পাবনায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নৌপথে স্পিডবোট বন্ধের অভিযোগ

পাবনায় কাজিরহাট আরিচা নৌপথে চলাচলকৃত স্পিডবোট সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ করেছেন স্পিডবোট মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ।

গত ১৫ জুন (সোমবার) বিকেলে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজিসহ স্থানীয় প্রশাসনের সকলের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন কাজিরহাট স্পিডবোট মালিক সমিতির আহবায়ক রেজাউল হব বাবু, যুগ্ম আহবায়ক আবুল হাসেম উজ্জ্বল ও মিরোজ হোসেন।

ঢালার চরের চেয়ারম্যান কোরবান আলী সরদারের নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে স্থানীয় তিন চেয়ারম্যানসহ ও স্পিডবোট মালিক সমিতির সদস্যদের ব্যক্তিগত স্পিডবোট বন্ধ করে দেয়া অভিযোগ করেন তারা।

ঘাট সংলগ্ন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নির্বাচিত তিন চেয়ারম্যান ও কাজিরহাট ঘাট স্পিডবোট মালিক সমিতির নেত্রীবৃন্দ বলেন, চলতি বছরের এপ্রিল মাসের ১৩ তারিখে ত্রাণের চাল চুরির দায়ে র‌্যাবের হাতে আটক হন ঢালার চরের চেয়ারম্যান কোরবান আলী সরদার। এই ঘটনার পরে দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশে দলীয় সভাপতি পদ ও প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে দল। দীর্ঘ দেরমাস জেল হাজতে থাকার পরে সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকায় এসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে কোরবান চেয়ারম্যান।


তার নির্দেশে নাসির সদরদা, রাশেদ সরদার, রেজাউল ইসরাম বকুল, খোকন ফকির স্বপন শেখ, শাহীন মন্ডল, জানু, রানা, শাহাজান আলী, সোহেল সরদার, আকরাম ফকির, আক্কাস নামে এই সকল সন্ত্রাসী বাহিনী ঘাট এলাকায় দখল নিয়ে ব্যাপকভাবে চাঁদাবাজি করছে বলে অভিযোগ করেন তারা।

অভিযোগে সংশ্লিষ্ট তিন চেয়ারম্যান ও স্পিডবোট মালিক সমিতির নেতারা আরো বলেন, কাজিরহাট ঘাট কেন্দ্রিক এই এলাকার সাধারণ মানুষের বিভিন্ন ব্যবসা ও পেশা জড়িত রয়েছে। এই ঘাট দিয়ে খুব সহজে পাবনা, নাটোর, রাজশাহীসহ আশে পাশের বেশ কিছু জেলার মানুষ এই নৌ পথ ব্যবহার করে অতি সহজে রাজধানীতে যাতায়াত করে আসছে। আর এই নৌপথের সহজ মাধ্যম ও আধুনিক ও সময় উপযোগী জনপ্রিয় যানবাহনের নাম স্পিডবোট। আমরা দীর্ঘদিন ধরে নিয়ম অনুসরণ করে সুনামের সাথে কাজিরহাট ও আরিচা নৌপথে বোট পরিচালনা করে আসছি। সদ্য কারামুক্ত হওয়া পার্শ্ববর্তী এলাকা ঢালাচরের কোরবান চেয়ারম্যান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী ঘাট এলাকায় প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে স্পিডবোট কাউন্টারে হামলা চালায় এবং চাঁদা দাবি করেন। তাদের এই সন্ত্রাসী কার্যক্রমে বাধা দেয়া ও চাঁদা না পেয়ে সন্ত্রাসীরা তাদের বোট বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।

লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী স্পিডবোট মালিক সমিতির আহবায়ক রেজাউল হক বাবু বলেন, ঘাটরে সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করছে কোরবান চেয়ারম্যান। তাকে সহযোগিতা করছে বেড়া উপজেলার সদ্য দল থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেড়া পৌর মেয়র আব্দুল বাতেন। তিনি এই ঘাট এলাকা তার নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য আমাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করছে। তিনি জামাত বিএনপির সমর্থক ও সদ্য দলে যোগ দেয়া কর্মীদের আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছেন। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করে দলের মধ্যে গ্রুপিং করছেন। এমত অবস্থায় ঘাট এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কারণে সরকারের ভাবমূর্তি যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি আমরা। তাই সুষ্ঠুভাবে স্পিডবোট চালুসহ সন্ত্রাসীদের হাত থেকে ঘাট এলাকাকে মুক্ত রাখার জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বর্তমানে ঘাট এলাকায় দখলকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় এই ঘাট দখলকে কেন্দ্র করে আইন শৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। বর্তমানে কাজিরহাট আরিচা নৌ পথে স্পিডবোট চলছে মোট ২০টি। নয়টি কাজিরহাট এলাকার ও ১১টি আরিচা এলাকার।

কাজিরহাট ও আরিচা নৌপথের জনপ্রিয় রাজধানী ঢাকার সাথে স্থল পথে উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গের যাতায়াতের এক সময়ের অন্যতম স্থান ছিলো পাবনার কাজিরহাট ফেরিঘাট। নদীর নাব্যতা আর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের পর থেকে এই ঘাটের চাহিদা অনেকাংশে কমে যায়। দীর্ঘদিন এই পথে তেমন কোন গণপরিবহন যাতায়াত না থাকলেও সম্প্রতি এই ঘাট দিয়ে পাবনা অঞ্চলসহ আশেপাশের বেশ কিছু জেলার মানুষ খুব সহজে এই নৌপথ দিয়ে রাজধানী ঢাকাতে প্রবেশ করেছেন। এই নৌ পথ দিয়ে আরিচা হয়ে মানিকগঞ্জ, সাভার হয়ে ঢাকায় যেমন যাচ্ছে মানুষ তেমনি রাজবাড়ি হয়ে ফরিদপুরসহ দক্ষিণ বঙ্গের যেকোনো জেলাতে যাতায়াত করতে পারছে সাধারণ মানুষ। তাই অবারো প্রাণ ফিরে পেয়েছে এই কাজিরহাট নৌবন্দর।


এ বিষয়ে অভিযুক্ত ঢালার চরের চেয়ারম্যান কোরবান আলী সরদার বলেন, কোন সন্ত্রাসী কার্যক্রম আমি করি নাই বা করছি না। আমার নিজেরও বোট আছে। যারা আমার নামে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ত্রাণের চাল অনিয়মের বিষয়ে আমি জেলে যাওয়ার পরে এই অভিযোগকারীরা আমারসহ আমাদের বেশ কিছু মানুষের বোড বন্ধ রেখে ছিলো। আমি শুধু সঠিক নিয়ম করেছি। সিরিয়াল মতো বোট চলাচল করবে। জোড় পূর্বক ক্ষমতা দেখিয়ে এককভাবে কারো বোড চলাতে পারবে না। আর এই স্পিডবোট মালিক সমিতির তরা কেউ না। তাদের কমিটি বৈধ না।

এই বিষয়ে পাবনা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, এই বিষয়ে আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। স্থানীয় চেয়ারম্যানদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। তবে এই নদীর ঘাট নিয়ে কোন অনিয়ম বা সন্ত্রাসী কার্যক্রম মেনে নেয়া হবে না। বিষটি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পাবনা জেলা প্রশাসক কবির মাহমুদ বলেন, আমার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ঘাট এলাকার চেয়ারম্যান ও স্পিডবোট মালিক সমিতির নেতারা। বিষয়টি তাদের অন্ত কোন্দল বলে মনে হচ্ছে। সকলে সরকার দলীয় নেতাকর্মী। সকলেই নির্বাচিত চেয়ারম্যান। এই ঘাট দিয়ে খুব সহজে রাজধানীসহ দক্ষিণ বঙ্গের যে কোন জেলাতে প্রবেশ করা যায়। এই অঞ্চলে রেল লাইন চালুর পর থেকে বেশ চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। ঢালার চরের সেই আতঙ্ক আর এখন মানুষের মধ্যে নেই। সুতরাংবিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //