গাইবান্ধায় বন্যা: ত্রাণ বরাদ্দে অনিয়ম

বন্যা শুরুর ৮ দিন পেরিয়ে গেলেও ত্রাণ (চাল ও শুকনো খাবার) বরাদ্দই পাননি গাইবান্ধার কয়েকটি ইউনিয়নের বাসিন্দারা। আবার চাল বরাদ্দ পেলেও তা বিতরণ শুরু করেননি কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান। গতকাল বুধবার অনুসন্ধানে বিষয়টি উঠে এসেছে। তবে নগদ টাকা উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত বরাদ্দ দেয়া হলেও তা বন্যার্তদের মধ্যে কখনো বিতরণ করা হয় না। অনেক ইউনিয়নে চাল দেয়া হলেও বরাদ্দ দেয়া হয়নি শুকনো খাবার। ফলে বন্যার্তরা খাদ্যাভাবে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার পর্যন্ত জেলার সদর উপজেলা, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ২৬টি ইউনিয়নের ১ লাখ ২২ হাজার ৩২০ জন পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এসব বন্যাকবলিত মানুষদের মধ্যে বিতরণের জন্য এই চার উপজেলায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২০০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১১ লাখ টাকা ও শিশুখাদ্য হিসেবে আরো ২ লাখ টাকা। নগদ টাকা বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণ না করে বরাদ্দের সেই টাকায় উপজেলা প্রশাসন শুকনো খাবার কিনে দেয় ইউনিয়ন পরিষদকে। পরে তারা এসব চাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করে বন্যার্তদের মধ্যে।

কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোবাইল ফোনে জানান, জেলার সবচেয়ে বেশি ইউনিয়ন নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ফুলছড়ি উপজেলায়। আর তাই বন্যা শুরু হলেই সাতটি ইউনিয়নের সবগুলোই বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই উপজেলার মানুষ। কিন্তু এই উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন ত্রাণ বরাদ্দই পায়নি।

এর মধ্যে ২৪ জুন থেকে শুরু হওয়া বন্যায় সাড়ে ১১ হাজারের মতো মানুষ পানিবন্দি হয়েছে উড়িয়া ইউনিয়নে। কিন্তু ত্রাণের কোনো বরাদ্দ পাননি ইউপি চেয়ারম্যান মো. মহাতাব উদ্দিন সরকার। কবে বরাদ্দ পাবেন সেটাও জানেন না তিনি। ফুলছড়ি ইউনিয়নে প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হলেও কোনো বরাদ্দ পাননি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গফুর মন্ডল। কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নে ৮ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হলেও বরাদ্দ পাননি চেয়ারম্যান মো. লিটন মিয়া। তবে গতকাল বুধবার কিছু বরাদ্দ পাওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। 

অপরদিকে সুন্দরগঞ্জের তারাপুর ইউনিয়নে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়নি। তবে গতকাল বুধবার দেয়ার কথা রয়েছে। আর তা দিলে বৃহস্পতিবার (আজ) উত্তোলন করে বিতরণ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম। এছাড়া কাপাসিয়া, বেলকা ও হরিপুর ইউনিয়নে চাল বরাদ্দ দেয়া হলেও কোনো শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান মো. জালাল উদ্দিন সরকার, মো. ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ ও নাফিউল ইসলাম সরকার জিমি।

এদিকে এক বৈঠকে সব ইউপি সদস্য উপস্থিত না থাকায় চাল পেয়েও বিতরণ শুরু করতে পারেননি সদর উপজেলার কামারজানী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবদুস সালাম জাকির। গত সোমবার বরাদ্দ পাওয়া চাল আগামী শনিবার থেকে বিতরণ শুরু হবে। তবে ২১০ প্যাকেট বরাদ্দ পাওয়া শুকনো খাবার বন্যার্তদের মধ্যে গতকাল বুধবার বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সাঘাটার ভরতখালীতে প্রায় ১৮ হাজারের মতো মানুষ পানিবন্দি হলেও গত মঙ্গলবার বরাদ্দ দেয়া চাল বিতরণ শুরু করেননি ইউপি চেয়ারম্যান মো. শামসুল আজাদ শীতল। আগামী শনিবার থেকে চাল বিতরণ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়নি এই ইউনিয়নেও।

এদিকে এসব ইউপি চেয়ারম্যানের কেউই কোনো নগদ টাকা পাননি বলে জানিয়েছেন এই প্রতিবেদককে।

কঞ্চিপাড়ার ঘোলদহ গ্রামের সোহেল রানা বলেন, ভাষারপাড়া ও ঘোলদহে এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ বিতরণ করা হয়নি। অথচ কয়েকদিন ধরে অনেক পরিবার পানিবন্দি হয়ে খেয়ে না খেয়ে কষ্ট করে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু রায়হান দোলন বলেন, বন্যার্তদের জন্য আসা চাল ও নগদ টাকা ওই রকম লার্জ স্কেলে এখনো দিচ্ছিনা। আসলে এখন যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের শুকনো খাবার দরকার। আমাদের আগেরই জিআরের চাল ছিল, সেগুলোই দিচ্ছি। গতকালও দিয়েছি সবগুলো ইউনিয়নে। করোনার সময় থেকে আসা বরাদ্দ ও বন্যার্তদের জন্য আসা ত্রাণের বরাদ্দ এক হয়ে গেছে ও দুটো একসঙ্গেই দেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। 

এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী লুতফুল হাসানের মোবাইলফোনে কয়েকবার কল করলে নম্বরটি ব্যস্ত পাওয়া যায়।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এ কে এম ইদ্রিশ আলী বলেন, ত্রাণ বিতরণ একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়। এমনটি নয় যে, জেলা প্রশাসক সই করলেন আর সাথে সাথে ওই লোকটি পেয়ে গেলেন। অনেক ইউনিয়নে এখন বিতরণ শুরু হয়ে গেছে। হয়তো দু-একটি দূরের এলাকায় যেতে সময় লাগছে। তবে বিতরণ শুরু হয়েছে, এটি চলমান থাকবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //