‘সিনিয়রদের পরামর্শে’ ভারতে পালিয়েছিলেন এসআই আকবর

সিলেট নগরের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমদ হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত বরখাস্ত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আকবরের দাবি, সিনিয়র অফিসারদের পরামর্শে তিনি ভারতে পালিয়েছিলেন।

সোমবার (৯ নভেম্বর) সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকার খাসিয়াদের কাছে আটকের পর এ কথা বলেন আকবর।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এসআই আকবরকে জিজ্ঞাসাবাদের সেই ভিডিওতে দেখা যায়, আকবর হোসেনকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। তাকে স্থানীয়রা জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এ সময় আকবর বলছিলেন তিনি রায়হান হত্যার সঙ্গে একা জড়িত নন, ‘আমি ইচ্ছা করে একা মারিনি। তাকে মারছিলো ৫-৬ জন। এজন্য মরে গেছে ভাই।’

স্থানীয় একজনের জিজ্ঞাসাবাদে আকবর বলেন, ‘সে (রায়হান) ছিনতাই করেছিলো। টাকা ছিনতাই।’

এসময় স্থানীয় অপর একজন বলেন, ‘আর তার জান তোমরা ছিনতাই করেছ?’

উত্তরে আকবর বলেন, ‘ভাই, আমরা জান নেইনি, বরং আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়েছি। পাবলিক মারছিলো, আমারা হাসপাতালে নিয়েছি। ওইখানে সে মারা গিয়েছিলো।’

তাহলে কেন পালাচ্ছিলেন এর উত্তরে এসআই আকবর বলেন, ‘আমি ভাইগা আসছি এ জন্য যে, আমাকে বলছে যে, সাসপেন্ড করা হয়েছে। অ্যারেস্ট করা হতে পারে। দুই মাস পর ঠান্ডা হলে এইটা আবার হ্যান্ডেল করা যাবে। আমি অন্য কোনো কারণে ভাগি নাই।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাকে এক সিনিয়র অফিসার বলেছিলো, তুমি আপাতত চলে যাও, কয়দিন পরে আইসো। এটা ঠান্ডা হয়ে যাবে।’

ওই ভিডিওতে খাসিয়ারা জানায়, রায়হানকে হত্যার ঘটনা ইন্টারনেটের মাধ্যমে জেনেছিল তারা। গত রবিবার রাতে মেঘালয়ের শিলচর এলাকায় এসআই আকবরকে দেখে চিনতে পেরে তাকে আটক করেন স্থানীয় এক খাসিয়া যুবক।

এর আগে সিলেট জেলা পুলিশের সহকারী মিডিয়া কর্মকর্তা ও ডিবির পরিদর্শক সাইফুল আলম তাকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, এসআই আকবরকে সিলেটে আনা হচ্ছে। বিকেল ৫টায় জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

১১ অক্টোবর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে রায়হানের মৃত্যু হয়।

রায়হান সিলেট নগরের আখালিয়ার নেহারিপাড়ার বিডিআরের হাবিলদার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি নগরের রিকাবিবাজার স্টেডিয়াম মার্কেটে এক চিকিৎসকের চেম্বারে চাকরি করতেন।

এ ঘটনায় ১২ অক্টোবর রাতে অজ্ঞাতদের আসামি করে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু আইনে নগরীর কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার।

রায়হানের মরদেহে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন উঠে এসেছে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে। এসব আঘাতের ৯৭টি ফোলা আঘাত ও ১৪টি ছিল গুরুতর জখমের চিহ্ন। এসব আঘাত লাঠি দিয়ে করা হয়েছে। অসংখ্য আঘাতের ফলে হাইপোভলিউমিক শক ও নিউরোজেনিক শকে মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো কর্মক্ষমতা হারানোর কারণে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //