বিয়ের তথ্য গোপন করে পুলিশে যোগদান, প্রশিক্ষণ শেষে দ্বিতীয় বিয়ে

বিয়ের তথ্য গোপন করে উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে পুলিশে যোগদান করেছেন আনিছুর রহমান। প্রশিক্ষণ শেষে থানায় যোগদানের পরপরই দ্বিতীয় বিয়ে করেন তিনি। চাকরি এবং দ্বিতীয় বিয়েতে গোপন রাখেন প্রথম বিয়ের বিষয়টি।

আনিছুর রহমান গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শান্তিরাম ইউনিয়নের উত্তর শান্তিরাম এলাকার মৃত রিয়াজুল হকের ছেলে। বর্তমানে রাজশাহী জেলার তানোর থানায় কর্মরত তিনি। তার পরিচিতি নম্বর বিপি-৯১১৯২২৩৭০৯।

এ নিয়ে ২৫ অক্টোবর রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন আনিছুরের প্রথম স্ত্রী রেবেকা সুলতানা মনি। ভুক্তভোগী মনি গাইবান্ধা সদরের রুপারবাজারের উত্তর ঘাগোয়া কাটিহারা এলাকার মৃত মোহাম্মদ আলীর মেয়ে। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় দ্বিতীয় স্ত্রীকে ছেড়ে আসার শর্তে প্রথম স্ত্রীর কাছে ১৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন এসআই আনিছুর। তাতে রাজি না হয়ে ওই গৃহবধূ অভিযোগ দেয়ায় প্রাণনাশের হুমকি দেন। প্রথম স্ত্রীর কাছ থেকে ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে পড়াশোনা খরচ, পুলিশে চাকরি, ট্রেনিং, নতুন বাইক কেনাসহ পাঁচ লক্ষাধিক টাকা নিয়েছেন আনিছুর।

লিখিত অভিযোগে রেবেকা সুলতানা মনি জানান, তার ভাইয়ের বন্ধু ছিলেন আনিছুর। তাছাড়া তিনি যে কোচিং সেন্টারের ছাত্রী ছিলেন সেখানকার শিক্ষক ছিলেন আনিছুর। বিয়ের প্রস্তাব পেয়ে তিনি সম্মতি দেন। দুই পরিবারের সম্মতিতে ২০১৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ঘটা করে তাদের বিয়ে হয়। বিয়েতে ছয় লাখ ৫০ হাজার টাকা দেনমোহর ধার্য হয়। এতে ১১ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণের নাকফুল নগদ বাবদ বুঝিয়ে দিয়ে ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়। এরপর স্বামী-স্ত্রী হিসেবে তারা বসবাস করেন। ২০১৬ সালে তিনি গর্ভধারণ করেন। ওই সময় জোরপূর্বক তার গর্ভপাত ঘটান আনিছুর। এতে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। ওই সময় তাকে হাসপাতালেও নেয়া হয়। স্বামী সংসারের কথাভেবে সবকিছু তিনি মানিয়ে নেন। সবমিলিয়ে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সুখেই সংসার করেন মনি।

ওই গৃহবধূ আরো জানান, ২০১৮ সালে তার স্বামী আনিছুর পুলিশ বাহিনীতে শারীরিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ট্রেনিং শেষে ২০১৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তিনি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানায় এসআই পদে যোগদান করেন। এ সময় তিনি বিয়ের তথ্য গোপন রাখেন। মনির ভাষ্য, আনিছুর তাকে জানিয়েছিলেন পুলিশ বিভাগের অনুমতি নিয়ে তিনি আবার বিয়ে করবেন। ততদিন বিষয়টি গোপন রাখতে হবে। তিনি স্বামীর কথা রেখেছেন। কিন্তু নানা অজুহাতে ধীরে ধীরে যোগাযোগ কমাতে থাকেন স্বামী। বিয়ের পাঁচ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও ২০২১ সাল পর্যন্ত বিভাগের অনুমতির অপেক্ষায় থাকার কথাও জানান তিনি।

লিখিত অভিযোগে মনি উল্লেখ করেন, ২৯ অক্টোবর তাদের পঞ্চম বিবাহ বার্ষিকী ছিলো। আনিছুরের নির্দেশে সেদিন নিজ বাড়িতে তিনি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সেখানে তার পুলিশ স্বামীর উপস্থিত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ব্যস্ততার অজুহাতে আনিছুর পরদিন অনুষ্ঠান পেছাতে বলেন। পরদিন অনুষ্ঠান আয়োজন হলেও বদলির কথা জানিয়ে মোবাইল নম্বর করে দেন।

স্বামীর এমন কাণ্ডে বিব্রত হন মনি ও তার স্বজনরা। পরদিন স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ঘটনা অবহিত করেন মনি। ওই সময় তার বড় ভাইয়ের ফোনে কল করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তাকে ঘরে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন আনিছুর। কিন্তু সপ্তাহ না পেরুতেই এক পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের কথা জানতে পারেন মনি।

জানা গেছে, আনিছুর সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ থানার পাঙ্গাসি ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য কুলছুম খাতুনের মেয়ে বৃষ্টি খাতুনকে (২২) দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। প্রেমের ফাঁদে ফেলে মাস ছয়েক আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীকে বিয়ে করেন আনিছুর। বিষয়টি স্বীকার করেছেন বৃষ্টির মা কুলছুম খাতুন।

তিনি বলেন, মাস ছয়েক আগে তার পরিবার মেয়ের বিয়ে ঠিক করেন এক এসআইয়ের সঙ্গে। ওই সময় মেয়ে বিয়েতে আপত্তি জানায়। পরে এসআই আনছুরকে বিয়ের কথা জানায়। গোপনে তারা ছয় মাস আগে ঢাকায় ‘কোর্ট ম্যারেজ’ করেছে। পরে তিনি আনিছুরের পরিবারের বিষয়ে খোঁজখবর নেন। কিন্তু তার পরিবারও প্রথম বিয়ের কথা জানায়নি। কয়েকদিন হলো তিনি ও তার মেয়ে বিষয়টি জানতে পেরেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই আনিছুর রহমান বলেন, আগের বিয়ের অভিযোগ ভিত্তিহীন। আর এ নিয়ে আমি গণমাধ্যমে কথাও বলতে চাই না।

এদিকে, এসআই আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করেছেন রাজশাহীর সহকারী পুলিশ সুপার (তানোর-গোদাগাড়ী) আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দেব। অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন জেলা পুলিশের মুখপাত্র ইফতেখায়ের আলম। তিনি বলেন, অভিযোগের তদন্ত চলছে। প্রতিবেদন পেলে তার বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //