ব্রি-ধান ৮৭ ফলনে চমক: উৎফুল্ল কৃষকরা

মাঠে মাঠে চলছে হৈ চৈ আর কৃষকদের উৎফুল্লতা। গ্রামের বাড়ি বাড়িতে কৃষাণীদের ব্যস্ততারও কমতি নেই। ক্ষেতে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন জাতের ধানের। এগুলোর আকৃতি ও আয়ুষ্কালের যেমন পার্থক্য রয়েছে। তেমনি রয়েছে ফলনেরও তারতম্য। অনেক ধান কৃষকেরা ইতোমধ্যে ঘরেও তুলেছেন। এখন হিসেব কষছেন কোন ধানের কেমন ফলন। এলাকার  কোন কৃষকের ক্ষেতে হয়েছে সর্বোচ্চ ফলন। এরমধ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনষ্টিটিউটের উদ্ভাবিত ব্রি-ধান ৮৭ ফলনে চমক সৃষ্টি করেছে। যা তাদের ঘরে উঠতে শুরু করেছে। এ জাতের ধান চাষে কম খরচে মাত্র ১’শ ৩৭ দিনে সংগ্রহ করা যায়। কৃষকদের ভাষ্য, ব্রি-ধান ৮৭’তে অভাবনীয় ফলন। কাজেই আগামীতে এ জাতের ধানেই তাদের আস্থা। চলতি মৌসুমে প্রায় সকল জাতের ধানেই ফলন হয়েছে। কোন জাতই ব্রি-ধান ৮৭’র ধারে কাছে নেই। দেশের নতুন এ জাতের ধানের ভালো ফলন পেয়ে কৃষকদের মনে দিচ্ছে খুশির দোলা।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৫’শ ৭০ হেক্টর। কিন্তু চাষ হয়েছে ১৮ হাজার ৪’শ হেক্টর। এরমধ্যে নতুন ধান হিসেবে  বাংলাদেশ ধান গভেষনা ইনষ্টিটিউটের উদ্ভাবিত ব্রিধান ৮৭’র এ বছর চাষ হয়েছে মাত্র ২৫ হেক্টর।  যে জাতের ধানের বীজ ২০১৮ সালে উদ্ভাবিত। যা সরকারি প্রণোদনা হিসেবে কৃষকদেরকে বিনামূল্যে দেয়া হয়েছিল।

কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ব্রি-উদ্ভাবিত ৯২ টি জাতের মধ্যে ৬ টি হাইব্রিড। বাকি ৮৬ টি ইনব্রিড। আমন মৌসুমের জন্য ব্রি-ধান ৮৭ ইনব্রিড জাতের। ২০০৮ সালে উদ্ভাবিত ব্রি-ধান ৪৯ এর চেয়ে কমপক্ষে ৭ দিন কৃষক সংগ্রহ করতে পারে। হেক্টর  প্রতি ফলন সাড়ে ৬ টনেরও বেশি। অর্থাৎ অন্য জাতের ধানের চেয়ে ৮৭’র  ফলন হেক্টর প্রতি এক টনেরও বেশি। এ জাতের ধানের দানা লম্বা ও চিকন। ভাত সর্বাপেক্ষা ঝুরঝুরে হয়।

সরেজমিনে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের ঈশ্বরবা গ্রামের কৃষক জায়নাল আবেদিনের ক্ষেতে গেলে দেখা যায়, ব্রি-ধান ৮৭ চাষ করা হয়েছে। ক্ষেতের ধানগুলো পেকে গেছে। কিন্তু কান্ড ও পাতাগুলো সুবুজ দেখা যাচ্ছে। তবে পাকা ধানের শীষ গুলো ধানের ভারে নুইয়ে পড়ছে।

কৃষক জয়নাল জানান, মাঠে এ বছর তার ৭ বিঘা  জমিতে আমন ধানের চাষ করেছিলেন। এরমধ্যে কিছু ধান ইতোমধ্যে ঘরে তুলেছেন। প্রায় এক বিঘা জমিতে নতুন জাতের ব্রি-ধান -৮৭ দুই একদিনের মধ্যে কাটবেন। তিনি বলেন, অন্যক্ষেতে যেমন ধান হয়েছে তার চেয়ে অনেক ভালো দেখা যাচ্ছে এ ক্ষেতের ধান।  এছাড়াও রোগ বালাইয়ের লেশমাত্র নেই। সারসহ অন্যান্য ব্যয়ও কম হয়েছে। ধানের গাছগুলো হয়েছে অনেক লম্বা। ফলে বর্তমান চড়া দামে গো-খাদ্য খড়ও বিক্রি করতে পারবেন। সবমিলিয়ে তার ক্ষেতের ধান দেখে গ্রামের অন্য কৃষকেরাও উৎসাহিত হচ্ছেন। এক কথায় আগামী মৌসুমে তার সবটুকু জমিতেই এ জাতের ধানের চাষ করবেন। আর বীজের জন্য অন্য কৃষকেরা তার কাছে বলে রেখেছেন। তিনি আরো বলেন, নিঃসন্দেহে এ জাতের ধান অধিক ফলনশীল ও কৃষকবান্ধব।

কালীগঞ্জ উপসহকারী কৃষিকর্মকর্তা মতিয়ার রহমান জানান, নতুন জাতের ধান হিসেবে তিনি কৃষক জয়নাল আবেদীনকে সব সময় পরামর্শ দিয়েছেন। মাঠ পর্যায়ের এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এ ধানের  ক্ষেতে যারা গেছেন তারা দেখেছেন  কি পরিমান ফলন হয়েছে। কৃষকেরা আগামীতে এ ধানের ওপর খুবই আগ্রহী।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা হুমায়ন কবির জানান, এ উপজেলার ঈশ্বরবা গ্রামের কৃষক জয়নাল আবেদিন সহ বেশ কিছু কৃষক এ বছর নতুন জাতের ব্রি-ধান ৮৭’র চাষ করে ব্যাপক ফলন পেয়েছেন। মাত্র একা নয় এ উপজেলাতে মোট ১’শ ৭৫ হেক্টোর জমিতে ব্রিধান ৭৫’র চাষ করা হয়েছে। এ ধানে উৎপাদন ব্যয় অনেক কম। অপেক্ষাকৃত কম দিনে সংগ্রহ করা যায়। ফলনও বেশি। তাই কৃষকদের দৃষ্টি এখন ব্রিধান ৮৭’র দিকে। কৃষি অফিসের মাঠকর্মিসহ কৃষকেরা সরাসরি এসেই এ ধানের ভালো ফলনের গল্প শোনাচ্ছেন। তিনি নিজেও কয়েকটি ক্ষেতে ধান দেখে প্রমান পেয়েছেন।

বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনষ্টিটিউটের মহা-পরিচালক মোঃ শাহাজান কবির জানান, সম্প্রতি দেশে যে পরিমান উচ্চ মানের ফলনের ধান চাষ হচ্ছে সেখানে ব্রি-ধান ৮৭ শীর্ষস্থান দখল করেছে। এ ধানের শুধু ফলনই ভালো তা নয়, মুল্যবান খড় ( বিছালী) লম্বা হয় । যে কারনে কৃষকেরা গোখাদ্যের চাহিদা মেটাতে পারেন। তিনি আরও বলেন, এজাতের ধান উদ্ভাবন করে বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনষ্টিটিউটের উদ্ভাবিত ব্রি-ধান ৮৭ মাত্র ২ বছর আগে মাঠ পর্যায়ে ছাড়া হয়েছে।

এ ধানের ফলন অনেক ভালো এমন ফলাফল সারাদেশ ব্যাপি কৃষক পর্যায়ের। দেশের উচ্চ পর্যায়ের এই ধান গবেষক আরও জানান, ব্রিধান-৮৭’র মুল বৈশিষ্ঠ হলো কান্ড অনেক মোটা ও শক্ত হওয়ায় বৃষ্টি বা বাতাসে জমিতে ঢলে পড়ে নষ্ট হয় না। পেকে গেলেও ডিগপাতা খাড়া ও সবুজ থাকায় সালোক সংশ্লেষন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। ফলে শিষের গোড়ার ধানের দানাটিও পুষ্ট হয়। এ ধানের অ্যামাইলোজ ২৭ %। কৃষক পর্যায়ে ব্যাপক ফলনের সাড়ার জন্য আগামী আমন মৌসুমে কৃষকদের বীজ প্রাপ্তির বিষয়টিও সরকারীভাবে ভাবা হচ্ছে। বর্তমান মাঠ পর্যায়ে যত জাতের ধান আছে ফলনের দিক দিয়ে ব্রিধান ৮৭’র অবস্থান শীর্ষৈ এতে কোন সন্দেহ নেই বলে যোগ করেন এই কৃষিবিদ।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //