উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইউএনওকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিনকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস লাঞ্ছিত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পরিষদ চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। বিচার চেয়ে ওইদিন রাতেই জেলা প্রশাসক বরাবর উপজেলার ১৮ জন কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত লিখিত একটি অভিযোগ করা হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিধিবিধান ও নীতিমালা লঙ্ঘন করে উপজেলার বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাদের কাজের জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছেন। এর ব্যতয় ঘটলে সেই দফতরের কর্মকর্তাকে অশালীন ভাষায় গালমন্দসহ প্রাণনাশের হুমকিও দেন চেয়ারম্যান। উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, ভিজিডি, মাতৃত্ব ভাতা, কৃষি প্রণোদনা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির সুবিধাভোগীর তালিকায় নিজের অংশ দাবি করেন চেয়ারম্যান। বিধি বহির্ভূতভাবে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ না দেয়ায় এবং প্রাক্কালন কাজ শেষ না হতেই বিল পরিশোধ না করায় সাম্প্রতিক সময় উপজেলা প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলীকে রুমে বেঁধে পেটানোর হুমকি দেন চেয়ারম্যান। শুধু তাই নয়, তার কথা অনুযায়ী কাজ না করায় একজন নারী কর্মকর্তাকে বহিরাগতদের দিয়ে মানহানির ঘটনা ঘটানোর হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। সব দফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনা তুলে ধরা হয় অভিযোগে।

অভিযোগে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার মাসিক সমন্বয় সভায় ভিজিডি ও মাতৃত্ব ভাতার তালিকায় নিজের অংশ দাবি করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। যা বিধি সম্মত না হওয়ায় ইউএনও নাকচ করে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সভা অসমাপ্ত রেখে চলে যান চেয়ারম্যান। এরপর চেয়ারম্যান ইউএনও অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরা লোক দিয়ে খুলতে গেলে তার ছবি তোলেন ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন। একইসঙ্গে ক্যামেরা খুলে ফেলার কারণ জানতে চাইলে ইউএনওকে অশালীন ভাষায় গালমন্দ করা হয় ‘(বেশি কথা বললে পিটিয়ে নরসিংদী পাঠিয়ে দেবো। উপজেলা পরিষদ কি তোর বাবার সম্পত্তি, উপজেলা পরিষদ কি তুই চালাবি?)’। এভাবে গালমন্দ করা হয় বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।  

চরম উত্তেজিত হয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোবাইলে কল করে তার দলের লোকদের ডাকলে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। ঘটনার পর থেকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই ইউএনওসহ উপজেলার সব দফতরের কর্মকর্তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন।  

পরে রাতে ইউএনওসহ উপজেলার ১৮ জন কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক বরাবরে এ সংক্রান্ত গণস্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ  দায়ের করেন। যার স্মারক নং - ০৫.৪৭.৫২০২.০০০.০২.০৮৩.২০- ৭৬৪।  

এর অনুলিপি স্থানীয় সংসদ সদস্য সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও রংপুর বিভাগীয় কমিশনারকে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগে উপজেলা পরিষদ আইনের লঙ্ঘন করায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়।  

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, আমরা সব দফতরের কর্মকর্তারা লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।  

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জনস্বার্থে গত অর্থবছরের সব দফতরের কাজের অগ্রগতি জানতে চাওয়ায় অফিসাররা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ইউএনও নিজেই বিধি বহির্ভূতভাবে ঠিকাদারের নামে নিয়ে এডিপি ও আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর কাজ করছেন। স্থানীয় ভাটা মালিকদের চাপ দিয়ে ইট নিয়ে এসে উপজেলা পরিষদে রেখেছেন। তদারকি কর্মকর্তা হয়ে নিজে কাজ করার বিষয়টির প্রতিবাদ করায় ইউএনও আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। এসব বিষয়ের সুষ্ঠু তদন্ত করার জোর দাবি জানান তিনি।  

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পেয়েছি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিবকে (ডিডিএলজি) তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //