সাত কর্মদিবসেই ধর্ষণ মামলার রায়, আসামির যাবজ্জীবন

বাগেরহাটে মামলা দায়েরের পর সাত কর্মদিবসেই শিশু ধর্ষণ মামলায় আব্দুল মান্নান সরদার নামে এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। 

সেইসাথে তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো এক বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়।

আজ সোমবার (১৯ অক্টোবর) যুগান্তকারী এ রায় দেন বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. নূরে আলম।

গতকার রবিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত এই মামলার বাদী-বিবাদী পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শোনেন বিচারক। এরপর তিনি আজ রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। 

এর আগে ১১ অক্টোবর পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগপত্র জমা দিলে ১৩ অক্টোবর চার্জ গঠন করেন আদালত।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার মাকোড়ডোন গ্রামের আশ্রয় প্রকল্প এলাকায় পিতৃহীন সাত বছর বয়সী এক শিশু তার মামা বাড়িতে থেকে বড় হচ্ছিলো। ৩ অক্টোবর বিকালে ওই আশ্রয় প্রকল্পের পঞ্চাশোর্ধ প্রতিবেশী আব্দুল মান্নান সরদার তাকে তাকে নিজের ঘরে ডেকে ধর্ষণ করে। পরে এই ঘটনা জানাজানি হলে সেদিন রাতেই মেয়েটির মামা মোংলা থানায় আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন ও পুলিশ মান্নানকে গ্রেফতার করে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোংলা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিশ্বজিত মুখার্জ্জী ধর্ষণের সত্যতা পেয়ে আটদিনের মাথায় মান্নানের বিরুদ্ধে ১১ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

এই রায়কে ধর্ষকদের জন্য দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে নারী উন্নয়ন ফোরামের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী রিজিয়া পারভীন বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আন্তরিক থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে যে বিচার কাজ শেষ হতে পারে এটি তার উজ্জল দৃষ্টান্ত। এই রায় ধর্ষকদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হবে। স্বল্প সময়ে রায় হলে বাদী পক্ষ অনেক স্বস্তি পায়। নির্যাতিতাও তার বিভিসিকাময় স্মৃতি ক্ষত ভোলার আগেই বিচারের রায় শুনে মানসিক শান্তি অর্জন করতে পারেন। আমরা দাবি করবো অন্যান্য ধর্ষণ মামলার বিচারও যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এপিপি রনজিৎ কুমার মন্ডল বলেন, সকল সাক্ষ্য ও প্রমানের ভিত্তিতে যে রায় আদালত দিয়েছে তাতে আমরা খুব খুশি হয়েছি। এই রায় ভবিষ্যতের ধর্ষকদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এই রায়ে মামলার বাদী শিশুটির মামাও সন্তোষ প্র্রকাশ করেছেন। 

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত আব্দুল মান্নান সরদারের সাবেক স্ত্রী আমেনা বেগম বলেন, যে মামলায় আমার সাবেক স্বামীকে সাজা দেয়া হয়েছে, সে এই ধরণের কাজ করতে পারে না। সে ষড়যন্ত্রের শিকার। আমি ন্যায় বিচার দাবি করি। সে শারীরিকভাবে অক্ষম। তাই আমি তাকে বছর খানেক আগে ডিভোর্স দিয়েছি। স্থানীয় ইউপি সদস্য পূর্ব শত্রুতার জেরে এই মামলা দিয়েছেন।

এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী লিয়াকত হোসেন বলেন, এটা একটি ষড়যন্ত্রমূলক মামলা। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবো।

বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ড. একে আজাদ ফিরোজ টিপু বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আজকেক যে রায় হয়েছে সেটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ভবিষ্যতেও এ ধরণের তরিৎগতিতে মামলার রায় হলে বিচার প্রার্থিরা হয়রানির হাত থেকে মুক্তি পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //