করোনাকালীন ৪ শতাংশ ঋণের সুবিধা পায়নি মৎস্য চাষিরা

করোনাকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিদের মাত্র ৪ শতাংশ সুদে ব্যাংক থেকে ঋণ বিতরণ শুরু হলেও বাগেরহাটের প্রান্তিক চাষিরা সেই সুবিধার আওতায় আসেনি। পর্যাপ্ত প্রচার না হওয়ায় অনেক চাষিরা ঋণের খবর জানেন না।

মৎস্য চাষি নেতারা বলছেন যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা বাগেরহাটে থাকা চিংড়ি চাষিদের জন্য অপ্রতুল। ঋণ বিতরণ কমিটির সদস্য সচিবের দাবি বরাদ্দের অর্ধেকের বেশি মৎস্য খাতে বিতরণ করা হয়েছে। মৎস্য বিভাগ বলছে, সমন্বয়ের অভাবে সুবিধা পাচ্ছেন না চাষিরা।

দেশের সব থেকে বেশি চিংড়িসহ সাদা মাছ উৎপাদন হয় বাগেরহাটে। বিভিন্ন সময়ে ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস, অতি বর্ষণ ও বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মৎস্য সেক্টর। করোনাকালীন সময়ে প্রণোদনার অংশ হিসেবে কৃষি খাতে সরকারের ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণায় মৎস্য চাষিদের মনে আসার সঞ্চার হয়। তবে বাগেরহাটে বরাদ্দ আসা মাত্র ৪ শতাংশ সুদে ঋণ গ্রহণের সুবিধা জেলার অধিকাংশ প্রান্তিক চাষি পাননি। প্রভাবশালী এবং ধনী চাষিরাই এই সুবিধা পেয়েছে বলে অভিযোগ করেন প্রান্তিক মৎস্য চাষিরা।

বাগেরহাটে ১৩টি ব্যাংকের অনুকূলে চার শতাংশ সুদে কৃষি ঋণ প্রদানের জন্য ৮২ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৫২২ জন চাষিকে ৫৪ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। টাকা বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও ঋণ না পাওয়ায় ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে প্রান্তিক চাষিদের মাঝে।

ফকিরহাট উপজেলার চিংড়ি চাষি হরিপদ দাস বলেন, জানিনা সরকার কিভাবে কি টাকা দিয়েছে। শুনেছি চার শতাংশ সুদে টাকা দিয়েছে। কিন্তু আমরা তো তা পাইনি। বরং আমাদের এনজিও এবং সুদে কারবারিদের কাছ থেকে চরা সুদে টাকা এনে চাষাবাদ করতে হচ্ছে।

চাষি গোপাল বৈরাগী বলেন, আসলে সরকারি এই সুবিধা সব প্রভাবশালীরাই পেয়েছেন। আমাদের মত সাধারণে চাষিরা কোন সুবিধা পায়নি। শুধু হরিপদ ও গোপাল নয় অন্যান্য প্রান্তিক চাষিদেরও একই বক্তব্য।

চার শতাংশ সুদে দেয়া এই ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি করার দাবি জানিয়েছেন ফকির বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি মোহিতুল ইসলাম সুমন।

তিনি বলেন, করোনা কালে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের চার শতাংশ সুদে যে ঋণ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আমরা তাকে সাধুবাদ জানাই। কেউ কেউ এই ঋণ পেয়েছে। তবে প্রান্তিক চাষিরা যাতে পায় এ জন্য তদারকি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বাগেরহাট জেলায় যেহেতু চিংড়ি চাষির পরিমাণ অনেক বেশি সে কারণে বরাদ্দের পরিমাণ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে সকল প্রান্তিক চাষিদের ঋণ দেবার দাবি করেছেন ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিটলার গোলদার।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. খালেদ কনক বলেন, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যদি মৎস্য বিভাগের সাথে সমন্বয় করে ঋণ বিতরণ করলে প্রান্তিক চাষিদের কাছে এই প্রণোদনা সঠিকভাবে পৌঁছে যাবে। এর ফলে চাষিরা উপকৃত হবে।

অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড বাগেরহাটের সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও বাগেরহাট জেলা কৃষি ঋণ কমিটির সদস্য সচিব  দেপাল চন্দ্র রায় বলেন, বাগেরহাট জেলায় কৃষি ঋণের বরাদ্দের ৬৬ ভাগ মৎস্য খাতে বিতরণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট টাকা এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বিতরণ করা হবে বলে দাবি করেন তিনি। বাগেরহাট জেলার ৯টি উপজেলায় ১ লাখ ১ হাজার ২৪৪ জন চিংড়ি ও সাদা মাছ চাষি রয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //