২০ জেলায় যমুনার সার সরবরাহ বন্ধ

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দিতে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ ও একমাত্র দানাদার ইউরিয়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা সার কারখানায় (জেএফসিএল) ভেজা ও ছেঁড়া বস্তার পচা সার রিপ্যাকিং ডিলারদের নিতে বাধ্য করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় লোকসানের মুখে পড়ায় বুধবার থেকে সার উত্তোলন বন্ধ করেছে ডিলাররা। এতে চারদিন ধরে বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ উত্তরাঞ্চলের ২০ জেলায় সার সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে চলতি মওসুমে সারের মূল্য বাড়ার শঙ্কা দেখা গেছে।

যমুনা সার কারখানার বিক্রয় শাখা সূত্র জানায়, কারখানায় বর্তমানে নিজস্ব উৎপাদিত ইউরিয়া সার মজুদ রয়েছে ৫২ হাজার ২৬০ মে. টন। বাইরে থেকে আমদানি করা সারের মজুদ রয়েছে ৩৩ হাজার ৪৪৯ মে. টন। বিসিআইসির তালিকাভুক্ত ডিলারদের প্রতিমাসে কারখানার কমান্ড এরিয়ায় সরবরাহের জন্য ১২ মে. টন সার বরাদ্দ। এরমধ্যে যমুনা সার কারখানার উৎপাদিত সার ১০ মে. টন ও বাইরে থেকে আমদানিকৃত দুই মে. টন সার গ্রহণ বাধ্যতামূলক করে কর্তৃপক্ষ।


সংশ্লিষ্ট ডিলারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আমদানিকৃত সারগুলোর বস্তা ছেঁড়া-ফাটা ও জমাটবাঁধা। অপরদিকে কারখানার গুদামে ধারণক্ষমতা না থাকায় সারের বস্তাগুলো বাইরে স্তূপাকারে রেখে দেয়া হয়েছে। এতে চলমান বৃষ্টিতে সারগুলো পচে-গলে গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়। নিম্নমানের সার কৃষকরা গ্রহণ না করায় ডিলারদের প্রতিমাসে বিপুল অঙ্কের টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। ফলে বুধবার থেকে ডিলাররা পচা সার গ্রহণ বন্ধ করে দেয়ায় চারদিন ধরে সার সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।

মেসার্স আকলিমা এন্টারপ্রাইজের মালিক আলী আকবর ও মেসার্স এল কে এন্টারপ্রাইজের মালিক লুৎফর রহমানসহ কয়েকজন ডিলার অভিযোগ করেন, খোলা আকাশের নীচে ফেলে রাখা সার দীর্ঘদিন রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে গুণগতমান নষ্ট হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষ পুনরায় সেগুলো রিফাইং ও রিপ্যাকিং করে ডিলারদের নিতে বাধ্য করে আসছে। সারগুলো জমিতে প্রয়োগের সময় পাউডার হয়ে ওড়ে যায় ও ফসলের কোনো কাজেই আসে না। ফলে ওইসব নিম্নমানের সার কৃষক নিতে না চাওয়ায় ডিলারদের প্রতিমাসে বিপুল পরিমাণ টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। তাই এসব গ্রহণ বন্ধ করা হয়েছে।


অভিযোগ রয়েছে, কারখানার কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে জমাট বাঁধা সার ট্রাক্টর দিয়ে পিষে ও হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে সেগুলো রিপ্যাকিং করে ডিলারদের বরাদ্দকৃত সারের সাথে ঢুকিয়ে দেয়। তবে ‘নগদ সেলামি’র বিনিময়ে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিণ্ডিকেট কোনো কোনো ডিলারকে ভালো সার পাইয়ে দেয় বলে প্রচার রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গত আগস্ট মাসেও ডিলারদের সাথে কর্তৃপক্ষের বনিবনা না হওয়ায় তারা সপ্তাহ খানেক সার উত্তোলন বন্ধ রাখে। ২৩ আগস্ট এক সমঝোতা বৈঠকে কর্তৃপক্ষ ভালো সার সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিলে সরবরাহ শুরু হয়। কর্তৃপক্ষ শর্ত অমান্য করায় ডিলাররা ফের সরবরাহ বন্ধ করে। সরবরাহ বন্ধ থাকায় কারখানার কমাণ্ড এরিয়ায় চলতি মওসুমে সারের দাম বৃদ্ধির শঙ্কা রয়েছে।

এ ব্যাপারে যমুনা সার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সুজিদ মজুমদারের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।

কারখানার ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) ওয়ায়েছুর রহমান জানান, ডিলাররা চারদিন ধরে সার গ্রহণ বন্ধ রেখেছে। এর বাইরে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //