আদিতমারী উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইউএনওর জিডি

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন।

এর আগে উপজেলা চেয়ারম্যান ইউএনওকে গালমন্দ ও হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।

রবিবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আদিতমারী থানায় ইউএনও ওই জিডি করেন। এ ঘটনার পর থেকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

জানা যায়, এ ঘটনায় ১২ নভেম্বর রাতেই ১৭ জন কর্মকর্তাসহ ইউএনও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগও জমা দেন। রবিবার অভিযোগটি তদন্ত শুরু করে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (ডিডিএলজি) রফিকুল ইসলাম দিনভর উপজেলা পরিষদ হলরুমে বিভিন্নজনের সাথে কথা বলেন। তবে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নে কোনো মন্তব্য করেননি।

এছাড়া চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অন্য একটি জিডি করেন তার অফিসের স্ট্যানোটাইপিস্ট হাবিবুর রহমান। রবিবার সকালে উপজেলা চেয়ারম্যান নিজ অফিসে এসে উপজেলা পরিষদের রাজস্ব তহবিলের যৌথ স্বাক্ষরিত সোনালী ব্যাংক আদিতমারী শাখা হিসাবের ১৯টি চেক পাতা ছিঁড়ে ফেলেন। এ ঘটনায় হাবিবুর আদিতমারী থানায় জিডি করেন।

ইউএনওর করা জিডি সূত্রে জানা গেছে, ফারুক ইমরুল কায়েস আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সরকারি বিধিবিধান ও নীতিমালা লঙ্ঘন করে কাজের জন্য চাপ দিয়ে আসছেন। এর প্রতিবাদ করলে দফতরের কর্মকর্তাকে গালমন্দসহ প্রাণনাশের হুমকি দেন তিনি। উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, ভিজিডি, মাতৃকালীন ভাতা, কৃষি প্রণোদনা ও সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর সুবিধাভোগীর তালিকায় নিজের অংশ দাবি করেন চেয়ারম্যান।

এছাড়া জিডিতে আরো বলা হয়, বিধিবহির্ভূতভাবে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ না দেয়া এবং প্রাক্কলনকাজ সমাপ্ত না হতেই বিল পরিশোধ না করায় সম্প্রতি উপজেলা প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলীকে রুমে বেঁধে পেটানোরও হুমকি দেন চেয়ারম্যান। তার কথামতো এক নারী কর্মকর্তা কাজ না করায় তাকে বহিরাগতদের দিয়ে মানহানি করানো হুমকি দিয়েছেন বলেও জিডিতে উল্লেখ করা হয়।

জিডিতে আরো বলা হয়, গত ১২ নভেম্বর মাসিক সমন্বয় সভায় ভিজিডি ও মাতৃত্বকালীন ভাতার তালিকায় নিজের অংশ দাবি করেন উপজেলা চেয়ারম্যান, যা বিধিসম্মত না হওয়ায় ইউএনও নাকোচ করে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সভা অসমাপ্ত রেখে চলে যান চেয়ারম্যান। এরপর চেয়ারম্যান ইউএনও অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরা লোক মারফত খুলতে গেলে এর ছবি ধারণ করে রাখেন ইউএনও। তখন ইউএনও ক্যামেরা খুলে ফেলার কারণ জানতে চেয়ারম্যান তাকে গালমন্দ করেন। এ সময় চেয়ারম্যান ইউএনওকে বলেন, ‘বেশি কথা বললে পিটিয়ে নরসিংদী পাঠিয়ে দেব। উপজেলা পরিষদ কি তোর বাবার সম্পত্তি? উপজেলা পরিষদ কি তুই চালাবি?’ তারপর হত্যার হুমকি দেয়া হয় বলে অভিযোগে বলা হয়।

এ ব্যাপারে ইউএনও জানান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিভিন্ন সময় আমাকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছেন। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছেন। তাই আমি নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেছি। এছাড়া আমার ও চেয়ারম্যানের যৌথ স্বাক্ষরিত ১৯টি চেক পাতা তিনি ছিঁড়ে ফেলেছেন। সেটা নিয়েও জিডি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে গত শনিবার (১৪ নভেম্বর) উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে জানান, কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তারা দলবদ্ধ হয়ে মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন তার বিরুদ্ধে।

আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম জানান, ইউএনও নিরাপত্তা চেয়ে একটি করেছেন। আর চেক পাতা ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় আরেকটি জিডি করা হয়েছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়া উপজেলা পরিষদের অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //