তিস্তার ভাঙনে পাঁচদিনে ৭৫ বাড়ি নদীগর্ভে

গত পাঁচদিনে তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়েছে ৭৫ পরিবারের ঘরবাড়ি, ঈদগাঁ ও ফসলি জমি। হুমকির মুখে পড়েছে বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনা। তীব্র ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে লালমনিরহাটের তিস্তা পাড়ের মানুষ।

জানা গেছে, চলতি বছরের জুন থেকে থেমে থেমে বন্যার কবলে পড়ে তিস্তা নদীর বাম তীরে থাকা লালমনিরহাটের ৫ উপজেলা। বন্যার পানি কমার সাথে সাথে নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। আগস্টের শেষ থেকে এ পর্যন্ত বড় বন্যা না হলেও তিস্তার পানি প্রবাহ ওঠা-নামা করছে। তিস্তার ভাঙনে বাম তীরে থাকা

লালমনিরহাট জেলার ৫ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, ঈদগাঁ, রাস্তা ঘাট, ব্রিজ, স্থাপনা ও ফসলি জমি। চোখের সামনে ভেসে যায় প্রিয় বসতভিটা ও আসবাবপত্র। ঘরবাড়ি সরানোর মতো সুযোগও পাচ্ছেন না কেউ কেউ। 

গত কয়েকদিন ধরে তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছে জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের দক্ষিণ বালাপাড়া গ্রাম। গত পাঁচদিনে গ্রামটির ৭৫টি বসতভিটা ও ঐতিহ্যবাহী আহলে হাদিস ঈদগাঁ মাঠ নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে গোবর্ধন ইসমাইল পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এভাবে ভাঙন চলতে থাকলে কয়েকদিনের মধ্যে গ্রামের একমাত্র ওই বিদ্যালয়টি বিলীন হয়ে যেতে পারে।

দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যর্থ হলে শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ (ওয়াপদা বাঁধ) বিলীন হতে পারে। সিংঙ্গিমারী, পাসাইটারী গ্রামটি বিলীন হওয়ায় তিস্তা নদীর পানি এখন ধাক্কা দিচ্ছে ওই বাঁধে। ফলে বাঁধটিও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ বাঁধটি নদীগর্ভে চলে গেলে শত শত একর জমি অনাবাদি হয়ে পড়বে। একই সঙ্গে ভাঙনের মুখে পড়বে কয়েক হাজার পরিবার ও সরকারি-বেসরকারি বেশ কিছু স্থাপনা।

তিস্তা নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় অল্পতেই বন্যা আর ভাঙনের মুখে পড়েন তিস্তাপাড়ের মানুষ। তাই তিস্তা নদী খনন করে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন তারা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জরুরি বরাদ্দ থেকে জিও ব্যাগের পাইলিং দিয়ে বাঁধের কাজ করা হলেও তার মান নিয়ে অভিযোগ রয়েছে নদী পাড়ের মানুষদের। নদীর তীরে মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে জিও ব্যাগে ভরে নদীতে ফেলা হচ্ছে। সপ্তাহ না যেতেই সেই জিও ব্যাগ গড়িয়ে পড়ে বালু তোলা মেশিনের গর্তে গিয়ে ভরাট হচ্ছে। একই সঙ্গে নদী পাড়ে মেশিন বসানোর কারণে নদী ভাঙনও বেড়েছে কয়েক গুণ। যেখানে মেশিন বসানো হচ্ছে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সেই স্থানে ভাঙন দেখা দিচ্ছে বলেও দাবি স্থানীয়দের।

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ বালাপাড়ার বাসিন্দারা বলেন, চোখের সামনেই সবকিছু ভেসে গেল। ঘরগুলোর টিন খুলে সরানো সম্ভব হলেও অনেক আসবাবপত্র তিস্তায় ভেসে গেছে। টিন খুলে রাস্তায় রেখেছি। অনেকের জমি নেই বাড়ি করার।


তারা আক্ষেপ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শুনছি নদীর বাঁধ দেবে সরকার। সেই বাঁধ তো দূরের কথা, নেতাদেরও দেখা যাচ্ছে না। আমরা নদীতে ভেসে যাচ্ছি, কিন্তু মেম্বার-চেয়ারম্যান ও এমপি-মন্ত্রীদের দেখা নেই। আমরা ত্রাণ চাই না, নদী খনন আর স্থায়ী বাঁধ চাই। 

এদিকে বসতভিটা হারিয়ে পরিবারগুলো রাস্তার ধারে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকারিভাবে তাদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দেয়া হলেও তা এখানো করা হয়নি। গত মাসে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে তালিকা পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো বরাদ্দ আসেনি। বরাদ্দ এলে বিতরণ করা হবে বলে জেলা ত্রাণ শাখা নিশ্চিত করেছে। 

লালমনিরহাট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, প্রতিনিয়তই নদীর পাড় ভাঙছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকাও প্রতিদিন বাড়ছে। সম্প্রতি জেলার ৫উপজেলায় নদী ভাঙনের শিকার ৭৫৯টি পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য টিন ও টাকা বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ এলে, তা বিতরণ করা হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //