়েছিলো ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকায়। কিন্তু এ বছর সেই লিচুর দাম নেমে এসেছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। এদিকে সময়মতো লিচু বাজারজাত করা না গেলে এ লিচু গাছেই পঁচে যাবে।

এ বছর জেলার ৩ হাজার হেক্টর জমির লিচুর বাগানে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর ২ হাজার ৯০০ হেক্টর জমির লিচুর বাগানে উৎপাদন হয়েছিলো ১৮ হাজার মেট্রিক টন।

ঠাকুরগাঁও চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক ও বাগান মালিক সমিতির আহ্বায়ক মামুনুর রশিদ জানান, এ বছর জেলার ছোট বড় প্রায় তিন হাজার বাগান মালিক করোনার প্রভাবের কারণে লিচুতে লাভ করতে পারবেন না। বাগানিরা প্রনোদণার দাবি করেছেন। জেলা বাগান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে শিগগিরই স্বারকলিপি প্রদান করা হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আফতাব হোসেন বলেন, ভালো ফলন পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা চাষিদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ফলে প্রতিবছর জেলায় লিচু চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেকেই নতুন নতুন বাগান করছেন। এতে জেলায় লিচু চাষ প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাগান মালিকরা কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে বিশেষ নজর রয়েছে। এবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বাগান মালিকদের তালিকা তৈরি করে তাদের সরকারি প্রণোদনাসহ সকল সহায়তা প্রদান করা হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //