পরিবেশগত পরিবর্তনে বনায়ন প্রয়োজন: পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী

পরিবেশগত পরিবর্তন মোকাবেলা করার জন্য বনায়ন খুব প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিম।

তিনি বলেন- অতীতের তুলনায় এখন প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হচ্ছে। এখন উষ্ণতা বেড়েছে। এসব কারণে বনায়ন করা খুবই প্রয়োজন। বনায়ন করলে পরে পরিবেশগত পরিবর্তন হবে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য উষ্ণতা যে বেড়েছে সেটা আমরা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারবো। 

শুক্রবার (১৪ আগস্ট) সকাল ১১টায় বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের সায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের দক্ষিন চরআইচা গ্রামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওয়তায় বৃক্ষরোপন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা হলো বাংলাদেশের ২৫ ভাগ এলাকা বনায়ন এবং সবুজ বেষ্টনীতে পরিবর্তন করা। এ জন্য তিনি সারা দেশে এক কোটি বৃক্ষরোপন করার নির্দেশনা দিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে পানিসম্পদ মন্ত্রনালয় অধীনে পাণি উন্নন বোর্ড ১০ লাখ বৃক্ষরোপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।

প্রায় দুই হাজার ৫ শত কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে বিভিন্ন স্থানে ফলজ, ঔষধীসহ বিভিন্ন ধরণের গাছ লাগানো হবে বলে অনুষ্ঠানে তিনি জানান।

প্রতিমন্ত্রী এ সময় স্থানীয়দের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের প্রতি অনুরোধ বাড়ির আশপাশে যেখানে খালি জায়গা পাবেন সেখানেই গাছ লাগাবেন। গাছ ঝড়-বৃষ্টি থেকে বাড়িকে রক্ষা করে।  কয়েকমাস আগে আম্পান নামক ঝড়ে সাতক্ষীরা, খুলনা, পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় এলাকায় অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা পরিদর্শনে গিয়ে দেখেছি যেসকল নদীর পারে কিংবা বাড়ির পাশে গাছ ছিলো সেখানে ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছে। যে নদীর তীরে গাছ ছিলো না সেখানে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে, এমনকি অনেক নদী ভাঙনও হয়েছে।

বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যে গতিতে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো করোনাভাইরাসের জন্য তা কিছুটা ব্যহত হয়েছে। কিন্তু আমরা থেমে নেই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত আছে, কিছুটা থমকে গেলেও আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে অনেক প্রাণহানি হয়েছে, সেদিক হিসেব করলে আমাদের দেশে অনেক কম হয়েছে। তবে সেটা মনে করলে চলবে না যে আমাদের প্রাণহানি কম হয়েছে, আর ভবিষ্যতে হতে পারে না। এটা যে কোন সময় মহামারি রুপ নিতে পারে। তাই মাস্ক ব্যবহার করুন। এতে একজন থেকে অন্যজন সংক্রমিত হওয়ার শঙ্কা কমবে।

তিনি বলেন, আপনাদের সাবধান থাকতে হবে, যদি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন আর ২০৪১ সালের ভেতরে উন্নয়নশীল দেশে আমরা পৌঁছাতে চাই আমাদের সু-স্বাস্থ্যেরও অধিকারী হতে পারে। করোনাভাইরাসকে মোকাবেলা করতে হবে, আরো সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

নদী ভাঙন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা ভাটির দেশের মানুষ, এখানকার মাটি খুব নরম। উজানের দেশ চায়না, নেপাল, ভারতে যে বৃষ্টি হয়, সেই বৃষ্টির পানি আমাদের ভাটির দেশ হয়ে বঙ্গোপসাগরে যায়। এই পানি আসবেই, বন্ধ করতে পারবো না।  আর পানির সাথে সেসব দেশ থেকে প্রচুর পলি মাটি প্রতি সিজনে আমাদের দেশে আসে। নদী ভরাট হয়ে যায়। আজ ড্রেজিং করলাম ৬ মাস পরে আবার নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ড্রেজিংটা ব্যয়বহুল ব্যবস্থাপনা তারপরও ড্রেজিং করে যাচ্ছি। আমরা বড় বড় প্রকল্প হাতে নিচ্ছি, পরিকল্পনাও অনেক রয়েছে। আমরা চেষ্টা করবো দেশের মানুষ যাতে নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পায়।

বন্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বণ্যা পরিস্থিতি আগের থেকে অনেক পরিবর্তন হয়েছে, পানি নেমে যাচ্ছে। আর নদী ভাঙন এলাকাতে আমাদের প্রকৌশলীরা কাজ করে যাচ্ছে। এবারে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। গতবছরের থেকে এ বছরে উজানের দেশ থেকে ভাটিতে বৃষ্টির পানি অনেক বেশি নেমে এসেছে। ভাঙনও অনেক হয়েছে।  অনেকগুলো প্রকল্প আমাদের হাতে রয়েছে। আমরা নদী ড্রেজিং করবো এবং আগামীতে যাতে বন্যার পানি সহনীয় অবস্থায় আসে সেজন্য কাজ করছি। ডেল্টা প্লান ২১ এর আওতায় ৬৪ জেলায় খাল খনন প্রকল্প চলছে। ৭০ শতাংশ কাজ আমরা এগিয়ে নিয়েছি আরও এক বছরের মধ্যে এ প্রকল্প শেষ হবে। শেষ হলে নতুন করে আরো ৫ শত খাল খনন আমরা করবো। মোট এক হাজার খাল খনন যদি আমরা আগামী ২/১ বছরের মধ্যে করতে পারি, তাহলে উজান থেকে পানি নেমে আসলে তা দ্রুত সরে যেতে পারবে এবং ক্ষয়ক্ষতি আরো কমবে। যেমন খাল খননের এসব প্রকল্প না হলে ৭০ শতাংশ কাজ শেষ না হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক হতো।

বাঁধ ভেঙে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বাঁধ নির্মাণ করি তা ভেঙে যাচ্ছে, এজন্য আমরা সমীক্ষা করাচ্ছি যাতে বাঁধ না ভেঙে যায় তাতে কি করা যায়। আমরা নদী শাসন করার চেষ্টা করছি। আর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নদী শাসন করে তাতে রেগুলার ড্রেজিং করতে হবে।

তিনি বলেন, সাধারণ এক কিলোমিটার বাঁধে দেড়কোটি টাকা খরচ হচ্ছে, আর সেখানে ব্লক দিয়ে যদি স্থায়ী তীর রক্ষা করি তাহলে ছোট নদীতে ৩০ কোটি এবং বড় নদীতে ৩০ থেকে ৫০ কোটির মধ্যে খরচ হয়। এটা অনেক ব্যয়বহুল, তেমনি ড্রেজিংও ব্যয়বহুল। তবে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আজকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে আগের থেকে অনেক সমৃদ্ধশালী, যারজন্য আমরা এখন ব্যয় করতে পারি।

মন্ত্রী বলেন, আমরা ইতিমধ্যে তিন হাজার কিলোমিটার তীর ব্লক দিয়ে স্থায়ীভাবে রক্ষা করেছি। তারপরও অনেক জায়গায় দেখবেন ব্লক বসানোর পরও ভেঙে পরছে। এর কারণ জলবায়ুর পরিবর্তনের কারনে অনেক সময় পানির প্রবাহ অনেক বেশি বেগে আসছে। আবার অনেক সময় দেখা যায় পানি একজায়গাতে ঘুরপাক খাচ্ছে, স্পয়েলিং হয়ে ধ্বস নামে। যদিও তারপর পরীক্ষা করে দেখছি আমরা এবং পরীক্ষায় যদি দেখা য়ায় গর্ত আছে সেখানে জিও ব্যাগ ফেলে ব্লক ফেলে তা বন্ধ করি। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছি। আমরা আমাদের লক্ষে পৌচাতে পারবো।

দক্ষিণাঞ্চল পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মো. হারুন অর রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়েল অতিরিক্ত সচিব মাহমুদুল ইসলাম, পানি উন্নয়ন বোর্ডে মহাপরিচালক এ এম আমিনুল হক, এবং জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রী শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নে স্লুইজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রাস্তা ভেঙে যাওয়া স্থান ও নগরীর বেলতলা খেয়াঘাট সংলগ্ন ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //