ঘুষ না দেয়ায় বেতন বন্ধ, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা

ঘুষ না পেয়ে সহকারী শিক্ষকের বেতন বন্ধ করা লালমনিরহাটের কুমড়িরহাট এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) লালমনিরহাট অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন ভুক্তভোগী একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মনোয়ারুল ইসলাম।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম কালীগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ইউনিয়নের লোহাখুচি মালগারা গ্রামের মৃত অলি উদ্দিনের ছেলে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, উপজেলার ওই কুমড়িরহাট এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পরে সহকারী শিক্ষক (গণিত) পদে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম। ওই পদে ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর তার প্রতিবেশী ভূমিহীন দিনমজুর মাইনুল ইসলামের ছেলে মনোয়ারুল ইসলামকে নিয়োগ দেন। এমপিওভুক্তির আবেদন করার সময় প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম সহকারী শিক্ষক মনোয়ারুলকে নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে তার কাছে দুইটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে নেন। যোগদান থেকে বিদ্যালয়ে নিয়মিত দায়িত্ব পালন এবং ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে এমপিওভুক্ত হওয়ায় শিক্ষক মনোয়ারুল ইসলাম বেতন ভাতা উত্তোলন করে আসছেন। অক্টোবর মাসের বেতন উত্তোলনের পরে মনোয়ারুলের কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম।

ওই টাকা না পেয়ে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে দায়িত্ব পালন করলেও বিনা নোটিশে ওই শিক্ষকের বেতন বন্ধ করে দেন প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম। বিষয়টি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিকে অবগত করে বিচার চান সহকারী শিক্ষক। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চলতি বছর ১ জানুয়ারি বই উৎসবে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সামনে প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম কাজল সহকারী শিক্ষক (গণিত) মনোয়ারুল ইসলামকে বিদ্যালয় থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন। বিদ্যালয়ে না আসতেও হুমকি দেন।

হুমকির ঘটনায় সহকারী শিক্ষক মনোয়ারুল ইসলাম জীবন ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে ২৫ জানুয়ারি আদিতমারী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং-৯৭১) করেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। মেধাবী শিক্ষককে হয়রানির প্রতিবাদে এবং প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিভিন্ন দফতরে গণপিটিশন দাখিল করেন স্থানীয় অভিভাবকরা।

এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বসহকারে একাধিক খবর প্রকাশিত হয়। এর ফলে প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাও তদন্তে মাঠে নামেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নিজের দায় এড়াতে প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম পূর্বের স্বাক্ষর করা সাদা কাগজের একটিতে মনোয়ারুলের ইস্তোফা পত্র দেখান তদন্ত কমিটিকে।

ওই ভুয়া ইস্তফাপত্র উদ্ধারসহ চাকরি ফিরে পেতে এবং দুর্নীতিবাজ কামরুলের শাস্তি দাবি করে বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) লিগ্যাল এইডের সহায়তায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী সহকারী শিক্ষক মনোয়ারুল ইসলাম। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে বিবাদী কামরুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারির নির্দেশ দেন।

মামলাটির বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হাকিমুল ইসলাম বলেন, আদালত সন্তষ্ট হয়ে মামলাটি গ্রহণ করে সরাসরি বিবাদীর বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারির নির্দেশ দিয়েছেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

বিষয় : বাংলাদেশ

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //