তাহিরপুর বালু-পাথরের আগ্রাসন: হুমকিতে পরিবেশ

বিগত দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কয়েকটি ভারতীয় ছড়া দিয়ে বর্ষায় পাহাড়ি ঢলের সাথে আসা বালু-পাথরে চাপা পড়েছে রাস্তা-ঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, পুকুর ও হাওর।

এর ফলে ওইসব এলাকার প্রকৃতি ও পরিবেশে বিপন্ন হওয়ার পাশাপাশি বসতবাড়ি হারিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা ও কয়েকটি আদিবাসী পরিবার।

সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারীরা বলেন, ওয়েস্টহিল খাসিয়া পাহাড় এলাকায় পাহাড় কাটা ও কয়লা খনিতে খননের কারণে এই বিপর্যয় ঘটছে।

এদিকে সরকারিভাবে এখনো প্রতিরোধ বা প্রতিরক্ষামূলক কোনো কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহণ না করায় চলতি বছর পর পর তিনবার বন্যা, পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারীদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে।

পাহাড়ি ঢলে আসা বালু স্থানীয় চক্র দীর্ঘদিন ধরেই সংঘবদ্ধ হয়ে বিক্রি করছে। চাঁনপুর ছড়ার সাথে সংযুক্ত নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে তাদের কঠোর হস্তে দমন করার দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা। পাশাপাশি এই দুর্ভোগ থেকে জনসাধারণকে ও পরিবেশ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে  ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে এ বিষয়ে সংলাপ করে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার দাবিও জানিয়েছেন তারা।

স্থানীয়রা জানায়, ২০০৮ সালের ৮ আগস্ট রাতে টানা বর্ষণে ভারতের ওয়েস্টহিল খাসিয়া পাহাড় (কালা পাহাড়) ভেঙে উপজেলার সীমান্তবর্তী উত্তর বড়দল ইউনিয়নের চানপুর-রজনীলাইন-পাহাড়তলি, কড়ইগড়া এলাকায় বালু ও পাথরে প্রায় ৩৫০ একর ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, পুকুর, হাওর নষ্ট হয়ে যায়। এ সময় পাহাড় থেকে নেমে আসা বালু-পাথরে চাপা পড়ে ১০ জন আহত হয়। ভরাট হয়ে যায় পাহাড়ি ছড়া, কৃষিজমি। এছাড়া দেড় শতাধিক পরিবার কৃষিজমি ঘরবাড়ি হারিয়ে অন্যত্র চলে যায়।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কোষাধ্যক্ষ ও আদিবাসী নেতা এন্ড্রু সলোমার বলেন, ভারতের মেঘালয়ে অপরিকল্পিত কয়লা ও ইউরেনিয়াম খনি খননের পর থেকেই পাহাড় ভেঙে তাহিরপুর সীমান্তে বিপর্যয় নেমে এসেছে।

উত্তর বড়দল ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মাসুক মিয়া বলেন, প্রতি বছরই মেঘালয় পাহাড় থেকে ঢলের সাথে নেমে আসা বালু-পাথরে আমাদের এলাকার প্রকৃতি পরিবেশ ও কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে। কড়ইগড়া কমিউনিটি ক্লিনিক, ক্লিনিকের পাশের ফসলি জমি বালুতে ভরাট হয়ে গেছে। বড়গোপ-টেকেরঘাট সড়কের তিনটি সেতুর নিচে বালু-পাথরের স্তূপ তৈরি হয়েছে ও চানপুর সড়কের ভেঙে গেছে।  

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. সফর উদ্দিন বলেন, সীমান্ত এলাকায় হাওর ও আমন জমি বালু ও পাথরে চাপা পড়ায় প্রচুর কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে। কি পরিমাণ জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে  তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছি। তথ্য সংগ্রহের পর এ  বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //