লালমনিরহাটে বাড়ছে কিশোর অপরাধ

সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটে অপরাধী চক্র শিশু-কিশোরদের ব্যবহার করায় দিন দিন বাড়ছে কিশোর অপরাধ। চুরি, ছিনতাই, চোরাকারবারি, তথ্য প্রযুক্তিসহ ধর্ষণের মত মামলায় জড়িয়ে পড়ছে কিশোররা। গত ৩ মাসে ৪ মামলায় কোমলমতি পাঁচ কিশোরকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

জানা গেছে, পারিবারিক অশান্তি, শিক্ষার অভাব ও দারিদ্র্যসহ নানা কারণে কিশোররা অপরাধ জগতের দিকে পা বাড়াচ্ছে। কিশোর অপরাধের অধিকাংশই স্থানীয়ভাবে মিটে গেলেও আদালত পর্যন্ত যাচ্ছে অনেক ঘটনা। কতিপয় অপরাধী চক্র শিশু-কিশোরদের ব্যবহার করছে। ফলে নিজের অজান্তে অনেক শিশু-কিশোর জড়িয়ে পড়ছে চুরি, ছিনতাই, চোরাকারবারি, তথ্য প্রযুক্তি বা ধর্ষণের মত মামলায়।  

লালমনিরহাটের প্রায় ২২ কিলোমিটার সীমান্ত কাঁটাতারের বেড়াহীন হওয়ায় মাদক ছাড়াও বিভিন্ন পণ্য চোরাকারবারির সুযোগ অন্য জেলার তুলনায় অনেক বেশি। চোরাকারবারিতে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো নিরাপদ ভেবে অপরাধীরা কৌশলে শিশু-কিশোরদের ব্যবহার করছেন। মাদক ও অন্যান্য ভারতীয় পণ্য পাচারে অপরাধীরা শিশু ও কিশোরদের ব্যবহার করা হয়। অল্প কিছু টাকা দিলেই কিশোরদের দিয়ে পণ্য পাচার করা যায়। ফলে অপরাধীরা অনেক ক্ষেত্রে তাদেরই বেছে নিচ্ছেন। এ কারণে ধীরে ধীরে এসব কিশোর বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।  

শুধু চোরাকারবারিতে নয়। তিস্তা আর ধরলা নদী বেষ্টিত অনগ্রসর এ জেলায় দারিদ্র্যের কারণেও চুরি-ছিনতাইয়ের মত অপরাধে কিশোররা সম্পৃক্ত হচ্ছে। এসব কিশোরের একটা বড় অংশ মাদক সেবনসহ নানান ধরনের অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে।

প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কিশোরদের একটা বড় অংশ অলস সময়ে মাদকে আসক্ত হচ্ছে। মাদক ক্রয়ের টাকা সংগ্রহ করতে তারা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে। শিক্ষার অভাবে অনেক পরিবার শিশু-কিশোরদের সামাজিকীকরণে উদাসিন। ফলে জেলায় কিশোর অপরাধ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। কিশোর অপরাধ দমনে সচেতনতার বিকল্প নেই। তাই সামাজিকভাবে সচেতনতা বাড়াতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

লালমনিরহাট আদালত পুলিশ পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জেলায় গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর তিন মাসে কিশোর অপরাধে চারটি মামলায় পাঁচজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে হাতীবান্ধা থানায় দু’টি ধর্ষণ, সদরে তথ্য প্রযুক্ত আইনে একটি এবং আদিতমারী থানায় একটি চুরির মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দু’টি মামলায় তিন কিশোরের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র গঠন করা হয়েছে। আর একজন যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ও একজন পলাতক রয়েছে।  

লালমনিরহাট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম বলেন, কোনো মামলায় শিশু-কিশোর অভিযুক্ত হলে তদন্ত করে তাদের ব্যাপারে আলাদা অভিযোগ গঠন করে দেয়া আমাদের কাজ। কিশোর সংশোধনাগার ও সমাজ সেবা কিশোর অপরাধীদের সংশোধনে কাজ করছেন। আলাদা করে শিশু-কিশোরদের কোনো কাউন্সেলিং করা হয় না। তবে সভা, সমাবেশে সার্বিকভাবে সাধারণ মানুষকে অপরাধে না জড়ানোর আহ্বান জানানো হয়।

শিশু-কিশোররা যাতে সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠে, সেজন্য পরিবার ও সমাজের প্রতিটি মানুষকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে বলেও জানান তিনি। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //