বৃদ্ধার চুল কেটে দিলো প্রভাবশালীরা

বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে মধ্যযুগীয় কায়দায় এক নারীর চুল কেটে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এরপরেও থেমে নেই নির্যাতনকারীরা। হত্যাসহ বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের। তাই এ নির্যাতন বন্ধ করে শান্তিপূর্ণভাবে বাঁচার আঁকুতি জানিয়েছেন নির্যাতিত বৃদ্ধা সফুরা বেগম (৬৫) ও তার পরিবারের সদস্যরা। পাশাপাশি নির্যাতনের এই ঘটনার সুষ্ঠু দাবি জানিয়েছেন তারা।

শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবে পরিবারের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার কাজীরহাট থানার আন্দারমানিক গ্রামের বৃদ্ধা সফুরা বেগম।

সংবাদ সম্মেলনে সফুরা বেগমের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তার মেয়ে সনিয়া বেগম। এ সময় তিনি বলেন, ‘একই এলাকার জনৈক সেকান্দার আলী হাওলাদারের কাছ থেকে ২০০৬ সালের নভেম্বর মাসে ৪০ হাজার টাকায় ১৮ শতাংশ জমি কিনে সেখানে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করে আসছি।সম্প্রতি সেকান্দার ওই জমি বাবদ আরো দুই লাখ টাকা দাবি করে। এ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হলে গত ১৫ জুলাই বৃদ্ধা সফুরার ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। এসময় তার মাথার চুল কেটে এবং কুপিয়ে জখম করে তারা।

এই ঘটনার সাথে সেকান্দার আলী হাওলাদার ছাড়াও তার ছেলে সহিদ হাওলাদার, মো. তৌহিদ হাওলাদার, মৃত হারুন সিকদারের ছেলে মো. ফারুক হাওলাদার. মো. যুবরাজ, আয়নাল হাওলাদারের ছেলে মো. মোতালেব হাওলাদার, মো. সাইফুল হাওলাদার, সহিদ হাওলাদারের ছেলে প্রিন্স হাওলাদার, ফারুক সিকদারের স্ত্রী রাবেয়া বেগম ও মৃত হারুন সিকদারের স্ত্রী খাদিজা বেগম জড়িত রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় কাজীরহাট থানায় উল্লেখিতদের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলেও পুলিশ প্রথমে চিকিৎসা গ্রহণের পরামর্শ দেন। দীর্ঘ চিকিৎসার পর গত সপ্তাহের শেষ দিকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়ে বাড়ি ফিরে যান ওই বৃদ্ধা।

তিনি অভিযোগ করেছেন, ‘মারধর এবং চুল কেটে নির্যাতনের পরেও ক্ষান্ত হয়নি অভিযুক্তরা। অপর একটি মামলায় কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে আসামিরা পুনরায় সফুরা এবং তার পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হয়রানি, হুমকি দিয়ে নির্যাতন চালাচ্ছে। কিন্তু অভিযুক্তরা এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় তাদের এ অত্যাচারের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে পারছে না বলেও দাবি করেছেন ওই বৃদ্ধা।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, ‘শুধু সফুরা বেগমকেই নয়, ইতোপূর্বে তার স্বামী মান্নান সরদারকে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে হত্যা করে। এ ঘটনায় সফুরা বেগম অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। কিন্তু স্থানীয়দের চাপে পরবর্তীতে সেই মামলাটি তুলে নিতে হয়েছে।

সর্বপরি সংবাদ সম্মেলন করে সম্প্রতি সময়ে নির্যাতনের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও শান্তিতে বসবাসের সুব্যবস্থা করতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সু-দৃষ্টি কামনা করেন বৃদ্ধা সফুরা বেগম ও তার মেয়ে সনিয়া বেগম।

গৃহবধূকে নির্যাতনের বিষয় নিয়ে যোগাযোগ করা হলে জেলার পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘জমি নিয়ে ওই দুই পরিবারের পুরোনো বিরোধ রয়েছে। এ নিয়ে উভয়পক্ষ পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছিলো। তারা জামিনে বের হয়ে ফের ওই পরিবারকে নির্যাতন করে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //