মাঠে এখন কাঁদাজল। তার মাঝেই প্যাক প্যাক শব্দতুলে খাবার খুঁজে ফিরছে হাজারো হাঁস। একটা হাঁসও যেন দলছুট না হয় তাই লাঠি হাতে পাহারা দেয়া হয়। একটু এলোমেলো হলেই লাঠি দিয়ে হাঁসগুলোকে দলে ফিরানো হয়। মাঝে মাঝে আয় আয় বলেও ডাকা হয়। দিনভর খাবার খেয়ে সন্ধ্যায় শরীরটাকে ডানে বায়ে দোলাতে দোলাতে সারিবদ্ধ হয়ে অস্থায়ী ডেরায় ফিরে আসে হাঁসের দল। কুমিল্লার পথে প্রান্তরে এখন হাজারো হাঁসের চষে বেড়ানোর এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।
সরেজমিনে কুমিল্লার বুড়িচং ব্রাহ্মনপাড়া ও আদর্শ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় মাঠে চষে ফিরছে হাজারো হাঁস। তাদের দিক নিশানা ঠিক রাখতে মাথায় ছাতা হাতে লাঠি নিয়ে পাহারায় রয়েছেন দু’যুবক। হাঁসকে যেন বাগডাস কিংবা শেয়াল আক্রমন করতে না পারে তাই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে পাহারত যুবকরা। খাবারের খোঁজে ব্যস্ত থাকা হাঁসগুলো মাঝে মাঝে প্যাক প্যাক শব্দে জলকেলিতে মেতে উঠে। আবার ক্ষেতের আইলেও খানিকটা জিরিয়ে নেয়। মাঝে মাঝে দু একটা হাঁস ক্ষেতের আইলে ডিম দেয়। পাশেই গাছে বসা কোন কাক সেই ডিমটাকে ছোঁ মেরে নিয়ে যায়।
সদর উপজেলার কালখড়পাড় এলাকায় হাঁসের পাল নিয়ে এসেছেন মুহিত। তার অধীনে আছে ৮শ হাস। তিনি এসেছেন হবিগঞ্জের বানিয়াচং থেকে। কথা হয় মুহিতের সাথে। তিনি জানান, হবিগঞ্জ সিলেট ও সুনামগঞ্জ এলাকায় এখন প্রচুর পানি। বেশী পানিতে হাঁস খাবার পায় না। কুমিল্লাসহ আশেপাশের এলাকায় এ সময় কম পানি থাকে। তাই সিলেট সুনামগঞ্জসহ আশেপাশের জেলাগুলো থেকে লাখ লাখ হাঁস আসে কুমিল্লাসহ আশেপাশের এলাকায়। জমিতে ধান রোপন শুরু হলে আবার চলে যাবেন হবিগঞ্জে। মালিককে বুঝিয়ে দেবেন হাঁসের হিসেব নিকেশ।
জেলার ব্রাহ্মনপাড়া উপজেলার শশীদল ঘুঙ্গুর খালের পাশে অস্থায়ী ডেরা গেড়েছেন সজিব ও সুজন নামে দু’যুবক। তারা জানান, হাঁসের মালিক মো: মজিদ তাদেরকে ১২’শ হাঁস দিয়ে কুমিল্লায় পাঠিয়েছেন। এখন তিন’শ হাঁস ডিম পাড়ে। আর কয়েক দিন পড়ে সবগুলো হাঁস ডিম পাড়বে। সকালে মালিক পক্ষের প্রতিনিধি এসে হাঁসের ডিম নিয়ে যায়। প্রতি হালি ডিম ৩২-৪০ টাকায় বিক্রি হয়।
সুজন ও সজিব জানান, হাঁসের দেখভাল করার জন্য খাবারসহ মালিক মাসে ১০ হাজার টাকা বেতন দেন। সাথে রয়েছে মোবাইল খরচও। তিন মাসের জন্য তারা কুমিল্লা ও আশেপাশের এলাকায় আসেন। ধান রোপন শুরু হলে চলে যাবেন।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh