ঈদে কামারদের কপালে শঙ্কার ভাঁজ

সুনামগঞ্জের এগারোটি উপজেলার হাট-বাজারের কামারপট্টি গুলো টুং টাং শব্দে কর্ম ব্যস্ততা থাকলেও, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ক্রেতার আনাগোনার লক্ষণ নেই। কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে ঈদের অন্যতম অনুষঙ্গ পশু কোরবানির প্রয়োজনীয় দা, ছুরি, বটি, চাপাতিসহ বিভিন্ন যন্ত্রের চাহিদাও বাড়ে কয়েক গুণ। সেই চাহিদার জোগান দিতেই ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে ধার-দেনা করে কাঁচামাল কিনে প্রস্তুত করেন কোরবানির পশু কাটার যন্ত্রপাতি। প্রতি বছর প্রত্যাশা অনুযায়ী মুনাফাও অর্জিত হয়। কিন্তু এবার কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা না পেয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কামাররা।

অথচ বছরের এগারো মাসের মধ্যে এই এক মৌসুমের আয়েই তাদের সারা বছরের ভরসা। এবার দৃশ্যপট উল্টো পশু কোরবানির প্রয়োজনীয় সারি সারি ছুরি, চাকু, দা, বটি, চাপাতি দোকানের সামনে বিছিয়ে রাখলেও ক্রেতার দেখা না পাওয়ায় সারা বছরের আগুনের উত্তাপ গায়ে জড়িয়ে লোহা পিটিয়ে যন্ত্রে পরিণত করা কারিগরের কপালে এখন শঙ্কার ভাঁজ পড়েছে। 

একই অবস্থা জেলা শহরসহ হাওরাঞ্চলের কামারের দোকানগুলোতেও। এরপরও থেমে নেই আগুনে লোহা গলিয়ে নানা যন্ত্রপাতি তৈরির কাজ। তাদের প্রত্যাশায় ঈদের বাকি দিনগুলোতে বেচা কেনা বাড়বে।

জানা যায়, আগে মানুষ নিজেরাই নিজেরদের কোরবানির পশু জবাই ও কাটার কাজ করতেন। এখন তা করে দিচ্ছে পেশাদার কসাইরা। তাই অনেকে দা-বটি কিনছেনই না।বর্তমানে দা-বটি কেজি প্রতি ৩৫০ থেকে ৫০০টাকা। চাপাতি ৪৫০টাকা, চামড়া ছাড়ানোর ছুরি ১৫০থেকে ৩০০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য ছুরি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৮০টাকা দরে। কাঁচা লোহার পণ্যের দাম একটু কম রয়েছে।

কামারপট্টিতে দা-ছুরির শাণ দিতে আসা আবুল মিয়া বলেন, করোনা ও পর পর তিন বার বন্যার প্রভাবে অনেক মানুষ আর্থিক সংকটে পড়েছেন। এ কারণে এ বছর অনেকেই কোরবানি দিতে পারছেন না। এজন্য কামারপট্টিতে ক্রেতার আনাগোনা কম।

তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট বাজারে কামার রাশেন্ড্র জানায়,এবার দোকানে নেই ক্রেতাদের ভিড়। অথছ প্রতি বছর কোরবানির ঈদের ১৫দিন আগে থেকেই ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় থাকে। কেউ নতুন ছুরি, চাকু, দা, বটি, চাপাতি আবার কেউ কেউ পুরনো গুলোকে শান(দার) দিতে আনেন। এবার তার উল্টোটাই ঘটছে। সকাল থেকে রাত অবধি দোকানে যন্ত্রপাতি নিয়ে বসে থাকলেও মিলছে না ক্রেতা। সান দিতেও আসছে না। হাতে গোনা দুয়েকজন এলেও দাম শুনে চলে যাচ্ছেন। 

ব্যবসায়ী রাজন জানান, একে ত করোনা তার উপর পর পর তিন বার বন্যায় ক্ষতিগস্থ কম বেশী সবাই তাই অনেকেই কোরবানী দিচ্ছে না মনে হচ্ছে বেচাকেনা নাই। কেমনে যে সংসার চালাবো বুঝে আসে না। বৈশাখ মাসে কোরবানি ঈদ আর পূজা এলে একটু চাহিদা বাড়ে আর সারা বছরেই কাজ না থাকায় বসে থাকতে হয়।

বালিজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণকুল গ্রামের কামার অমর পাল। 

তিনি জানান, বংশপরম্পরায় কামার শিল্পের সাথে জরিত। পৈতৃক পেশা ছাড়তেও পারছেন না। কারণ ছোট থেকেই এই পেশা নেশায় পরিনত হয়েছে। বর্তমানে ব্যবসায় খরা আর  আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে লৌহজাত পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়া, পণ্য তৈরির সরঞ্জামে লোহা, কয়লাসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় বেশি দাম বিক্রি করার পরও লাভ হয় না। এরপরও নানান প্রতিকূলতার মাঝে কোনো রকমে ঠিকে আছি।

 তিনি দাবি করেন, কামার শিল্প একটি আদি শিল্প এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি আমাদেরকে লোন দিলে আমরা আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার সাথে খাপ খাইয়ে নিজেদের তৈরি করতে সহজ হতো। না হলে একটা সময় আসবে আর এই কামার শিল্প থাকবে না। বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

 শুধু  অমর পাল নয় জেলার এগারো উপজেলার পাচঁ শতাধিক কামার মানবেতর জীবনযাপন করছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //