সুনামগঞ্জে বন্যায় মৎস্যখাতে ২১ কোটি টাকার ক্ষতি

সুনামগঞ্জে টানা বৃষ্টিপাত ও বন্যায় পাহাড়ি ঢলে জেলার ১১টি উপজেলায় ২ হাজার ৮৪৬টি পুকুরের পোনা ও বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে গিয়ে ও অবকাঠামো মিলে প্রায় ২১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে মাছ চাষিদের। চাষিরা বিভিন্ন এনজিও ও সরকারি ভাবে ঋণ গ্রহণ করে আবার কেউ ধারদেনা করে মাছ চাষ করে মাছ বিক্রির টাকায় জীবিকা নির্বাহ করতো।

বন্যায় মাছ ভেসে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষিরা সর্বস্ব হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পরেছে। অনেকেই পথে বসেছেন কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষিদের পুনর্বাসনে জন্য সরকারিভাবে সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা ও জেলার সচেতন মহল।  

সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য বিভাগ থেকে জানা যায়, গত শুক্রবার থেকে পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়। এতে অব্যাহত ভাবে ডুবতে তাকে জেলার তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, বিশ্বম্ভপুর, দিরাই, শাল্লা, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা, জগন্নাথপুরসহ ১১টি উপজেলার মাছ চাষের পুকুর।

আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে যাওয়া পুকুরের মধ্যে সদর উপজেলায় ১২১৬টি, তাহিরপুর উপজেলায় ৭০টি, জামালগঞ্জ উপজেলায় ১১১টি, ধর্মপাশা উপজেলায় ৩৪২টি, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ৪৫০টি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় ৯০টি, দিরাই উপজেলায় ২৬টি, ছাতক উপজেলায় ২১০টি, শাল্লা উপজেলায় ৬টি, জগন্নাথপুর উপজেলায় ৩০টি ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় ২৯৩টি পুকুর তলিয়ে যাওয়ায় মাছ ও পোনা ভেসে গেছে।

বুধবার (১ জুলাই) এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত জেলার ১১উপজেলার ২ হাজার ৮৪৬টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এর মধ্যে ১২৬৭ মেট্রিক টন মাছ, যার মূল্য ১৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, ১২২ মে. টন পোনা যার মূল্য এক কোটি ৮৭ লাখ টাকা ও অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এক কোটি ১৪ লাখ টাকা।

এদিকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষিদের তালিকা তৈরী করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কাছ চলেছে বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা।

তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মাছ চাষি রফিকুল ইসলাম জানান, আমি গত ১০ বছর ধরে আমার তিনটি পুকুরে রুই, কাতলা, পাঙাশ, তেলাপিয়া, শিং, ব্রিগেড, মৃগেল, চিড়াই ও সিলভার কার্প জাতের মাছ চাষ করেছি। কিন্তু সম্প্রতি বন্যায় আমার বড় পুকুরটি সম্পূর্ণ ও অন্যদুটি পুকুর আংশিক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় প্রায় ৯-১০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। আমি চরম ক্ষতির শিকার হয়েছি। তিনি সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের জন্য দাবি জানান।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিদের সরকারিভাবে সহযোগিতা প্রদানের দাবি জানিয়ে জেলার সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের ইব্রাহীমপুর গ্রামের মুসলিম উদ্দিন বলেন, বন্যায় আমার ৯টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে এসব পুকুরে রুই, কাতলা, পাঙাশ, তেলাপিয়া, শিং, ব্রিগেড, মৃগেল, চিড়াই ও সিলভার কার্প জাতের প্রায় ৩লাখ পোনা ও বড় আকারের মাছ বেরিয়ে গেছে এতে প্রায় ৭০লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে তার।

সমাজসেবক মাসুক মিয়াসহ উপজেলা ও হাওর পাড়ের সচেতন মহল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিদের সরকারিভাবে সহযোগিতা প্রদানের দাবি জানিয়ে বলেন, এবার বন্যায় মাছ চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পুকুরে মাছ চাষিদের এই দুঃসময়ে সরকারের পাশে দাঁড়ানো উচিত। কারণ তারা বিভিন্ন এনজিও ও সরকারি ভাবে ঋণ, অনেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করেছেন লাভের আশায়। সরকারি সহায়তা না পেলে মাছ চাষিদের দুর্ভোগের শেষ থাকবে না।   

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদ্মাসন সিংহ জানান, উপজেলায় বন্যায় মৎস্য চাষিদের পুকুর ডুবে মাছ ভেসে যাওয়ার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করেছে মৎস্য বিভাগ। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারি ভাবে কোন সহায়তা এলেই তাদের সহায়তা প্রদান করা হবে।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে আর  তালিকা তৈরীর কাজ শেষ হলে পরবর্তীতে পদক্ষেপ নেয়া হবে জানিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, বন্যায় জেলার ১১উপজেলার ২হাজার ৮৪৬টি পুকুরের মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। মাছ ও অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে ২১কোটি ৪৫লাখ টাকার। আমরা সার্বক্ষণিক চাষিদের বন্যা পরবর্তী নির্দেশ দিচ্ছি। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //