অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে প্রশাসনের জব্দ বালু বিক্রির অভিযোগ

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলা প্রশাসনের জব্ধকৃত বালু বিনা অনুমতিতে একটি অসাধু চক্র অবাধে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সরেজমিন পরিদর্শনে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়।

জানা গেছে, গত ৮ এপ্রিল দুপুরে উপজেলার পাথর্শী ইউনিয়নের মোরাদাবাদ বাজার-সংলগ্ন তিনটি পয়েন্টে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ভ্রাম্যমাণ অভিযান চালিয়ে যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে উত্তোলনকৃত বালু জব্ধ করেন। 

সম্প্রতি এই বালু একটি চক্র বিক্রি করছে প্রকাশ্যে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর এ উপজেলা থেকে বিদায়ী ওএসডি ইউএনও মিজানুর মোটা অংকের ঘুষ-বাণিজ্য করে জব্ধ করা এই বালু বিক্রির অনুমতি দিয়ে যান বলে একটি সূত্র জানায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মোরাদাবাদ এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন ধরে যমুনা নদী থেকে বুলগেট মেশিনে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিলেন। এতে নদীভাঙনে বিলীন হচ্ছে শশারিয়াবাড়ি, হরিণধরা, গোয়ালডোবা, চহারচর, নামারচর, ফরিপাড়া, রাজনগর, করিরতাইর, ভাংবাড়ী ও রায়েরপাড়া নামক নয়টি ফসলি নতুন চর। নদীভাঙনে হুমকির মুখে পড়ে সরকারের ৪৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত যমুনার বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্প।

অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করেন স্থানীয়রা। বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ইউএনও মিজানুরকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক। অর্ধশতাধিক পয়েন্টে অবৈধ বালু উত্তোলন হলেও রহস্যজনক কারণে ‘ইসলামপুর উপজেলায় কোথাও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হচ্ছে না’ মর্মে জেলা প্রশাসক বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তিনি। ফলে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। বুলগেট মেশিন, মাহিন্দ্রা ট্রাক্টর, ভটভটি ও ট্রাকে প্রতিদিন হাজার হাজার সেপ্টি বালু অবাধে বিক্রি করছিল বালুখেকোরা।

মিজানুরের প্রতিবেদনে বিক্ষুব্ধ হয়ে মোরাদাবাদ ঘাট এলাকা থেকে গত ৬ এপ্রিল অবৈধ বালুভর্তি একটি ট্রাক আটক করেন এলাকাবাসী। পরে ওই দিন সন্ধ্যায় বালু ব্যবসায়ী চক্ররা পুলিশ পাঠিয়ে বালুর ট্রাকটি উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। এলাকাবাসীর ক্ষোভ নিরসনে ৮ এপ্রিল দুপুরে অবৈধভাবে উত্তোলনকৃত বালু নিলামে দিতে ওই এলাকায় যান মিজানুর, তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুরাইয়া আক্তার, থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ একদল পুলিশ।

করোনা পরিস্থিতিতে বালু নিলামে দিতে মাইকিং করে গণজমায়েত করায় আপত্তি তোলেন অবৈধ বালুর ট্রাক আকটকারী মো. নালুর মেয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের ছাত্রী রিতু আক্তার। এতে একপর্যায়ে হট্টগোলের সৃষ্টি হলে বালু নিলাম স্থগিত করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে জনরোষ থেকে রক্ষা পান তৎকালীন ইউএনও।

পরদিন ৯ এপ্রিল পাথর্শী ইউপি সদস্য জাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে মারধর, ভয়ভীতিসহ চুরির অভিযোগে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদকারী মৃত আব্দুল কাদের মণ্ডলের ছেলে মো. বাবুকে প্রধান আসামি করে তার চার ভাইসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে ইসলামপুর থানায় একটি মামলা করেন।

অন্যদিকে ১২ এপ্রিল পাথর্শী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. শহিদুল্লাহ বাদী হয়ে সরকারি কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগে অবৈধ বালুর ট্রাক আকটকারী মো. বাবুকে প্রধান আসামি করে তার চার ভাইসহ ২৩ জনের নামে ইসলামপুর থানায় একটি মামলা করেন।

স্থানীয় কৃষক আফজাল, রাজন, হাসমত, আলী ও সুলতান জানান, তারা বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো সমাধান পাননি। উল্টো বালু উত্তোলন বন্ধের অভিযোগ করায় বালু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সদস্যদের হাতে নিরীহ কৃষকরা লাঞ্ছিত হয়েছেন।

বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মাজহারুল ইসলাম জানান, আমি এ উপজেলায় সবেমাত্র যোগদান করেছি। প্রশাসন বালু জব্ধ করা হয়েছিল কি না, সেটা আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে ঘটনার সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //