শরণখোলায় একমাস ধরে পানিবন্দি তিন শতাধিক পরিবার

একমাস ধরে পানিবন্দি অবস্থায় দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার তিন শতাধিক পরিবার। ঘূর্ণিঝড় আমফান ও বৃষ্টির পানিতে শরণখোলা উপজেলা সদরের রায়েন্দা বাজার ও আশপাশের বসাবসকারী পরিবারগুলো একমাস ধরে পানিবন্দি রয়েছেন। ফলে রান্নাও বন্ধ রয়েছে অনেক পরিবারের। অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে পানিবন্দি মানুষগুলো। ঘর থেকে বের হলেই দূষিত পানি-কাঁদা। জরুরি প্রয়োজনে দূষিত পানি ও কাঁদা মাড়িয়ে যেতে হয় বাইরে। 

আমফান পরবর্তী বৃষ্টির পানিতে ওই এলাকা তলিয়ে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের নির্মাণাধীন রায়েন্দা বাজার রক্ষাবাধের আটটি ড্রেন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় ওই পানি আর নামতে পারেনি। যার ফলে প্রায় একমাস ধরে পানিবন্দি রয়েছে উপজেলা সদরের রায়েন্দা বাজার ও আশপাশের বসাবসকারী পরিবারগুলো। ফলে নানা ধরনের শারীরিক, মানসিক, আর্থিক ও সামাজিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে পানিবন্দি পরিবারগুলো।

ওই এলাকার শিক্ষক ওমর ফারুক, কাঠ ব্যবসায়ী খলিল খান, শহিদুল খান, ফারুক খান, রহিমন বেগম বলেন, আমরা রায়েন্দা সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পিছন থেকে সরকারি খাদ্যগুদাম পর্যন্ত প্রায় তিনশ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছি। নারী ও শিশুরা গৃহবন্দি অবস্থায় আছে। কাঁচা টয়লেট ডুবে যাওয়ায় দুর্গন্ধ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকায় থাকা এখন দায় হয়ে পড়েছে। জীবিকার তাগিদে ময়লা পানি মাড়িয়ে বাধ্য হয়ে বাড়ি থেকে বের হতে হচ্ছে। আমরা রান্না-বান্না, গোসল পর্যন্ত করতে পারছি না। ময়লা পানি শরীরে লেগে আমাদের অনেকের চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। রায়েন্দা খালের পাশ দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধ থেকে পানি নিষ্কাশনের পথগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যেভাবে হোক এ অবস্থার নিরসন চাই আমরা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য জালাল আহম্মেদ রুমি জানান, বেড়িবাঁধের কাজের কারণে পাঁচ-ছয়টি ড্রেনের মুখ বন্ধ হয়ে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। দ্রুত ড্রেন নির্মাণ না করলে এ সমস্যার সমাধান হবে না।

রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন জানান, একটি পয়েন্ট থেকে পাইপ দিয়ে পানি নামানো ব্যবস্থা করা হয়েছে কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। আটকে থাকা পানি বের করার জন্য আরো বিকল্প ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মূলত বেড়িবাঁধের সাথে ১০টি ড্রেন করার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তা এখনো নির্মাণ করছে না। এগুলো নির্মাণ হয়ে গেলে আর এ সমস্যা থাকবে না।

উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি) কর্মকর্তা প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, সিএইচডব্লিউ নামের চায়নার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বর্ষা মৌসুমে কাজ করে না। তাই অধিকাংশ কর্মী ছুটিতে নিজ দেশে চলে গেছেন। আরা যারা আছেন তারা বর্তমান পরিস্থিতিতে বের হচ্ছেন না। তারপরেও তাদের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। 

পানিবন্দি থাকার বিষয়টি স্বীকার করে শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, পানিবন্দি এলাকা আমি পরিদর্শন করেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ প্রকল্প কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। দ্রুত পানি নিষ্কাশন করা হবে জানিয়েছেন তারা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //