করোনার কারণে পাহাড়ে কমেছে কোরবানির পশু সরবরাহ

করোনার কারণে পাহাড়ে কোরবানির পশু বিক্রি কমেছে। প্রতিবছর খাগড়াছড়ি থেকে প্রচুর পরিমাণ পশু গরু ছাগল চট্টগ্রাম ফেনী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ হলেও এবার তা হচ্ছে না। এবার পাইকারি বিক্রেতা না আসায় হাটে কমে গেছে গরু ছাগলের বিক্রি। বিক্রি না হওয়ায় হতাশ ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা বলছে ,‘কোরবানিতে পশু বিক্রি আশংকাজনকভাবে কমেছে। কোরবানির আগে মাত্র আর দুইটি হাট আছে অগ্রিম কেনা গরুগুলো বিক্রি করতে না পারলে আমাদের লোকসান হয়ে যাবে।’

খাগড়াছড়ির জেলা সদর, দীঘিনালা, মাটিরাঙা, মানিকছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলায় সাপ্তাহিক হাটে পশু বিক্রি হচ্ছে। শনিবার খাগড়াছড়ির দীঘিনালার বোয়ালখালী নতুন বাজার এলাকায় সাপ্তাহিক হাট বসেছে । সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাটে একটি পশুর বিক্রি হয়নি বলে জানান হাটের ইজারাদার মো.জামাল উদ্দিন। 

তিনি জানান, ‘প্রতিবছর এমন সময় হাট থেকে অনেকগুলো গরু বিক্রি হয়। আজকে এখানে হাটের দিন। তবে একটা গরুও বিক্রি হয়নি। খামারি ও ব্যবসায়ীর গরু নিয়ে হাটে আসে কিন্তু হাটে কোন ক্রেতা আসেনি। অন্যান্য বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে পাইকারি ব্যবসায়ীরা আসত। কিন্তু এবার করোনার  কারণে কোন পাইকারি বিক্রেতা আসেনি। ফলে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। 

এছাড়া গত বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি জেলা সদরের হাটের দিন ছিল। সারাদিনে মাত্র ১১ টা গরু বিক্রি হয়েছে। এবার করোনার কারণে অনেকেই কোরবানি  দিবে না তাই বিক্রিও কমে গেছে। 

খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, ফটিকছড়ি, হাটহাজারীসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাটে গরু সরবরাহ করে পাইকারি ব্যবসায়ী মো .সরোয়ার। তিনি জানান ,‘লকডাউনে আগে গরু অগ্রিম কিনে লালন পালন করে কোরবানির জন্য হাটে তুলেছি। কিন্তু এখন পাইকারের দেখা নেই। শনিবার হাটে  একজন পাইকারী ব্যবসায়ীও আসেনি । এছাড়া কোনো ক্রেতাও দেখা যায়নি। হাটে ১১টা গরু নিয়ে এসেছি কিন্তু একটা গরুও বিক্রি হয়নি। কোরবানির মধ্যে গরু বিক্রি করতে না পারলে প্রতিটি গরুতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লোকসান হবে। গত বছরও এমন সময়ে  অন্তত প্রতিদিন শতাধিক গরু চট্টগ্রামে পাঠানো হত । এবার তা হচ্ছে না। ’

গরুর পাইকারী ব্যবসায়ী মো.আলতাব হোসেন জানান,‘১০ বছরের বেশি সময় ধরে আমি গরুর বেচা কেনা করছি। তবে এবারের মতো লোকসান কখনো হয়নি। প্রতিটি গরু লালন পালনে দিনে দেড়শ টাকা খরচ হয়। এখন গরুই বিক্রি হচ্ছে না। বাজারে কোন ক্রেতা নেই। এছাড়া এবার বাইরে থেকে কোন পাইকারি ব্যবসায়ী আসেনি।  অগ্রীম কেনা গরু প্রতি লোকসান হবে ১০ হাজার টাকা। ক্রেতা সংকটে কমে গেছে গরুর দাম। গরু লালন পালন করতেও অনেক খরচ হচ্ছে। ’ 

জেলা প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায় ‘পাহাড়ে সবুজ ঘাসে প্রাকৃতিক উপায়ে কোরবানির পশু মোটাজাতকরণ করছে খামারিরা। এসব গবাদি পশু মোটাজাতকরণে ব্যবহার করা হয় না ভ্যাকসিন ও ওষুধ। ফলে পাহাড়ের খামারে বেড়ে উঠার গরুর কদরও বেশি। তবে করোনার কারণে কোরবানির পশুর বাজার নিয়ে শঙ্কায় খামারিরা। অন্যান্য বছর এই সময়ে পশু বিক্রি ও আগাম বুকিও হলেও এবার তা হয়নি।  পশু বিক্রি করতে না পারলে লোকসানে পরবে খামারিরা। 

খামারে তত্ত্বাবধায়করা জানান ,‘আমরা কোরবানিকে সামনে রেখে গরু ছাগলের লালন পালন করি। গরুর লালন পালনে প্রাকৃতিকভাবে আবাদকৃত ঘাস ও ভুট্টা খাওয়ানো হয়। কৃত্রিম উপায়ে গরুর মোটাতাজা করা হয় না। প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা পাহাড়ের গবাদিপশুর কদর বেশি। প্রতিবছর এসময়ে গবাদিপশুর বুকিং বা বিক্রি হলেও এবার তা হয়নি। করোনার কারণে পশু বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে খামারীরা। প্রতিবছরের মতে এবারও আমরা কোরবানি পশুর প্রস্তুত করেছি। তবে এবছর এখনো কোরবানীর পশু বিক্রি শুরু হয়নি। করোনার কারণে পশু বিক্রি না হলেও আমাদের লোকসান হবে।  ইতোমধ্যে হাট-বাজারে কৃষকের ছোট-মাঝারি গরু উঠালেও ক্রেতাশুন্য বাজার! এছাড়া পাহাড়ে ‘অনলাইন বাজার ’প্রত্যাশাও কঠিন।

খাগড়াছড়ির মানিকছড়ির এ কে এগ্রো এন্ড ডেইরি ফার্মের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক এমরান হোসেন জানান, গরু বাজারজাত করা নিয়ে আমরা দুঃচিন্তায় আছি। করোনার কারণে এখনো কোন ক্রেতা বা ব্যাপারী এখানো আসেনি। এবার কোরবানির পশুর বিক্রি করতে না পারলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব। প্রতিবছর এমন সময়ে আমরা লাইভ ওয়েট পদ্ধতিতে অগ্রীম গরু বিক্রি করি। এবার প্রতি কেজির দাম ৩৮০ টাকা। খামারে তিন শতাধিক গরু কোরবানীর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্ত এখানো কোন গরু ছাগল বিক্রি হয়নি। দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরাও আসেনি। এই অবস্থা খামারিরা লোকসানের শঙ্কায় রয়েছে।  

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা.জওহর লাল চাকমা বলেন, প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠা পাহাড়ের গরুর কদর বেশি। তবে করোনার কারণে পাহাড়ে হাঁট না বসলে খামারিরা গরু বিক্রি করতে না পেরে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রতিবছর এখান থেকে চট্টগ্রাম থেকে  সমতলে বিভিন্ন এলাকা  থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে গরু কিনে নিয়ে যায়। এবার তা হচ্ছে না। তিনি জানান, কোরবানি উপলক্ষে এবার জেলায় ২০ হাজার পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে এর মধ্যে ১০ হাজার পশু চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা  কিনে নিয়ে যাবে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //