জামালপুর
জামালপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৪:০৭ পিএম
আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৪:০৮ পিএম
প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৪:০৭ পিএম
জামালপুর
জামালপুর প্রতিনিধি
আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৪:০৮ পিএম
জামালপুরের সরিষাবাড়ী পৌরসভার মেয়র, আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত রুকুনুজ্জামান রোকন আইসিটিসহ দুটি মামলায় প্রায় চার মাস ধরে পলাতক। এতে নাগরিক সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন পৌরবাসী।
এদিকে বকেয়া বেতনের দাবিতে পৌরসভার পরিচ্ছন্নকর্মী (সুইপার) ও সেবাবঞ্চিত নাগরিকরা রবিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিক্ষোভ করেছে। পরে তারা মেয়র, সচিব ও হিসাবরক্ষকের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে বন্ধ করে দেয়।
পৌরসভা কার্যালয় সূত্র জানায়, মেয়র রুকুনুজ্জামান রোকন ভাস্কর্য ভাঙচুর ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পৃথক দু’টি মামলায় গ্রেফতার এড়াতে ১৫ মে থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অজ্ঞাত স্থান থেকে তিনি কয়েকজন কর্মচারীর যোগসাজশে কয়েকটি বিল-ভাউচারে স্বাক্ষর করলেও অধিকাংশ কর্মচারী ও পরিচ্ছন্নকর্মীদের বেতন-ভাতা মাসের পর মাস বকেয়া পড়ে আছে।
কাউন্সিলরদের সম্মানী বাকি প্রায় ১৯-২০ মাস ধরে। এতে পৌরসভার স্বাভাবিক কার্যক্রম অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। পরিচ্ছন্নকর্মীরা কাজ বন্ধ করে দেয়ায় আরামনগর বাজার, শিমলা বাজার, বাউসি বাজারসহ অধিকাংশ এলাকায় নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করছে। সাম্প্রতিক বন্যা ও বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটগুলো চলার অযোগ্য হলেও কর্তৃপক্ষ কাউকে মেয়রের দায়িত্ব না দেয়ায় এসব দেখার কেউ নেই। প্রায় প্রতিদিনই নাগরিকরা বিভিন্ন কাজে গিয়ে সেবা ও স্বাক্ষর না পেয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। পরিচ্ছন্নকর্মীরা বেতন না পেয়ে রবিবার পৌরসভা ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন। তারা মেয়র, সচিব ও হিসাবরক্ষকের কক্ষে তালা দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।
পরিচ্ছন্নকর্মীদের সর্দার সাজন বাসফোর জানান, পৌরসভায় ২৯ জন পরিচ্ছন্নকর্মী রয়েছে। আমাদের সবারই তিনমাসের বেতন বকেয়া। মেয়র না আসায় আমরা বেতন পাচ্ছি না। এতে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
পরিচ্ছন্নকর্মী সুমন বাসফোর ও খোকন বাসফোর জানান, আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। আমাদের কাজতো অন্যকেউ করে দিতে পারবে না, তাহলে আমাদের বেতন নিয়ে কেনো ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। বেতন না পাওয়া পর্যন্ত তারা কোনো কাজে হাত দেবে না এবং পৌরসভার তালাও খুলে দেবে না বলে জোর দাবি জানান।
৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সালমা বেগম জানান, সাতদিন ধরে ঘুরছি, মেয়র না থাকায় একটা নাগরিক সনদ নিতে পারছি না। পিয়ারা বেগম জানান, নাতির জন্য জন্ম নিবন্ধন করতে হবে, বারবার ঘুরেও এটা করতে পারিনি।
বলারদিয়ার গ্রামের পারভীন বেগম জানান, ছেলের চাকরির জন্য জন্ম সনদ নিতে কয়েকদিন আসলাম। কিন্তু মেয়রের স্বাক্ষরের অভাবে এখনো তা জোগাড় করতে পারিনি। জানি না, আমার বেকার ছেলের ভাগ্যে কী আছে।
ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম অভিযোগ করেন, একটি ট্রেড লাইসেন্সের জন্য ১৫দিন ধরে ঘুরছি। মেয়র নাই, তাই নিতে পারছি না।
সরিষাবাড়ী থানা ও পৌরসভা সূত্র জানায়, মেয়র রোকনের বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারি, এডিপি ও নিজস্ব তহবিলের টাকা, কবরস্থান, বাস টার্মিনাল, ত্রাণ ও মশক নিধন কর্মসূচির বরাদ্দ আত্মসাৎ, টেণ্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, মদ্যপান, অস্ত্রের মহড়া, নারী কেলেঙ্কারি ঢাকতে গুম নাটক, কাউন্সিলর ও স্টাফদের মাসিক বেতন-ভাতা না দেয়া, সাংবাদিক, কাউন্সিলর ও সাধারণ মানুষকে হত্যার হুমকিসহ শতাধিক অভিযোগে গত ১ মে সব কাউন্সিলর একযোগে মেয়র রোকনকে অনাস্থা দেন। একইদিন বিকেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় সভায় রোকনকে ত্রাণ আত্মসাৎ ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এতে তিনি পৌরসভায় অবাঞ্ছিত হয়ে পড়লে ১০ মে সকালে মেয়র রোকন পৌর ভবনে জোরপূর্বক ঢুকতে সশস্ত্র হামলা চালান। এতে কয়েক কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতাকর্মীসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। এসময় প্রতিবাদী জনতার বাধার মুখে তিনি পৌরসভায় ঢুকতে ব্যর্থ হলে ১৫ মে রাতের অন্ধকারে তার লোকজন দিয়ে সরিষাবাড়ী অনার্স কলেজ মাঠে পৌরসভার টাকায় নির্মিতব্য মুক্তমঞ্চ ও ভাস্কর্য ভাঙচুর করে রাজনৈতিকভাবে প্রতিপক্ষদের হয়রানীর অপচেষ্টা করেন।
এ ঘটনায় কাউন্সিলর জহুরুল ইসলাম থানায় মামলা দায়ের করলে মেয়র রোকন এলাকা ছাড়া হয়ে অজ্ঞাত স্থান থেকে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় এমপি আলহাজ ডা. মো. মুরাদ হাসানকে নিয়ে ফেসবুক লাইভ ও স্ট্যাটাসে বিভিন্ন আপত্তিকর মন্তব্য শুরু করেন। এ অভিযোগে যুবলীগ নেতা ছামিউল হক বাদী হয়ে ৫ জুলাই সরিষাবাড়ী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মেয়র রোকনের বিরুদ্ধে একটি মামলা (নম্বর ৩, তারিখ ০৫-০৮-২০২০খ্রি.) দায়ের করেন।
পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ আলী, কাউন্সিলর কাঁলাচান পাল ও জহুরুল ইসলাম জানান, মেয়র দু’টি মামলায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কর্তৃপক্ষ কাগজপত্রে স্বাক্ষর দেওয়ার মতো কাউকে মেয়রের দায়িত্ব দেয়নি। ফলে নাগরিকরা সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন। অপরদিকে পরিচ্ছন্নকর্মীরা বেতনের দাবিতে পৌরসভা কার্যালয় তালাবন্ধ করে দেওয়ায় অচলাবস্থা বিরাজ করছে। তারা অভিযোগ করেন, নাগরিক সেবা বঞ্চিত লোকদের সামনে প্রতিদিনই কাউন্সিলরদের বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। মেয়রকে অপসারণ ও তদস্থলে ভারপ্রাপ্ত কাউকে দায়িত্ব দিয়ে জটিলতা কাটানোর দাবি তাদের।
এ ব্যাপারে পলাতক মেয়র রুকুনুজ্জামান রোকনের বক্তব্য জানার জন্য মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
সরিষাবাড়ী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জোয়াহের হোসেন খান জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়েরকৃত মামলায় মেয়র রোকনকে গ্রেফতারে পুলিশ চেষ্টা চালিয়েছে, তিনি পলাতক থাকায় সম্ভব হয়নি। তথ্য প্রতিমন্ত্রীকে নিয়ে মেয়রের ফেসবুক লাইভে ২০ মিনিট ৩১ সেকেন্ডের আপত্তিকর বক্তব্য সিআইডিতে ফরেনসিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও তদন্ত শেষে মামলার চার্জশিট চূড়ান্ত করে গত ২৫ আগস্ট জিআর আমলী আদালত, সরিষাবাড়ীর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর পাঠানো হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
জামালপুর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক কবির উদ্দিনের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : জামালপুর আওয়ামী লীগ
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh