ডিজিটাল শিক্ষা থেকে বঞ্চিত দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীরা

পাহাড়ে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে অনলাইনে পাঠদান। দুর্গম এলাকায় বিদ্যুৎ, টিভি, মোবাইল ও ইন্টারনেট সুবিধা না থাকায় পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে না ডিজিটাল শ্রেণি কার্যক্রমের সুবিধা। করোনা পরিস্থিতিতে অনিশ্চিত হয়ে পড়া শিক্ষা কার্যক্রমকে চালিয়ে নিতে সরকারের ইতিবাচক এ উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে খাগড়াছড়ির দুর্গমাঞ্চলে। সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ চান ভুক্তভোগীরা।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ সারাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অনির্দিষ্টকালের এ বন্ধে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় সংসদ টেলিভিশন ও অনলাইন মাধ্যমে শ্রেণি কার্যক্রম চালু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অনেক শিক্ষার্থী এই সুবিধার পাচ্ছে। খাগড়াছড়ির শহর কেন্দ্রিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ পেলেও বঞ্চিত হচ্ছে দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীরা। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকা, টেলিভিশন ও ইন্টারনেট সুবিধা না থাকায় সুযোগ পাচ্ছে না বেশির ভাগ শিক্ষার্থী।

এছাড়া বিদ্যালয় নির্ভর এসব শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সচেতনতার অভাবসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় ব্যাহত হচ্ছে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম। এতে শিক্ষার্থী পাঠ কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। খাগড়াছড়িতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় ৭০৬ টি। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রায় ৪২০টি। সরকারি -বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজার।  প্রায় ৫০ শতাংশ  দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থী। দুর্গম এলাকা হওয়ায় এখানকার শিক্ষার্থীরা সংসদ টিভি বা অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত।

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা গোমতি এলাকার একাধিক অভিভাবক জানান, মার্চ থেকে স্কুল বন্ধ। আমাদের ঘরে টিভিও নেই। তাই সংসদ টিভির মাধ্যমে বাচ্চারা পড়াশোনা করতে পারছে না। তাছাড়া আমরাও বাচ্চাদের পড়াতে পারিনা। এখানে কোন বিদ্যুৎ নেই কীভাবে টিভি দেখব।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, বিদ্যুৎ সুবিধা না থাকায় এখানে ডিজিটাল শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। টিভি বা ইন্টারনেট না থাকায় এখানকার শিক্ষার্থীরা কোন সুবিধা পাচ্ছে না। স্কুল খোলার পর যদি পরীক্ষা তাহলে অনেক শিক্ষার্থী পাশ করতে পারবে। বিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষার্থী পাঠদানের সুযোগ দিতে হবে।

টেলিভিশন ও অনলাইন মাধ্যমে আপাতত শ্রেণি কার্যক্রম চললেও হচ্ছে না পরীক্ষা গ্রহণ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর শিক্ষা খাতের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগামী শিক্ষা বছরকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষার মান উন্নয়ন কাজ করা সংস্থাগুলোর।

খাগড়াছড়ির স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা- জাবাবাং এর সমন্বয়ক বিনোদন ত্রিপুরা জানান, একাডেমিক কার্যক্রম ঠেলে সাজানো হলে শিক্ষার্থীরা কিছুটা সুবিধা হবে। সরকারকে এই বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষা বর্ষেও পরিবর্তন আনতে হবে। 

পার্বত্য চট্টগ্রামসহ পিছিয়ে পড়া এলাকায় শিক্ষার্থীরা যাতে পিছিয়ে না পড়ে তা নিয়ে উদ্যোগের কথা বলছে শিক্ষা অনুরাগীরা। আর সংকট মোকাবেলায় সরকারকে সহযোগিতা দিতে প্রস্তুতির কথা বলছেন এনসিটিবি’র লেখক প্যানেলের সদস্যরা।  ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম, এর প্যানেল সদস্য  মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা জানান, পার্বত্য অঞ্চলসহ দেশের পিছিয়ে থাকা এলাকার শিশুরা যাতে পিছিয়ে না পরে সেই বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ নেয়া হবে।

খাগড়াছড়ি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন জানান, আমাদের শিক্ষার্থীরা যাতে করোনাকালীন বন্ধে পিছিয়ে না পড়ে সেই লক্ষ্যে পাঠদান শুরু হয়েছে। আমাদের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে, তাদের পড়াশোনা দেখাশুনা করছে। আশা করি বন্ধেও সময় শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে থাকবে না। সংসদ টিভির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো পড়াশোনা করছে কিনা তা শিক্ষকরা তা তদারকি করছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। শিক্ষার্থীরা যাতে বাইরে ঘোরাঘুরি না পড়াশোনায় মনোযোগী আমরা সেই্ বিষয়ে শিক্ষকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //