দিন দিন কমছে মধুপুর গড়ের বনাঞ্চল

টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়াঞ্চলের ভূমি দিন দিন কমে যাচ্ছে। দখল হয়ে যাচ্ছে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম বনাঞ্চল মধুপুর গড়ের বিপুল পরিমাণ জায়গা।

দখলদারদের মধ্যে ক্ষমতাশীন দল আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, জনপ্রতিনিধি, আদিবাসী নেতা রয়েছেন সামনের সারিতে। 

দখলের প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্থানীয় বনবিভাগের কর্মকর্তা ও স্থানীয়রা জানান, বনের জায়গায় প্রথমে একটি-দুটি করে গাছ কাটা হয়। আস্তে আস্তে গাছ কাটার সংখ্যা বাড়ানো হয়। পরিস্কার করা হয় জায়গা। তারপর সেখানে লাগানো হয় কলা, আনারসসহ অন্য গাছ। পরবর্তীতে সেই জায়গা চলে যায় অন্যের দখলে। বনবিভাগ ওই জায়গা উদ্ধার করতে গেলে শুরু হয় আন্দোলন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রভাবশালী মহলের চাপে বন্ধ হয়ে যায় উদ্ধার অভিযান। 

টাঙ্গাইল বনবিভাগের এক জরিপ থেকে জানা যায়, টাঙ্গাইলের মধুপুর, ঘাটাইল, সখীপুর ও মির্জাপুরের এক লাখ ১৮ হাজার ৪০৪ দশমিক ৮৪ একর বনভূমি নিয়ে মধুপর গড়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্ব ও পরবর্তীতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে বনভূমি দখল হতে থাকে। এরমধ্যে ৪১ হাজার ২৬১.৬৫ একর বনভূমি দখল হয়ে গেছে। দখলদার রয়েছেন ২৮ হাজার ৬৫০ জন। সবচেয়ে বেশি দখল হয়েছে মধুপুর গড়ের মধুপুর অঞ্চলে। সেখানে ৪২ হাজার ৪৯৭ একরের মধ্যে ৮ হাজার ৪১৭ জন মিলে দখল করেছেন ২১ হাজার ৮৫০ একর ভূমি। এছাড়া ঘাটাইল অঞ্চলে ২৫ হাজার ৭৮৫ একরের মধ্যে এক হাজার ৯০০ একর দখল হয়েছে। দখলদার হলেন ৫ হাজার ৪২১ জন। মির্জাপুরে ৯ হাজার ৬০৪ একরের মধ্যে ৪ হাজার ৬১৪ দখল করেছেন ৩ হাজার ৬০৩ জন। সখীপুরে বনভূমি রয়েছে ৪০ হাজার ৫১৮ একর। ১১ হাজার ২১৮ জন মিলে দখল করেছেন ১২ হাজার ৮৯৬ একর বনভূমি। 

অভিযোগ রয়েছে, কতিপয় বন কর্মকর্তার অনিয়ম, দুর্নীতির কারণে প্রভাবশালীরা বনভূমি দখল করার সুযোগ পেয়েছে। প্রভাবশালীদের সাথে যোগসাজশ করে বন বিভাগের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী সামাজিক বনায়নের নামে জমি দখলে সহযোগিতা করেছে। 

মধূপুর উপজেলার কুড়াগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক বলেন, প্রভাবশালীদের নামে-বেনামে বনভূমি দখল হয়েছে বেশি। সামাজিক বনায়নের নামেও অনেক জায়গা দখল হয়েছে। 

বনবিভাগের দোখলা রেঞ্জ অফিসার আব্দুল আহাদ বলেন, আদিবাসীদের এক অংশ তাদের বাড়ির আশপাশের জঙ্গল কেটে সেখানে আবাদ শুরু করে। পরবর্তীতে সেই জায়গা দখলে নিয়ে অন্যের কাছে লিজ দেয়। এক সময় ওই জায়গা বেদখল হয়ে যায়। বিপুল পরিমাণ বেদখল হওয়া ভূমি উদ্ধারের উদ্যোগ নেয়া হলে দখলদাররা লোকজন নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। আদবাসীদের সামনে রেখে প্রভাবশালী দখলদাররা এসব আন্দোলন করে থাকে।

মধুপুর জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক বলেন, মধুপুরে বনের বেশির ভাগ জমি আদিবাসীদের। সে সব জমিতে আবাদ করতে হলে যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন তা আদিবাসীদের নেই। তাই তারা নিজেদের জমি স্থানীয় অর্থশালীদের কাছে লিজ দেয়। তবে প্রভাবশালীদের দখলে অনেক জায়গা রয়েছে। 

টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, আদিবাসীদের দখলে জায়গা থাকলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তারা অন্যদের কাছে জায়গা লিজ দিচ্ছে। পরবর্তীতে সেই জায়গা প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে। আর দখলকৃত জায়গা উদ্ধার করতে গেলেই নানাভাবে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। 

বনবিভাগের কিছু কর্মকর্তা দখল প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত থাকা প্রসঙ্গে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, এখন আর সে সুযোগ নেই। এখন সবাই সচেতন। বন কর্মকর্তাদের কেউ দখল প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত থাকলে তা প্রকাশ পাবেই। তখন তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //