বনের জমি দখলে নিয়ে ফার্ম ও মাদ্রাসা

গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় বন বিভাগের জমি জবরদখল করে তৈরি করা হচ্ছে বহুতল ভবনসহ নানা স্থাপনা। প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় এসব বনের জমি জবরদখল করা হচ্ছে। দখলদারদের মধ্যে শিল্পকারখানার বাদ পড়েনি। এসব দখলদারের কাছে স্থানীয় বন কর্মকর্তারা অনেকটা অসহায়।

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় বনের জমিতে একটি গরুর ফার্ম ও মাদ্রাসা গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ও ওলামা পরিষদের সভাপতি মুফতি এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে।

গত সোমবার (২ নভেম্বর) সকালে ওই মাদ্রাসায় সরেজমিনে জানা গেছে, দুই দিকে বনের জমি রয়েছে। মাঝখানে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ জমির ওপর খেলার মাঠ। এর পূর্ব পাশে তিনতলা পাকা বিল্ডিং, যেখানে ক্লাস ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানো হয়। উত্তর পাশে আধাপাকা টিনশেড। যেটির ৩ থেকে ৪ ফুট বনের জমির ওপর গড়ে উঠেছে। তবে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অস্বীকার করেছে। এই টিনশেডের পেছনে বনের জমিতে কয়েকটি রান্নাঘর আর পশ্চিম পাশে একটি গরুর ফার্ম গড়ে তোলা হয়েছে।

এ বিষয়ে মুফতি ইমদাদুল হকের ছোট ভাই মাওলানা আশরাফুল ইসলাম জানান, রান্নাঘর ও গরুর ফার্ম বনের জমিতে রয়েছে। তবে উত্তর পাশের ঘর বনের জমিতে কি না, তা বড় ভাই (মুফতি ইমদাদুল হক) জানতে পারেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বনের জমি দখল করে গরুর খামার, বসতবাড়ি নির্মাণ, দোকানপাট নির্মাণ, মাদ্রাসার ছাত্র দিয়ে গাড়ি ভাঙচুর, জোর করে অন্যের জমির ওপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ, ছাত্রলীগ নেতা ও শিক্ষককে হত্যার জন্য মারধর, দোকানদারদের মারধরসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে পড়েছেন এমদাদুল হক। তিনি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ডাইনকিনি এলাকার সিরাজুল ইসলাম ওরফে খোদা বক্সের ছেলে। তিনি কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকার দারুল উলুম মাহামুদনগর মাদ্রাসার প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করছেন। তার নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে তার অন্য দুই ভাই মাওলানা লিয়াকত ও মাওলানা আশরাফুল ইসলামকে এবং মাদ্রাসার ছাত্রদের ব্যবহার করে থাকেন।

ভুক্তভোগী অনেকে জানান, গত ২০ অক্টোবর সকালে কালিয়াকৈর পৌর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন ও তার চাচা জাতির পিতা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক মো. আখতার হোসেনের জমির ওপর দিয়ে জোর করে রাস্তা নির্মাণ করতে যান এমদাদুল হক। এ সময় তারা বাধা দিতে গেলে মাদ্রাসার ছাত্রদের দিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাদের ওপর হামলা করেন। হামলায় চাচা-ভাতিজা গুরুতর আহত হন। তাদের বাঁচাতে গিয়ে হামলার শিকার হন চন্দ্রার হাজী মোহাম্মদ আলী সুপার মার্কেটের বেশ কয়েকজন দোকানদার।


গত ১২ আগস্ট রাত ৯টার দিকে এমদাদুল হকের নেতৃত্বে তার ভাই ইয়াকুব, মোহাম্মদ আলী, আশরাফুল ইসলাম এবং লিয়াকত সংঘবদ্ধভাবে তাদেরই এক ছোট ভাই ইছহাকের স্ত্রী সুমিকে এলোপাতাড়িভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। পরে অজ্ঞান অবস্থায় অন্যত্র ফেলে রেখে চলে যান। এ ঘটনায় কালিয়াকৈর থানায় সুমি বাদী হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। শুধু তা-ই নয়, এ ঘটনায় সুমি বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ সিরাজগঞ্জ আদালতে তাদের নামে একটি মামলা করেন।

মাদ্রাসাকে পুঁজি করে প্রায় এক একর বনের জমিতে থাকা শত শত গজারিগাছ কেটে বনের জমি দখল করে বসতভিটা, গরুর খামার ও বেশ কয়েকটি দোকানপাট গড়ে তুলেছেন বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন।


এ ব্যাপারে মুফতি এমদাদুল হক বলেন, আমি বনের জমিতে কোনো স্থাপনা করিনি। তবে গরুর ফার্ম ও রান্নার জায়গাটি পড়তে পারে। এতে প্রতিপক্ষরা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা একটি দুঃখজনক বিষয়।

কালিয়াকৈর চন্দ্রা বিট কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বনের জমিতে অবৈধ স্থাপনা থাকলে তা উচ্ছেদ করা হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //