ভাষা সৈনিক জাহিদ হোসেন মুসা মিয়া স্মরণে দোয়া মাহফিল

ভাষা সৈনিক ও ঝিনাইদহের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব মরহুম জাহিদ হোসেন মুসা মিয়ার মাগফেরাত কামনায় এক্স-কাঞ্চননগরিয়ান এসোসিয়েশনের উদ্যোগে শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে কাঞ্চন নগর স্কুল মিলনায়তনে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

এক্স-কাঞ্চননগরিয়ান এসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীনূর আলম লিটনের সভাপতিত্বে  দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আজিজুর রহমান।

আরো বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক বি সি বিশ্বাস, জাহেদী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সদস্য কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদী হিজল ও কাঞ্চন নগর স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রদীপ কুমার বিশ্বাস।

উল্লেখ্য, ঝিনাইদহের কৃতি রাজনীতিবিদ, সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী ও ভাষা সৈনিক মো. জাহিদ হোসেন মুসা মিয়া ১৭ নভেম্বর ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৯ বছর।

গত ১৩ অক্টোবর বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতার কারণে ভাষা সৈনিক জাহিদ হোসেন মুসাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ছয় পুত্র, এক কন্যা এবং নাতি-নাতনি রেখে গেছেন। তার জ্যেষ্ঠপুত্র মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী রেডিয়েন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান। জাহিদ হোসেন মুসা রেডিয়েন্ট গ্রুপ অব কোম্পানিজ ও সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকালের সম্মানিত উপদেষ্টা ছিলেন।

ভাষা সৈনিক মো. জাহিদ হোসেন মুসা ১৯৩২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নানার বাড়ি যশোর জেলার ঝিনাইদহ (বর্তমানে জেলা) মহকুমার কালীগঞ্জের পাইকপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তৎকালীন বৃটিশ ভারতে জন্ম নেয়া এই মানুষটি বেড়ে উঠেছেন পাকিস্তানে, তারপরে দেখেছেন মুক্তিযুদ্ধ। মওলানা ভাসানীর এই রাজনৈতিক সহচর একটা দীর্ঘ সময় ঢাকা ও কলকাতায় কাটিয়েছেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পূর্ব থেকে ঝিনাইদহের নারিকেলবাড়িয়ায় তার পৈতৃক বাড়িতে অসংখ্য গুণী রাজনীতিকের আগমন ঘটেছে। বিশেষত মওলানা ভাসানী ঝিনাইদহে গিয়ে তার বাড়িতেই থাকতেন। সে সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গেও ছিলো তার সুসম্পর্ক। প্রবীণ এই রাজনীতিক মওলানা ভাসানীর নির্দেশে ১৯৭৩ সালে ঝিনাইদহ মহকুমার ন্যাপ সভাপতির দায়িত্বে থাকার সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। রাজনৈতিক জীবনে ১৯৫৫-৫৭ পর্যন্ত ঝিনাইদহ মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাথে যুক্ত হন। জাহিদ হোসেন মুসা অসংখ্য গান ও কবিতা রচনা করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের নাম ‘অনেক দেরিতে’।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে ভাষা সৈনিক জাহিদ হোসেন মুসার সভাপতিত্বে গড়ে তোলা হয় জাহেদী ফাউন্ডেশন নামে এক সমাজসেবামূলক সংস্থা। বাংলাদেশে নারী শিশু ও দুঃস্থদের জন্য খাদ্য কর্মসূচি, শিক্ষাখাতে বৃত্তি মূলক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, স্বাস্থ্যখাতে প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা ও ক্রীড়া উন্নয়নে এই সংস্থাটি সমাজে ভূমিকা পালন করে আসছে। তার পৃষ্ঠপোষকতায় যশোর কালেক্টরেট স্কুলে গড়ে উঠে ‘জাহানারা হুদা একাডেমিক ভবন’। এছাড়াও নিজ গ্রাম নারিকেলবাড়িয়ায় আমেনা খাতুন কলেজে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘মুসা মিয়া একাডেমিক ভবন’। ঝিনাইদহ শহরে তার নামে গড়ে তোলা হয় বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের স্কুল ‘মুসা মিয়া বুদ্ধি বিকাশ বিদ্যালয়’। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত করা হয় ‘মুসা মিয়া ডায়াবেটিক সেন্টার’।

দেশ স্বাধীনের আগ থেকেই তিনি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মে জড়িয়ে পড়েন। ঝিনাইদহ ও যশোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তার এবং তার পরিবারের শিক্ষাবিস্তারে রয়েছে অসামান্য অবদান। মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যসেবায় জাহেদী ফাউন্ডেশনের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

বণার্ঢ্য জীবনে নানা সামাজিক অবদান ও ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন স্বরূপ তার নামে ঝিনাইদহ পৌরসভার একটি সড়কের নামকরণ করা হয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //